ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

দিনাজপুরে ঝুঁকিপূর্ণভাবে এলপি গ্যাস বিক্রি

  দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৯:০৫

দিনাজপুরে ঝুঁকিপূর্ণভাবে এলপি গ্যাস বিক্রি

দিনাজপুরের যত্রতত্র লাইসেন্সবিহীন দোকানে অবৈধভাবে এলপি গ্যাসসহ সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। এ কারণে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে ক্রেতা, পথচারী ও আশেপাশের এলাকার জনগণসহ শিক্ষার্থীরা। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন গ্যাস ডিলারসহ সচেতন শহরবাসী।

সরেজমিনে দিনাজপুর শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শহরের মুদির দোকান, সেলনু, পানের দোকান, চায়ের দোকান, ঔষধের দোকান, রড সিমেন্টের দোকান এমনকি লন্ড্রীর দোকানেও অনিরাপদ স্থানে অগ্নিনির্বাপক বা অক্সিজেন ছাড়া লাইসেন্সবিহীন অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে সিলিন্ডার গ্যাস। এতে পথচারীরা মারাত্বক ঝুঁকির পাশাপাশি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের আশংকায় ব্যবসায়ীদের মাঝে দেখা দিয়েছে শংকা। ব্যবসায়ী, পথচারী ও এলাকাবাসী শংকিত থাকলেও প্রশাসন রয়েছে পুরোপুরি নির্বিকার।

সচেতন শহরবাসী মনে করেন, সরকারি নিয়মনীতি ও অনুমতিবিহীন অবৈধ গ্যাসের ব্যবসা অদৃশ্য কোন কারণে দেখেও না দেখার চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।

স্থানীয় জানায়, বিস্ফোরণ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই কেউ গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান করতে পারে না। কেননা, গ্যাস অত্যান্ত বিপদজনক পদার্থ। এর জন্য আলাদা ও নিরাপদ স্থান প্রয়োজন। বিশেষ করে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় পেট্রোল পাম্পের মালিকদের বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ডিলারদেরকে এগুলো বিক্রির অনুমতি প্রদান করে থাকে।

স্থানীয় আরোও জানায়, কোন ডিলার গ্যাস বা তৈলাক্ত পদার্থ বিক্রির জন্য আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিগণ বিক্রির স্থান পরিদর্শন গুদামের নিরাপত্তা ইত্যাদির ব্যাপারে সন্তোষজনক রিপোর্ট প্রদান করলে এবং স্থানীয় প্রশাসনের ছাড়পত্র ইত্যাদি পেলেই ডিলারের অনুমতি পেয়ে থাকে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এদের অধিকাংশই বিস্ফোরণ অধিদপ্তরের কোন লাইসেন্স পর্যন্ত নেই। অধিকাংশ দোকানে মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার বিক্রিসহ গাড়িতে বহন করায় যে কোনো সময় গ্যাস বিস্ফোরিত হয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন পথচারীসহ আশেপাশের সাধারণ ব্যবসায়ীরা।

আরও জানা গেছে, শহরের অধিকাংশ এলপি গ্যাস ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নেই বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স। আটটির কম গ্যাস সিলিন্ডার রাখলে লাইসেন্স প্রয়োজন হবে না, এমন আইনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে লাইসেন্স না নিয়েই অবৈধভাবে ব্যবসা করছে তারা। সাথে নেই প্রাথমিক বিপর্যয়ে রক্ষায় ড্রাই পাউডার ও সিও ২ সরঞ্জামসহ অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা।

সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, শহরের উপশহর, বালুবাড়ি, ঈদগাহ আবাসিক এলাকা, মুন্সিপাড়া, কসবা, পুলহাট, রাজবাটী, বড়বন্দর, ফকিরপাড়া, মালদহপট্টি, বাহাদুর বাজার, পাহাড়পুর, বালুয়াডাঙ্গা, চাউলিয়াপট্টি, রামনগর, সুইহারী, গোলাপবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় খুচরা এলপি গ্যাস বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। সংশ্লিষ্ট আইন না মেনেই প্রশাসনের নাকে ডোগায় ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

আশেপাশের ব্যবসায়ীরা জানান, লাইসেন্স না নেয়ার ভয়ে অনেক দোকানে দেখা যায় ২০টির বেশি সিলিন্ডার গাড়ি থেকে নামে কিন্তু দোকানে ৪ থেকে ৫টি সিলিন্ডার দেখানো হয়।

