ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

এসআই জালাল বাড়ি ফিরলেন কিন্তু কফিনবন্দি হয়ে

  ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০১৮, ১৮:৪৯  
আপডেট :
 ২০ মার্চ ২০১৮, ১৮:৫৩

এসআই জালাল বাড়ি ফিরলেন কিন্তু কফিনবন্দি হয়ে

রাজধানীর মিরপুরে অভিযান চালানোর সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত ডিবি ইন্সপেক্টর জালাল উদ্দিন (৪৮) তিন মাস পর গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের ভোলপাড়া গ্রামে আসতে চেয়েছিলেন। ছেলের অপেক্ষায় দিন গুনছিলেন বৃদ্ধা মা আয়েশা বেগম। ছেলে ঠিকই এলো। কিন্তু জীবিত নয়, কফিনবন্দি হয়ে।

নিহত জালালের দুই মেয়ে রয়েছে। তার বড় মেয়ে তৃপ্তি ঢাকা ভিকারুন্নেসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী এবং ছোট মেয়ে তুর্জা একই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। পরিবার নিয়ে তিনি ঢাকার সবুজবাগ থানার পূর্ব বাসাবোর একটি বাড়িতে থাকতেন।

ভোলপাড়া গ্রামের মৃত বিশারত মন্ডলের ৭ সন্তানের মধ্যে নিহত জালাল উদ্দিন ছিলেন পরিবারের ৩ নম্বর সন্তান। তারা ৫ ভাই ও দুই বোন। গ্রামের বাড়িতে যৌথ পরিবার হিসাবে অন্যান্য ভাইয়েরাও একসাথে বসবাস করে। কোন ভাবেই পরিবারটি মেনে নিতে পারছে না এই মৃত্যুর সংবাদ।

নিহতের পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাত ২টার দিকে নিহতের পরিবারের সদস্যরা মৃত্যুর সংবাদ পান। নিহত জালালের অন্য ভাইয়েরা পরিবার নিয়ে আলাদা বসবাস করেন। একমাত্র জালাল পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করেন। এছাড়া ছোট ভাই বাদশা কুয়েত প্রবাসী এবং অন্য ভাইয়েরা কৃষিকাজ করেন। মায়ের দেখভাল করতেন তিনি।

নিহত গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক জালাল উদ্দিনের বাড়িতে মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, তার মৃত্যুর সংবাদ গ্রামের বাড়িতে আসার পর শোকের মাতম শুরু হয়। গ্রামের লোকজন তাদের বাড়িতে ভিড় করতে থাকেন। ভোলপাড়া গ্রামে প্রায় ২ বছর আগে দুই তলা একটি বাড়ি তৈরি করার কাজ শুরু করেন জালাল। এখনো শেষ হয়নি বাড়িটির কাজ। কিন্তু এই বাড়িতে আর উঠা হলো না জালাল উদ্দিনের।

এদিকে, নিহত জালাল উদ্দীনের বৃদ্ধ মা আয়েশা খাতুন নিহত ছেলের ছবি নিয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন আর বলছেন, আমার ছেলের সাথে আর দেখা হবে না। আমাকে না বলে আমার জালাল আমার আগে চলে গেল। দুই তলা বাড়ি থুয়ে কোন তলায় যাচ্ছেরে। এই বাড়িটিতে তুই আমাকে রাখতে চেয়েছিলি। এখন আমি কার সাথে থাকবো।

কান্না জড়িত কণ্ঠে মা আয়েশা বেগম বলেন, ৩ মাস আগে ছেলে জালাল উদ্দিন বাড়িতে এসেছিল। কয়েকদিন থাকার পর ঢাকায় যাওয়ার আগে বলে, ৩ মাস পর আবার আসব। তিনি আরও বলেন, সবাই বেঁচে গেল আর আমার ছেলে মারা গেল। এ কষ্ট আমি আর ভুলতে পারছি না। মৃত্যুর খবরে কালীগঞ্জের ভোলপুর গ্রামে মানুষের মধ্যে শোক বিরাজ করছে। হঠাৎ করেই মধ্যরাতে তার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে অনেকটাই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে তার বৃদ্ধা মা-সহ পরিবারটি।

তুই এবার বাড়ি এসে আমার সাথে তো আর কথা বলবি নে। আমার ওষুধ কে কিনে দেবে। আমার জন্য ফল আর কেউ কিনে আনবে না। এভাবে প্রলাপ করতে থাকেন বৃদ্ধা মা আয়েশা খাতুন। মেজ ভাই আলাউদ্দিন বলেন, গ্রামে পাশের স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষার পর পুলিশে যোগ দেয় তার ভাই। প্রমোশন পেয়ে ইন্সপেক্টর হয়েছিল। অভিযানকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে জালাল উদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনার সঠিক তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন পরিবারটি।

নিহত জালাল উদ্দীনের বাল্যবন্ধু গোলাম রসুল জানান, আমরা গোপালপুর হাই স্কুলে পড়তাম। জালাল দারুণ মেধাবী ও সামাজিক মানুষ ছিল। চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর কৃতিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করার স্বীকৃতিস্বরুপ জালাল রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেয়েছেন বলে জানান এই বাল্যবন্ধু।

উপজেলার ভোলপাড়া গ্রামের শুকুর আলী জানান, মানুষের সাথে খুব সহজে মিশতেন। তিনি এই এলাকার সম্পদ ছিলেন। মানুষের বিভিন্ন সমস্যায় সে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতো। এমন উচ্চ পর্যায়ে গ্রামের আর কেউ চাকরি করে না। ছুটিতে বাড়ি এলে পরিচিত সবার বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে দেখা করতো। তার মৃত্যুতে এলাকার মানুষ খুব কষ্ট পেয়েছে।

কালীগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমান খান জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে তিনি মরদেহ গ্রহণ করবেন। এরপর নিহত কর্মকর্তার ধর্মীয় সব ধরনের প্রক্রিয়া শেষ করে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হবে বলে জানান তিনি। উল্লেখ্য, সোমবার রাত ১২টার সময় রাজধানীর মিরপুরের পীরেরবাগের তিনতলা একটি বাড়িতে কয়েকজন সন্ত্রাসী অবৈধ অস্ত্র জড়ো করছে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। দুপক্ষের গোলাগুলির সময় পরিদর্শক জালাল উদ্দিনের মাথায় গুলি লাগে। এসময় তাকে স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

নিহত জালাল উদ্দিন ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদকপ্রাপ্ত হন পুলিশের এই কর্মকর্তা। গত তিন মাস পূর্বে পদোন্নতি সূত্রে তিনি সূত্রাপুর থানা থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (পশ্চিম) বিভাগের পল্লবী জোনাল টিমে যোগদান করেন।

/এসকে/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত