ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

ভাষার টানে দুই বাংলার মিলন মেলা

  বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৭:৫৯  
আপডেট :
 ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৮:০৪

ভাষার টানে দুই বাংলার মিলন মেলা

ভাষা দিবস মিলিয়ে দিল ‘এপার-ওপার’। কাটাতারের বেড়া উপেক্ষা করে ভাষার দাবিতে আন্দোলনে শহীদদের সম্মিলিত শ্রদ্ধা জানাল ভারত-বাংলাদেশ। ভৌগলিক সীমারেখা ভুলে কেবলমাত্র ভাষার টানে দুই বাংলার মানুষ একই মঞ্চে গাইলেন বাংলার জয়গান।

একই আকাশ একই বাতাস, দুই বাংলার মানুষের ভাষা এক। একই নদী, একই জল আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি বলে বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমাদের প্রাণ কাঁদে। তাই তো বারবার ছুটে আসি দুই দেশের বাঙালী বাংলাভাষী মানুষের পাশে।

“বিশ্ব মানব হবি যদি, কায়মনে বাঙালী হ” এ শ্লোগানকে সামনে রেখে এপার ওপার দুই বাংলার মৈত্রী পরিষদের আয়োজনে মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস যৌথ ভাবে আয়োজনের মধ্যে দিয়ে এবারও পালন করেছে এক সঙ্গে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একুশ মঞ্চে’। বুধবার সকালে এভাবেই কাটালেন দুই বাংলার মানুষ। সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডে শহীদ বেদি ঢাকল ফুলের চাদরে।

বেনাপোল চেকপোস্ট নোম্যান্সল্যান্ডে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে প্রতি বছরের মতো এবারো ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানানো হয়। মিষ্টি বিতরণ, আলোচনা আর গানে গানে মাতোয়ারা হলো দুই বাংলার মানুষ।

উভয় দেশের জনপ্রতিনিধিরা বলেন, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির কথা। এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে জড়ো হয়েছিল হাজার হাজার ভাষাপ্রেমী মানুষ। নেতাদের কণ্ঠে ছিল ভবিষ্যতে আরো বড় করে এক মঞ্চে একুশসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান উদযাপনের প্রত্যাশা। উভয় দেশের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো শত:স্ফুর্তভাবে অংশ নেয় এ অনুষ্ঠানে। দু'দেশের জাতীয় পতাকা, নানা রং এর ফেস্টুন, ব্যানার, প্লেকার্ড, আর ফুল দিয়ে বর্নিল সাজে সাজানো হয় নোম্যান্সল্যান্ড এলাকা।

ফুলের মালা ও জাতীয় পতাকা বিনিময় করে উভয় দেশের আবেগপ্রবণ অনেক মানুষ বাঙালীর নাড়ির টানে একজন অপরজনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন। দুই বাংলার মানুষের মাঝে বসে এক মিলন মেলা। এ সময় পেট্রাপোল ও বেনাপোল চেকপোস্টে ঢল নামে হাজার হাজার মানুষের। ক্ষনিকের জন্য হলেও স্তব্ধ হয়ে যায় আন্তর্জাতিক সীমারেখা।

সকাল সাড়ে ১০ টায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী শ্রী জ্যোতি প্রিয় মল্লিক, লোক সভার বনগাঁ অঞ্চলের সাংসদ মমতা ঠাকুর, বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস ও বনগাঁ পৌর মেয়র শংকর আঢ্যর নেতৃত্বে ভারত থেকে আসা কয়েকশ' বাংলাভাষী মানুষ বাংলাদেশীদের ফুলের পাঁপড়ী ছিটিয়ে ও মিস্টি দিয়ে বরণ করে নেয় একে অপরকে। নোমান্সল্যান্ডে অস্থায়ী শহীদ বেদীতে প্রথম ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান উভয় দেশের জনপ্রতিনিধিসহ সরকারী কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্রাচার্য, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক শাহিন চাকলাদার, ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফুল হক, কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার আ.আ.ম.আমীমুল ইহসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাউদ্দিন শিকদার, ও বেনাপোল পৌর সভার মেয়র আশরাফুল আলম লিটন।

বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্রাচার্য বলেন, দুই বাংলার মানুষ আজ আমরা এক হয়েছি। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন আমাদের অধিকার বোধের জম্ম দিয়েছিল। সালাম, বরকত, রফিক, শফিক জব্বারসহ হাজারো মানুষের রক্তের বিনিময়ে রাষ্ট্রভাষার যে অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা বিশ্বে বিরল। পরবর্তীকালে ভারত বাংলাদেশের মানুষের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা এসেছে। আজকের সেই বাংলা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে সারা বিশ্বে।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, আমি বাংলায় কথা বলি পুন: জন্মে আমি বাঙালী হয়ে জন্মাতে চাই। কাটাতারের বেড়া আমাদেরকে আটকাতে পারে কিন্ত আমাদের আবেগকে আটকাতে পারবে না। আগামী ২০ বছর পর দুই বাংলা এক হয়ে যাবে। ভাষার জন্য রফিক সালাম বরকত শফিক জীবন দিয়েছেন। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান নিজের জীবন দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করে একটি ভূখন্ড প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে গেছেন। ভাষা আর স্বাধীনতার জন্য এত ত্যাগের নজির পৃথিবীতে অন্য কারোর নেই। ভাষার টানে আমরা বাংলাদেশে ছুটে এসেছি একুশ উদযাপন করতে।

২০০২ সাল থেকে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল চেকপোস্টের জিরো পয়েন্টে মাতৃভাষা দিবস পালন করে আসছে দুই বাংলার মানুষ।

এসআইএস/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত