ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩১ মিনিট আগে
শিরোনাম

২৮ বেডে থাকছে দেড়শ রোগী!

  কাঞ্চন কুমার

প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০১৭, ১৬:৩৮

২৮ বেডে থাকছে দেড়শ রোগী!

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড। তিল পরিমান জায়গা নেই। সেখানে শিশু রোগীর সংখ্যা অগনিত। চিকিৎসকদের হিসেব মতে গত দু’দিনে শুধুমাত্র ঠাণ্ডাজনিত কারণে কয়েকশ’ শিশু বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে। তাদের মধ্যে জ্বর, কাশি, ভাইরাস জনিত কারণেই এইসব রোগী হাসপাতালে এসেছে। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের মাত্র ২৮টি বেডের বিপরিতে গত দু’দিনেই ভর্তি হয়েছে প্রায় দেড়শ’ শিশু।

শুক্রবার সকালে হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা যায় বহির্বিভাগে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ডাক্তারের সাক্ষাৎ পেতে স্বজনদের অপেক্ষা। ওয়ার্ডে দেখা গেল আরো ভিন্ন চিত্র। রোগী ও স্বজনদের ভীড়ে শিশু ওয়ার্ড যেন মাছের বাজারে পরিণত হয়েছে। ওয়ার্ডের ফ্লোরে ১ বছর ৮ মাসের মেহজাবিনকে নিয়ে সকালে এসেছেন মা রাশেদা বেগম। হঠাৎ করে কাশি আর ঠাণ্ডা জ্বরে কাপুনী শুরু হয় মেহজাবিনের।

স্থানীয় ডাক্তারের কাছে গেলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দেন। তাই বিলম্ব না করে হাসপাতালে এলে জরুরী বিভাগে চিকিৎসক দেখে ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

সেখানে যদুবয়রা গ্রামের জামিরুলের ১১ মাসের ছেলে জিনাত, জগতি মণ্ডল পাড়ার মেহেদির ছেলে মহিদসহ প্রায় সকলেই এই ধরণের ঠান্ডায় আক্রান্ত হয়েছে বলে স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেল। পাশে একই বেডে ৩ জন শিশুকে রাখা হয়েছে। পাশেই বসা রোগীর এক স্বজন জানায়, মেঝেতে শিশুদের রাখলে চিৎকার করে কান্না করছে। তাই এক বেডেই ৩ শিশুকে ঘুমিয়ে রাখা হয়েছে।

মাত্র ২৮ টি বেডের স্থলে প্রায় দেড় শতাধিক রোগী চিকিৎসাধীন থাকায় তাদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে বলে জানান সেবা প্রদানকারী নার্স।

কর্তব্যরত এক চিকিৎসক জানান, এই সময়ে শিশুদের আক্রান্ত হতে হয় নানা রোগ-ব্যধিতে। তার মধ্যে যে রোগটি সকলকে খুব সহজে আক্রান্ত করে তা হচ্ছে ঠাণ্ডা কাশি ও ভাইরাস জ্বর। তিনি বলেন, মানবদেহে ভাইরাস আক্রমণের কয়েক দিনের মধ্যে জ্বর দেখা দেয়। ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত রোগীর শরীরে শীত-শীত ভাব, কাঁপুনি, মাথাব্যথা, হাত-পায়ের গিরায় ব্যথা, খাবারে অরুচি, নাক দিয়ে অঝোরে পানি পড়া, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, ঠান্ডা, সর্দি দেখা দেয়।

অনেকের ক্ষেত্রে বমি ও ডায়রিয়া হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে পেটব্যথাও হতে পারে। ঠান্ডা লাগলে বা বৃষ্টিতে ভিজলেও ভাইরাসের সংক্রমন হতে পারে। শিশুদের অভিভাবকদের এ বিষয়ে একটু সতর্ক থাকতে হবে। তবে এ সময়ে শিশুরাই বেশী আক্রান্ত হয় এবং হচ্ছে। শিশুদের ক্ষেত্রে জ্বরের তীব্রতা বেশি হলেও বড়দের ক্ষেত্রে জ্বর তীব্রভাবে নাও হতে পারে। ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হলে খুব বেশি দুশ্চিন্তার কারণ নেই। এই জ্বরে অ্যান্টিবায়োটিক খাবার প্রয়োজন নেই, প্যারাসিটামল খেলেই হয়। তবে জ্বর চার-পাঁচ দিনের বেশি সময় ধরে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

এ ছাড়া এই সময়ে কারো ভাইরাস জ্বর হলে প্রচুর পানি পান করতে হবে এবং খাবার স্যালাইন খেলে শরীরের জন্য আরো ভাল। ভিটামিন ‘সি’ যুক্ত ফলমূল বেশি করে রোগীকে খাওয়াতে হবে এবং ঠাণ্ডা পানি পান করা থেকে এড়িয়ে চলতে হবে। এগুলো বড়দের ক্ষেত্রে হলেও শিশুদের ক্ষেত্রে শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার জন্য অভিভাবকদের অনুরোধ জানান ওই চিকিৎসক।

এদিকে এমন বিরূপ আবহাওয়া আরো দু’ একদিন থাকতে পারে বলে জানিয়েছে কুষ্টিয়া আবহাওয়া অফিস। কুমারখালী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন জানান দেশে নিম্নচাপ প্রবাহিত হচ্ছে। এর কারণে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তবে নিম্নচাপ সরে গেলে শীতের তীব্রতা বাড়বে।

ইইউ//

  • সর্বশেষ
  • পঠিত