ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

প্যারাডাইস পেপার্স কেলেঙ্কারির তদন্ত দাবি

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২২:২৮  
আপডেট :
 ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২২:৩৭

প্যারাডাইস পেপার্স কেলেঙ্কারির তদন্ত দাবি

করস্বর্গ হিসেবে পরিচিত দেশগুলোতে গোপনে অর্থ পাচারের সঙ্গে যুক্ত হিসেবে যাদের নাম এসেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। সম্প্রতি প্যারাডাইস পেপার্স কেলেঙ্কারিতে বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরসহ দেড় ডজন বাংলাদেশির নাম আসায় এই দাবি আরও জোরালো হয়েছে। এ নিয়ে কথা বলছেন সরকারের মন্ত্রীরাও।

অথচ একই কারণে নওয়াজ শরিফকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে সরে যেতে হলে বাংলাদেশে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না সেই প্রশ্ন উঠছে।

২০১৬ সালে প্রকাশ পায় পানামা পেপার্স ও গত বছরের নভেম্বরে প্রকাশ পাওয়া প্যারাডাইস পেপার্স কেলেঙ্কারিতে অনেক বাংলাদেশির নাম এলেও সেই বিষয়ে কোনো সংস্থার কার্যকর পদক্ষেপ এখনও দৃশ্যমান নয়।

এসব অর্থপাচারের তদন্তের বিষয়ে সরব হয়েছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। তিনি সংসদে বলেন, অর্থপাচার, ঋণ জালিয়াতির তদন্ত আশা করি করা হবে, দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। পাকিস্তান পানামা পেপারস নিয়ে তদন্ত করতে পারলে আমরা পারছি না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ গোপনে বিদেশে টাকা বিনিয়োগকারীদের বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন।

অর্থ পাচারের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছেন দুর্নীতি বিরুদ্ধে প্রচারণাকারী সংস্থা টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানও।

প্যারাডাইস পেপারসে যেসব বাংলাদেশির নাম এসেছে তারা মাল্টায় নিবন্ধিত বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার হয়েছেন। তাদের কয়েকজন বিদেশের ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। আবার বাংলাদেশে ব্যবসা করা বিদেশিরা এদেশের ঠিকানা ব্যবহার করে সেই দেশে বিনিয়োগ করেছেন বলে ফাঁস হওয়া নথিতে উঠে এসেছে।

রাজধানীর বনানীর ১ নম্বর ব্লকের একটি বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা মুসা বিন শমসের ছাড়া এই দফায় প্যারাডাইস পেপার্সে নাম থাকা ঢাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আছেন- ধানমন্ডি এলাকার পৃথক ঠিকানা ব্যবহার করা জুলফিকার আহমেদ ও কে এইচ আসাদুল ইসলাম, বনানীর ঠিকানা ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী মাহতাবা রহমান, সাভারে অবস্থিত ঢাকা ইপিজেডের ব্যবসায়ী শাহনাজ হুদা রাজ্জাক ও ইমরান রহমান, বারিধারার ঠিকানা ব্যবহার করা ব্যবসায়ী মো. ফজলে এলাহী চৌধুরী ও আমানউল্লাহ চাগলা।

২০১০ সালের ৪ মে নিবন্ধন করা ভেনাস ওভারসিজ হোল্ডিং কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডার ও পরিচালক মুসা বিন শমসের।জুলফিকার আহমেদ বিনিয়োগ করেছেন খালেদা শিপিং কোম্পানি লিমিটেডে, এর নিবন্ধন হয়েছে ১৯৯৯ সালের ২৫ মে। আসাদুল টাকা রেখেছেন ইনট্রেপিড ক্যাপিটাল লিমিটেড ও ইনট্রেপিড গ্রুপ লিমিটেডে, তার দুটো কোম্পানিরই নিবন্ধন হয়েছে ২০১৫ সালের ২০ মার্চ। মাহতাবার কোম্পানির নাম সেলকোন শিপিং কোম্পানি লিমিটেড, নিবন্ধন ২০০৩ সালের ২৩ অগাস্ট।

ইপিজেডের ঠিকানা দেওয়া ইমরান ও শাহনাজ দুজনই প্রিয়ম শিপিং লিমিটেড নামের একটি কোম্পানির পরিচালক। সাউদার্ন আইস শিপিং ও ওসান আইস শিপিং নামে দুটির কোম্পানির পরিচালক হিসেবেও আছেন ইমরান।

২০১৬ সালের ১০ জুন নিবন্ধিত ডাইনামিক এনার্জি হোল্ডিং লিমিটেডের পরিচালক ফজলে এলাহী। বারিধারা ডিওএইচএসের ঠিকানা দেওয়া আমানউল্লাহ চাগলা টাকা রেখেছেন পদ্মা টেক্সটাইলস লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি খুলে, এর নিবন্ধন হয়েছে ২০০৯ সালের ৫ মার্চ।

এছাড়া আবাসিক ঠিকানা চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ উল্লেখ করেছেন মোহাম্মদ এ মালেক এবং লালখান বাজার এলাকা উল্লেখ করেছেন মোহাম্মদ এ আউয়াল। তারা টাকা রেখেছেন শামস শিপিং, কুয়ামার শিপিং ও মারজান শিপিং লিমিটেড নামের তিনটি কোম্পানিতে, যেগুলো নব্বই দশকে নিবন্ধিত।

আবাসিক ঠিকানা নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া ব্যবহারকারী তাজুল ইসলাম তাজন ও তুহীন ইসলাম সুমন মাল্টায় বিনিয়োগ করেছেন জেক্সিমকো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডে, তাদের এই কোম্পানির নিবন্ধন হয়েছে ২০০৯ সালের ৫ জুন। ইউসুফ খালেক নামের একজন বাংলাদেশি আবাসিক ঠিকানা ব্যবহার করেছেন ইতালির পাদোভা শহরের। এদের বাইরেও বেশ কয়েকজনের নাম এসেছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এবার অনেকের নাম এসেছে, এর আগেও এসেছে, তারা সবাই যে দুর্নীতি করেছে বা অর্থপাচার করেছে তা বলা যাবে না। তবে যদি তারা সত্যিকার অর্থে অর্থপাচার করে থাকে তাহলে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’

অতীতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‍দুর্নীতির মাধ্যমে পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার নজির রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো যদি আন্তরিক হয়ে উদ্যোগ নেয় তাহলে অর্থপাচার হয়ে থাকলে তাও ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

এক্ষেত্রে দুদককে ‘কেন্দ্রীয় ভূমিকা’ নিতে হবে মন্তব্য করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অর্থপাচার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দেশের যে চারটি প্রতিষ্ঠান কাজ করে তাদের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। তবে সবার আগে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার। পানামা পেপার্স ও প্যারাডাইস পেপারসের আগের দফায় অনেক বাংলাদেশির নাম এলেও তাদের বিষয়ে ‘বাস্তব কোনো পদক্ষেপ’ দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী যদি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী অর্থপাচারে সংশ্লিষ্ট থাকেন কেবল তখনই দুদক অনুসন্ধান বা তদন্ত করতে পারে। তবে পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপারসে যে সকল ব্যক্তির নাম এসেছে তাদের অনুপার্জিত আয়ের বিষয়টি দুদক অনুসন্ধান করবে।

এস/এ/জে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত