শিশুদের অন্যরকম একুশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৯:১৯
ছোট্ট দুই বোনের গায়ে আজ সাদাকালো শাড়ি। তাতে মোটিফ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে অসংখ্য বাংলা বর্ণমালা। বাবা-মায়ের সঙ্গে রিক্সায় চড়ে যাচ্ছে শহীদ মিনারে। ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানাতেই পরিবারটির এমন যাত্রা।
ব্যস্ত নগর জীবনে বাবা-মাকে কাছে পায় না শিশুরা। তাই যেকোনো ছুটির দিন মানেই তাদের আবদার পূরণের মোক্ষম সময়। কিন্তু আজকে দিনটি ছিলো একেবারেই ব্যতিক্রম। কারণ দিনটি যে ভাষার। তাই তো যাদের মুখে এখনও বোল ফোটেনি, তারাও এসেছিল বাবা-মা কিংবা অভিভাবকদের হাত ধরে।
সাতসকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মূল বেদিতে হঠাৎ চোখ আটকে যায়। আলোকচিত্রীরা একটি শিশুকে ঘিরে ধরেছে। হাতে তার একগুচ্ছ ফুল। মাথায় অমর একুশে লেখা ব্যান্ড। অবাক চোখে সে তাকিয়ে আছে শহীদ মিনারের দিকে।
রাজধানীর পুরান ঢাকা থেকে দুপুরে শহীদ মিনারে আসে আট বছরের শায়ান। তার বাবা জায়েদুল করিম জানালেন, ‘প্রথম ছেলেকে শহীদ মিনারে নিয়ে এসেছি। কারণ আমি চাই, ও দেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানুক।’
এদিকে বুধবার ভোর থেকেই শহীদ মিনারে মানুষের ঢল নামে। যার রেশ শেষ বিকেলেও ছিল। শ্রদ্ধা নিবেদন করতে সব বয়সী মানুষ আসলেও, শিশুদেরই আগ্রহটাই যেন বেশি। মুখে-হাতে একুশের আল্পনা আর লাল-সবুজের পোশাক পরে বাবা-মা’র সঙ্গে তারা শহীদ মিনারে এসেছে।
ছোট্ট শিশু তানিয়া। বাবার হাত ধরে এসেছে শহীদ মিনারে ফুল দিতে। মুখে একুশের আল্পনা। তানিয়ার অনুভূতির কথা জানতে চাইলে সে বলে, শহীদ মিনারে ফুল দিয়েছি। অনেক মানুষ। খুব ভালো লাগছে। আব্বুর সঙ্গে এখন বই কিনতে যাবো।
তানিয়ার বাবা আনোয়ার হোসেন বলেন, তানিয়ার বয়স ৬ বছর। মিরপুরের একটি স্কুলের প্রথম শ্রেণীতে পড়ে। আমি একুশের চেতনাকে ধারণ করি। মেয়েকে নিয়ে এসেছি তার মনেও যেন একুশ দাগ কাটে।
অন্যদিকে শহীদ মিনারে ফুল দেয়ার পরপরই অনেককেই বইমেলার দিকে যেতে দেখা যায়। সায়মা, যাত্রাবাড়ীর একটি স্কুলে সে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। বাবা-মার সঙ্গে সে এসেছে। সে বলে, ‘শহীদ মিনারে ফুল দিয়েছি। অনেক ভাল লাগছে। এখন বই কিনতে মেলায় যাব।’
এদিন সকাল থেকেই একুশে বইমেলায় সব বয়সী মানুষ ভিড় ছিল। তবে আলাদাভাবে উল্লেখ্য হলো, শিশুদের উপস্থিতি। বিশেষ দিনে তারা বাবা-মায়ের সঙ্গে ভিড় করছে বইয়ের স্টলে। কিনছে তাদের পছন্দের বই।
ছবি: মেহেদী হাসান রানা
ডিপি/