রাজধানীতে গ্যাস সঙ্কট চরমে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০১৮, ১২:৪২ আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০১৮, ১২:৪৭
শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পাইপলাইনে গ্যাসের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। রান্না ঘরে গ্যাসের চুলা না জ্বলায় ব্যয়বহুল বিকল্প পথ খুঁজতে হচ্ছে গৃহস্থালিগুলোকে।
ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত তিন দিন ধরে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় গ্যাসের সঙ্কট। বাসিন্দারা মাসের পর মাস ধরে গ্যাসের দুর্ভোগ পোহানোর কথাও বলেছেন।
রাজধানীর নয়াপল্টন, ফকিরাপুল এলাকা, রামপুরার উলন রোড, মগবাজার, মধুবাগ, মালিবাগ, রামপুরার বনশ্রী, দক্ষিণ বনশ্রী, বাড্ডা, শাহজাদপুর, মোহাম্মদপুরের শেখেরটেক, আদাবর, মিরপুরের শেওড়াপাড়া, পল্লবী, মিরপুর ১২ নম্বর, পুরান ঢাকার লালবাগ, যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকা ছাড়াও কেরানীগঞ্জের মান্দাইলের অধিবাসীরা চুলায় গ্যাস পাচ্ছেন না।
ভাটারার নূরেরচালা এলাকায় সকাল ৯টার দিকে চুলার গ্যাস চলে যায়। সারা দিন টিমটিম করে গ্যাস জ্বলে। পুরোপুরি গ্যাস আসে সন্ধ্যার পর।
স্বল্প আয়ের অনেকে বৈদ্যুতিক হিটার ব্যবহার করে রান্নার কাজ করছেন। তবে নিম্নবিত্তের মানুষদের সংকট বেড়ে গেছে আরও বেশি। অনেকেই মাটির চুলা ব্যবহার করছেন রান্নার কাজে।
মেরুল বাড্ডার একটি সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে গ্যাসের সংকট না থাকলেও গ্যাসের চাপ কম।
অনেকে ফেইসবুকেও লিখেছেন গ্যাস সঙ্কটের কথা।
ফার্মগেইটের তৃপ্তি ইলিমা অভিযোগ করেন, তিন দিন ধরে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না পাইপলাইনে। বিকালে এলেও সন্ধ্যা ৬টায় আবার দুই ঘণ্টার জন্য গ্যাস চলে যায়।
সেগুনবাগিচার বাসিন্দা শিরীন রহমান জানান, গ্যাস সঙ্কটের কারণে রান্নাসহ দৈনন্দিন কার্যক্রমের সময়সূচি পরিবর্তন করতে হয়েছে।
গেন্ডারিয়া এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, সারা বছর তাদের এলাকায় গ্যাস চাপ কম থাকলেও জানুয়ারির শুরু থেকে সঙ্কট প্রকট হয়েছে।
আদাবরের বাসিন্দা শামীমা পারভীন বলেন, গত পাঁচ-ছয় দিন ধরে সকাল ৮টার আগে থেকেই গ্যাস চলে যায়। বেলা ২টার পর একটু একটু আসে। এ কারণে ভোরে ফজরের নামাযের পরই রান্না শুরু করে দিতে হয়
শ্যামলী কাজী অফিস এলাকার সাদিয়া জানান, তাদের এলাকায় সারা বছরই গ্যাসের সঙ্কট থাকে। সম্প্রতি তা তীব্র হয়েছে। রাত ১২টায় গ্যাস আসে সকাল ৬টায় আবার চলে যায়।
যাত্রাবাড়ির বাসিন্দা আইনজীবী প্রকাশ বিশ্বাস বলেন, যাত্রাবাড়ি-কাজলায় সকাল ৮ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পযর্ন্ত গ্যাস থাকে না।
সাইন্স ল্যাবরেটরি এলাকার বাসিন্দা সঞ্চিতা মোস্তাকিম বলেন, এমনিতে গত কয়েকদিন ধরে গ্যাসের সঙ্কট ছিল, কিন্তু গত তিন দিন ধরে পরিস্থিতি অসহনীয়। সকাল থেকে গ্যাস থাকে না, দুপুরের দিকে যতটুকু পাওয়া যায়, তা দিয়ে রান্নার কাজ করা যায় না।
শুক্রাবাদের বাসিন্দা জাভেদ হাসান বলেন, সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গ্যাসের কোনো চাপ থাকে না। বাসায় রান্না হয় রাত ১১টার পর। গত তিন-চারদিন ধরে এই চলছে।
পুরান ঢাকার বেশিরভাগ এলাকায় জানুয়ারির শুরু থেকেই গ্যাসের সমস্যা বলে জানিয়েছেন একাধিক বাসিন্দা।
তিতাস গ্যাসের পরিচালক (অপারেশন) এইচ এম আলী আশরাফ বলেন, গ্যাসের উৎপাদন ঠিকই আছে। শীতকালে গৃহস্থালিতে গ্যাসের ব্যবহার প্রায় ২০ শতাংশ বেড়ে যায়। অনেকেই দীর্ঘক্ষণ ধরে পানি গরম করেন। এ ছাড়া শহরের দ্রুত বর্ধনশীল এলাকাগুলোতে গ্যাসের সংকট হয়। যেখানে আগে ৫০টি বাড়ি ছিল, এখন সেখানে ৫০০ বাড়ি হয়ে গেছে। এসব এলাকায় গরমেও সংকট থাকতে পারে।
আলী আশরাফ জানান, সরকার বাসাবাড়িতে গ্যাস ব্যবহারে উৎসাহ দেয় না। নতুন করে রান্নার গ্যাসের সংযোগ দেওয়াও বন্ধ করা আছে।
/এসবি/