ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

পানিতে ভেসেও পানির অভাব

  সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০১৮, ১১:১৭

পানিতে ভেসেও পানির অভাব

চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। কিন্তু নোনা পানির কারণে খাবার পানির তীব্র সংকট। গ্রীষ্মকাল শুরুর আগেই গরম পড়ার সাথে সাথেই খাবার পানি সংকট তীব্র থেকে আরও প্রকট আকার ধারন করেছে সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় উপজেলা সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগরে। খোলা পুকুরের অনিরাপদ পানি পান করে নানা ধরনের অসুখে পড়ছে উপকুলীয় এলাকার মানুষজন। বেসরকারি ভাবে স্থাপন করা পানি বিশুদ্বকরণ ফিল্টারগুলোর প্রায় ৪০ শতাংশই অকেজো হয়ে পড়েছে। ফলে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে পায়ে হেটে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতে আসেন সুন্দরবন সংলগ্ন বিভিন্ন গ্রামের আইলা দূর্গত নারীরা।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ৫৭৯৫টি পুকুর ও ১৩৬টি জলমহাল রয়েছে। এছাড়া ৪৬৫টিতে পিএসএফ থাকলেও ব্যবস্থাপনার অভাবে বন্ধ রয়েছে ৪০ শতাংশ।

শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা রেশমা বেগম জানান, সুন্দরবন সংলগ্ন চারিদিকে নদী বেষ্টিত এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষজনই খোলা পুকুরের পানি খেয়ে থাকেন। অথচ একই পুকুরে মানুষজন হাড়ি-পাতিল মাঝাঘোষার পাশাপাশি সাবান সোডা দিয়ে কাপড় পরিষ্কার করে। গ্রামে যেকটি টিউবঅয়েল রয়েছে তাতে অতিমাত্রার লোনা পানি উঠে। ফলে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে সাধারণ মানুষজন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খোলা পুকুরের পানি খেয়ে নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

একই ভাবে খাওয়ার পানির কষ্টের বর্ণনা দিলেন, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের ফুলতলা গ্রামের আরেক গৃহবধূ কাকুলি সরকার। তিনি প্রতিদিন ২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সংসারের জন্য খাওয়ার পানি সংগ্রহ করেন। তিনি পানি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে সকালে বাড়ি থেকে বের হলে পানি নিয়ে বাড়ি ফিরতে দুপুর হয়ে যায়। এতে করে সংসারের কাজ ব্যাহত হয়। শুধু রেশমা বেগম বা স্বরসতি সরকারই নয় শ্যামনগর উপজেলার প্রায় ৪ লাখ মানুষের মধ্যে অন্তত ৭০ ভাগ মানুষের খাওয়ার পানি সমস্যা বা সংকট রয়েছে বলে উপকূলবাসীর দাবি।

আইলা দুর্গত শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম জানান, উপকূলীয় অন্যান্য ইউনিয়নের চেয়ে তার ইউনিয়নে মানুষজন বিশ্বদ্ধ খাওয়ার পানি কষ্ট পায় অনেক বেশি। তিনি বলেন, বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রত্যন্তত অঞ্চলের মানুষজন যে পুকুরে কাপড় কাচে ও গোসল করে সেই একই পুকুরের পানি পান করে থাকে। যে কারণে শিশু ও বৃদ্ধরা নানা ধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

শ্যামনগর উপজেলার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ খাবার পানির তীব্র সংকট রয়েছে। ১৯৯০ সালের পর থেকেই শ্যামনগরে খাবার পানির সংকট শুরু হয়। এর জন্য অপরিকল্পিতভাবে লোনা পানির চিংড়ি চাষ, নদী ভাঙনসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যাগকে দায়িকরেছে উপকূলীয়বাসী।

নদী রক্ষা ও পরিবেশ আন্দোলন নেতা অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী জানান, শ্যামনগরে খাবার পানির সংকট দূরীকরণে পুকুরগুলো সংস্কার করে ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। এতে যেমন খাবার পানির সংকট কমবে, অন্যদিকে মানুষ দৈনন্দিন কাজেও ব্যবহার করতে পারবে।

উপকূলীয় এলাকায় খাওয়ার পানি নিয়ে কাজ করেন শ্যামনগরস্থ সেসরকারি এনজিও সংস্থা লিডার্স নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মন্ডল বলেন, উন্মুক্ত জলাশয়ের উপর মানুষের নির্ভরশীলতা কমছে। এখন সরকারি-বেসরকারিভাবে খাবার পানির সমস্যা সমাধানে এলাকার মানুষের মধ্যে ট্যাংক, ফিল্টার, ড্রামসহ বিতরণসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সাথে পিএসএফ, রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেমের ব্যবহার বেড়েছে। যেসমস্ত এলাকায় টিউবওয়েলে মিষ্টি পানি ওঠে, সেসব জায়গায় পাইপলাইনের মধ্যে খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

সাতক্ষীরা জেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম জানান, শ্যামনগরের ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টি ইউনিয়নের কিছু কিছু জায়গায় অনেক চেষ্টার পর ডিপ টিউবওয়েল সফল হয়েছে। এটা আশাজনক হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। তিনি বলেন, শ্যামনগরের জন্য সবচেয়ে উপযোগী আরও প্লান্ট ও সিটকো প্লান্ট। এর মধ্যে আরও (রিভার্স ওরস্যালাইন) প্লান্ট দ্রুত লবণ পানি সুপেয় পানিতে রূপান্তরে সক্ষম এবং সিটকো প্লান্ট আর্সেনিক ও আয়রন দূরীকরণে বেশ কার্যকরী। এই প্লান্ট অত্যন্ত ব্যয়বহুল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যয়বহুল হলেও এর মাধ্যমে পানি সংশোধন করে ইউনিয়নে মানুষের খাওয়ার পানি সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব। তাছাড়া ইতিপূর্বে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে পিএসএফ স্থাপন করা করা হলেও স্থানীয়রা সেগুলো রক্ষাণাবেক্ষণে উদাসীন হয়ে পড়ে। ফলে সেগুলোও অকেজো হয়ে পড়ছে। //আরএস//

  • সর্বশেষ
  • পঠিত