ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

অস্ত্র পাচ্ছেন মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তারা

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০১৭, ২০:০২

অস্ত্র পাচ্ছেন মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তারা

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে আরো শক্তিশালী ও কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সংস্থার সরঞ্জাম ও জনবল বৃদ্ধি করে সাংগঠনিক কাঠামো যুগোপযোগী করা হচ্ছে। শিগগিরই অস্ত্র পাচ্ছেন অভিযান পরিচালনায় নিয়োজিতরা। একইসঙ্গে হালনাগাদ করা হচ্ছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন।

বৃহস্পতিবার সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন এ তথ্য জানান। সবচেয়ে আলোচিত মাদক ইয়াবার সরবরাহ ঠেকাতে টেকনাফে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বিশেষ জোন স্থাপনের কথাও তিনি উল্লেখ করেন। এ সময় মন্ত্রী দাবি করেন, রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে মাদকের ব্যবহার ‘আগের চেয়ে’ কমেছে।

সরকার দলীয় এমপি মো. মামুনুর রশীদ কিরনের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আইন সংশোধনসহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আধুনিকায়নে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ সংসদের সামনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৭ এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এনফোর্সমেন্ট কাজে নিয়োজিত জনবলকে ক্ষুদ্রাস্ত্র প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

শফিকুল ইসলাম শিমুলের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ইন্সপেক্টর ও ফিল্ড লেভেলের অফিসারদের অস্ত্র দেয়ার পরিকল্পনা সরকারের আছে। এ ব্যাপারে শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে। মন্ত্রী আরো বলেন, মাত্র ১০ বছর আগেও তারা ঠুঁটো জগন্নাথের মতো ছিলো। তখন তিন-চারটি জেলা মিলে একজন কর্মকর্তা ছিলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা এটিকে আরো শক্তিশালী ও কার্যকর করার উদ্যোগ নেই। এখন প্রতি জেলায় কর্মকর্তা রয়েছে।

স্বতন্ত্র এমপি মো. রুস্তুম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, দেশের তরুণদের মধ্যে ক্রেজ সৃষ্টিকারী মাদক, ইয়াবার প্রবাহ বন্ধে কক্সবাজারের টেকনাফে বিশেষ জোন স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এ প্রস্তাবটি সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো জানান, ইয়াবার স্রোত বন্ধে কক্সবাজার ও টেকনাফে সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে ইয়াবা পাচারবিরোধী টাস্কফোর্স গঠিত হয়েছে। সারাদেশে ইয়াবা বিরোধী বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে টাস্কফোর্সেও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ইয়াবাপাচার রোধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের স্ট্র্যাটেজিক কমিটি কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নাফ নদীতে মাছ ধরার সব ধরণের নৌ-চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। মন্ত্রী জানান, দেশের সবগুলো বিমান, নৌ ও স্থল বন্দরে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করা হয়েছে। সীমান্তে মাদক পাচার ঠেকাতে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে সরকারের নেয়া উদ্যোগের কথাও তিনি জানান। এ ব্যাপারে ভারতের সাথে নিয়মিত বৈঠক হয়।

মিয়ানমারের সাথে একইরকম বৈঠক আয়োজনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেয়া তথ্যানুযায়ী চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে তিন কোটি ৩৫ লাখ ১১ হাজার ২৩৪টি ইয়াবা, ২৫৯ কেজি ৭৬৫ গ্রাম হিরোইন, পাঁচ লাখ ২৪ হাজার ১৩৭ বোতল ফেন্সিডিল ও ৫২ হাজার ৯৪ কেজি গাজা উদ্ধার করার হয়েছে। একই সময়ে ৭৮ হাজার ৫৩৯টি মাদকবিরোধী মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং গ্রেফতার হয়েছে ৯৮ হাজার ৪৮ জন আসামি।

তিনি আরো জানান, গত অর্থবছরে সারাদেশে ছয় হাজার ৩১৩টি মাদক বিরোধী আলোচনা সভা, র‌্যালি ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাদকবিরোধী কমিটি হয়েছে তিন হাজার ৬৭৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। একইসময়ে সরকারি চারটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে তিন হাজার ৪৬৫ জন এবং বেসরকারি ১৯১টি নিরাময় কেন্দ্র থেকে ১০ হাজার ৬২৬ জন মাদকাসক্ত রোগী চিকিৎসা পেয়েছেন। প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে একটি করে সরকারি নিরাময় কেন্দ্র স্থাপনের কথাও মন্ত্রী উল্লেখ করেন।

বেগম জেবুন্নেছা আফরোজের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ ও র‌্যাবসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যৌথ অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা শহরের গুলশান অভিজাত এলাকায় মাদক নির্মূলে কাজ করে যাচ্ছে। গুলশান আবাসিক এলাকা থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত বার, রেস্টুরেন্ট স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

মন্ত্রী আরো বলেন, অবৈধ মাদকদ্রব্য বিক্রির তথ্য সংগ্রহের জন্য সোর্স নিয়োগ করা হয়েছে। সংবাদ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মাদক বিক্রেতার সাথে অনৈতিকভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়।

মামুনুর রশীদ কিরনের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বর্তমানে দেশে অনুমোদিত বারের সংখ্যা ১৪৪টি। অনুমোদনহীন কোনো বার পরিচালনার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলেও সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হয়।

জেকে/জেডএইচ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত