ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

মহাসড়কে পৌরসভার অবৈধ ভাগাড়

  কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০১৮, ১৮:০৬

মহাসড়কে পৌরসভার অবৈধ ভাগাড়

শহরতলীর বাড়াদি এলাকায় কুষ্টিয়া পৌর সভার নির্ধারিত ভাগাড় রয়েছে। কিন্তু সেখানে নাকি আর ময়লা-আবর্জনা ফেলার জায়গা নেই। এই অজুহাত দেখিয়ে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ি ও কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক সংলগ্ন সরকারি জায়গা দখল করে অবৈধ ভাগাড় বানিয়ে সেখানে বছরের পর বছর ধরে ময়লা-আবর্জনা ফেলে আসছে কুষ্টিয়া পৌরসভা। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের সমস্ত আবর্জনা এমনকি কাটা হাত, পাসহ শরীরের পচে যাওয়া বিভিন্ন অংশও পৌরসভা ট্রাকে করে নিয়ে এসে অবৈধভাবে গড়ে তোলা এ দুটি ভাগাড়ে ফেলছে।

অনেক সময় এসব ময়লা আবর্জনা মহাসড়কের কিছু অংশে পড়ে থাকতেও দেখা যায়। বছরের পর বছর কুষ্টিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি মহাসড়কে প্রতিদিন ট্রাককে ট্রাক ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে দুর্গন্ধে পথচারীসহ যান-বাহনের যাত্রীদেরকেও নাক চেপে ধরে মহাসড়কের এই অংশ পার হতে হয়। ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে ইতিমধ্যে মহাসড়কের পাশে থাকা অনেক গাছ মারা যাচ্ছে। মারাত্মক পরিবেশ দূষণের কবলে পড়েছে কুষ্টিয়া শহরসহ আশে-পাশের এলাকা।

নগরের শোভা বর্ধন, সৌন্দর্য রক্ষা,নাগরিকদের পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পৌর কর্তৃপক্ষের অন্যতম দায়িত্ব এবং কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। অথচও সেই কুষ্টিয়া পৌরসভা রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করে চলেছে। সূত্র জানায়, সওজ কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় কুষ্টিয়া পৌরসভাকে মহাসড়কের গা ঘেঁষে তাদের জায়গাই ময়লা-আবর্জনা না ফেলার জন্য অনুরোধ করেও কোন ফল পাচ্ছে না। এমনকি জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সর্বোচ্চ ফোরাম সমন্বয় কমিটির সভায় বার বার এ বিষয়ে অভিযোগ করেও কোন লাভ হচ্ছে না। কুষ্টিয়া পৌরসভা সব কিছুকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে মহাসড়ক দুটিকে ভাগাড় বানিয়ে ময়লা-আবর্জনা ফেলেই যাচ্ছে। মহাসড়ক দুটিতে প্রতিদিন ট্রাককে ট্রাক ফেলা ময়লা-আবর্জনা আশে-পাশের জায়গা-জমিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ার কারণে কৃষি জমিতে চাষাবাদে ব্যাহত হচ্ছে। দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ।

কুষ্টিয়া পৌরসভা কুষ্টিয়া-রাজবাড়ি ও কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে সরকারি জায়গা দখল করে এ ভাগাড় বানিয়েছে। শহরের মোল্লাতেঘড়িয়া থেকে আনুমানিক দেড় কিলোমিটার দূরে মন্ডল ফিলিং ষ্টেশন ও বিসিক শিল্প নগরীর সামনের দিকে মহাসড়কের পাশে ফেলা হচ্ছে পৌরসভার এ বর্জ্য।

জানা গেছে, দীর্ঘ দিন ধরে সড়ক বিভাগের জায়গায় মহাসড়কের আনুমানিক ৩০০ মিটার দীর্ঘ ও ২০০ মিটার প্রস্থ আকারের জায়গায় এ ময়লা ফেলা হচ্ছে পৌরসভার গাড়িতে করে। ময়লা ও আবর্জনার মধ্যে নাগরিকদের বাসা-বাড়ির অর্বজনার পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বর্জ্য।

এছাড়াও এখানে ময়লা ফেলার পাশাপাশি বিশেষ করে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ি মহাসড়কটির এই স্থানটি অনেকটাই নিরিবিলি হওয়ায় অপরাধীরা নির্বিঘ্নে বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে সেখানে বেশকিছু ছিনতাই এর ঘটনাও ঘটেছে। খোদ পৌরসভা এই দুটি মহাসড়কের পাশের জায়গা দখল করে বর্জ্য ফেলায় আশেপাশের কেউ মুখ খুলতে সাহস পাই না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা এখানে ব্যবসা করে খায় কিছু বললে পৌর কর্তৃপক্ষের রোষানলে পড়তে হবে তাই এই ভয়ে সব কিছু নিরবে সহ্য করি। সজিব নামের এক পথচারী জানান, এই রাস্তা দিয়ে পথ চলতে গেলে দুর্গন্ধে দম বন্ধ হয়ে যায়।

কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, ‘পৌরসভা বিনা অনুমতিতে আমাদের রাস্তা ও রাস্তাসংলগ্ন জায়গা এক প্রকার দখল করে ময়লা-আবর্জনা ফেলে আসছে। এতে আমরা ভীষণ বেকায়দায় পড়েছি। রাস্তার অর্ধেক অংশে ময়লা ফেলায় ওই এলাকায় যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা পৌরসভাকে জানিয়েছি এবং জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় একাধিকবার বিষয়টি তুলেছি। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি।’ সম্প্রতি মহামান্য রাষ্ট্রপতির আগমন উপলক্ষে পৌরসভা বালি দিয়ে এই ময়লার স্তুপ লেভেল করেছিল মাত্র। তিনি যাওয়ার পরে আবার ময়লা ফেলছে।

ময়লার স্তুপ থাকায় সড়কে পানি জমে সড়কের বেজমেন্ট নষ্ট করছে। এতে করে মহা সড়কের স্থায়িত্বের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তিনি বলেন আমরা খুব শীঘ্রই পৌর কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে চিঠি দেব। তাদের নির্দিষ্ট ভাগাড় থাকতে এখান ময়লা ফেলে পরিবেশ নষ্ট করার কোন যোক্তিকতা দেখি না।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী বলেন, ভাগাড়ের জায়গায় ময়লা ফেলতে ফেলতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। যে কারণে অন্য কোন উপায়ান্তর না থাকায় বাধ্য হয়েই ওই দুটি স্থানে ময়লা ফেলতে হচ্ছে। আমরা জায়গা কেনার চেষ্টা করছি। জায়গা পেলে আমরা আর ওই স্থানে ময়লা ফেলাবো না।

//আরএস//

  • সর্বশেষ
  • পঠিত