অবৈধ এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের বেশিরভাগই আইনগত বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে জানলেও তদারকির অভাবে লাইসেন্স ও অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়াই ব্যবসা করছেন তারা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লাইসেন্সপ্রাপ্তির দীর্ঘসূত্রতা এড়াতে এবং বিভিন্ন কোম্পানির ডিলারদের বিপণন কৌশলে প্ররোচিত হয়েও তারা আইন অনুসরণ থেকে পিছিয়ে আসছেন।

বিস্ফোরক আইন ১৮৮৪ এর দ্য এলপি গ্যাস রুলস ২০০৪ এর ৬৯ ধারার ২ বিধিতে লাইসেন্স ব্যতীত কোনো ক্ষেত্রে এলপিজি মজুদ করা যাবে, তা উল্লেখ আছে। বিধি অনুযায়ী আটটি গ্যাসপূর্ণ সিলিন্ডার মজুদের ক্ষেত্রে লাইসেন্স নিতে হবে। একই বিধির ৭১নং ধারায় বলা আছে, আগুন নিভানোর জন্য স্থাপনা বা মজুদাগারে যথেষ্ট পরিমাণে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রপাতি এবং সরজ্ঞাম মজুদ রাখতে হবে। এ আইন অমান্য করলে যে কোনো ব্যবসায়ী অনুন্য দুই বছর ও অনধিক পাঁচ বছরের জেলসহ অনধিক ৫০ হাজার টাকায় দণ্ডিত হবেন এবং অর্থ অনাদায়ী থাকলে অতিরিক্ত আরও ছয় মাস পর্যন্ত কারাগারের বিধান রয়েছে।

এ ব্যাপারে দিনাজপুরে সরকারি এলপি গ্যাস ডিলার মেসার্স আবুল বাশার এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী আবুল বাশার, মেসার্স চুলা ঘর এর স্বত্ত্বাধিকার সালাউদ্দিন তালুকদার সাবু, মুক্তি বাণিজ্যালয়ের স্বত্ত্বাধিকারী জামানুর রহমান, হাই এন্ড সন্স এর স্বত্ত্বাধিকারী আব্দুল হাই, অনি এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী ওবায়দুর রহমান, পাইয়োনিয়ার ফিলিং স্টেশনের স্বত্ত্বাধিকারী বাবলা, জামান ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী বাবুসহ বেসরকারি এলপি গ্যাস ডিলার শাহ এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী রাজা, বারী এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী আব্দুল বারী ও লাইসেন্সধারী মেসার্স চুলা জগতের স্বত্ত্বাধিকারী আবু সাঈদ বিপ্লব, রাধুণী চুলা ঘরের স্বত্ত্বাধিকারী মনসুর আলী প্রতিবেদককে জানান, অলিগলিতে লাইসেন্সবিহীন দোকানগুলোতে এলপি গ্যাসসহ সিলিন্ডার বিক্রি করার কারনে আবাসিক এলাকাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে পড়েছে। যেকোনো সময় ঘটতে পারে ভয়াবহ বিস্ফোরণ।

কারণ হিসেবে তারা জানান, বিস্ফোরক আইন মোতাবেক গ্যাসসহ সিলিন্ডার রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াই বিক্রয় করছে লাইসেন্সবিহীন ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনসহ বিস্ফোরক অধিদপ্তরের কোন রকম অভিযান না থাকায় সরকারি-বেসরকারি এলপি গ্যাস ডিলার ও লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীরা অসহায় হয়ে পড়েছে। তাই অবিলম্বে লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনসহ বিষ্ফোরক অধিদপ্তরের অভিযান চালিয়ে আবাসিক এলাকাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা করার দাবী জানান তারা। তা না হলে দিনাজপুরে সরবরাহসহ অনির্দিস্টকালের জন্য এলপি গ্যাস বিক্রয় বন্ধ রাখার অভিমত ব্যক্ত করেন তারা।

এ ব্যাপারে রাজশাহী বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পরিদর্শক ড. মো. আসাদুল ইসলাম প্রতিবেদককে মোবাইল ফোনে জানান, জনবলের অভাবে দুই বিভাগের প্রত্যন্ত এলাকায় অভিযান না থাকায় অবৈধভাবে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি বন্ধ সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমেও লাইসেন্সবিহীন দোকানগুলোতে অবৈধভাবে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি বন্ধ সম্ভব হতো বলে তিনি জানান।

জেডআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত