ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

আবারো আসছে ইভিএম

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০১৮, ১৮:১৫  
আপডেট :
 ২২ মার্চ ২০১৮, ১৮:৪৭

আবারো আসছে ইভিএম

বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে নির্বাচনে ই-ভোটিং সিস্টেম প্রবর্তনে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। স্থানীয় সরকারের বেশকিছু নির্বাচনে স্বল্প পরিসরে ব্যবহৃত ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) নানা ক্রটি পরিলক্ষিত হওয়ায় বিতর্কিত হয়ে পড়ে বুয়েট নির্মিত এ প্রযুক্তিটি। যেকারণে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার থেকে বিরত থাকে কমিশন।

সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতেও এটির ব্যবহার বন্ধ ছিল। এবার সেই ইভিএমকেই সম্পূর্ণ সুরক্ষিত করে নিয়ে আসা হচ্ছে। ভোটে সময় বাঁচানোর পাশাপাশি ১০ ধরনের সুবিধা সম্বলিত নতুন উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তিটি ব্যবহারে নির্বাচন কমিশনের কারিগরি কমিটি এরইমধ্যে সুপারিশ করেছে। কমিশনও এবিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে বলে জানা গেছে।

সবকিছু ঠিক থাকলে শিগগিরই নতুন প্রযুক্তির এই ভোটগ্রহণ যন্ত্র তৈরির কাজ শুরু হবে। তবে, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই প্রযুক্তি ব্যবহার হবে কীনা এবিষয়ে কমিশন এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

ইসি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পুরনো ইভিএমে ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে ইসির জন্য ৬ ধরনের ঝুঁকি থাকতো। এগুলোর মধ্যে ভোটারের পরিচয়পত্র ও আঙ্গুলের ছাপ পরীক্ষার ব্যবস্থা ও প্রদত্ত-গৃহিত ভোটের কাগজী রেকর্ড সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকা, কন্ট্রোল ইউনিটের যান্ত্রিক ক্রটির কারণে ভোটের ফল প্রকাশ করতে না পারা এবং মেশিনের ব্যাটারি সংশ্লিষ্ট সমস্যা। তাই পুরনোকে বিদায় জানিয়ে সুরক্ষিত ইভিএমকে স্বাগত জানানো হচ্ছে। এতে ভোটে ১০ ধরনের সুবিধা সংযোজন করা হচ্ছে। এর সঙ্গে গ্রহণ করা হয়েছে ব্যয় সংকোচন নীতি। এর ফলে ঝুঁকি নেমে আসবে শূন্যের কোটায়।

তথ্যমতে, ১/১১ সরকারের সময় এটিএম শামসুল হুদা কমিশন স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএমের প্রচলন ঘটান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহায়তায় প্রথমে ২০১০ সালে এ প্রযুক্তির ৫৩০টি কেনা হয়। নির্বাচনে ব্যবহার করতে গিয়ে দেশের প্রধান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুত করা ইভিএমে নানা যান্ত্রিক ক্রটি ধরা পড়ে। পরে ২০১১ সালে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) প্রস্তুত করা ৭০০ ইভিএম কিনলেও এগুলো পুরোপুরি ক্রটিমুক্ত ছিল না। হুদা কমিশন ২০১১ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ২১ নং ওর্য়াডে বুয়েটের ইভিএম ব্যবহার করে। পরে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন, নারায়নগঞ্জ সিটি, টাঙ্গাইল পৌরসভা ও নরসিংদী পৌরসভায় এ প্রযুক্তি ব্যবহার হয়।

ক্রটি ধরা পরার পরও হুদা কমিশনের বিদায়ের পর ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেয়া রকিব উদ্দিন কমিশন রাজশাহী সিটিতে ২০১৩ সালে ইভিএম ব্যবহার করে পুরো বিতর্কের মধ্যে পড়ে যান। পরবর্তীতে মেয়াদপূর্ণের আগে আর ইভিএম ব্যবহার করেননি তিনি।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে কেএম নুরুল হুদা নের্তৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন দায়িত্বে এসে কমিটি করে পুরনো ইভিএমকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। নতুন প্রবর্তিত ইভিএমে রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ১৪১ নং কেন্দ্রের ৬টি কক্ষে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এটিও পুরোপুরি ক্রটিমুক্ত হয়নি। পরবর্তীতে সুরক্ষিত ইভিএম তৈরিতে যত ধরণের সম্ভাব্য উপায় রয়েছে তা খতিয়ে দেখে মাঠে নেমে পড়ে ইভিএমের কারিগরি টিম।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ইসির কারিগরি টিম ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের সুবিধা, ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা এবং মানসম্মত প্রযুক্তির উদ্ভাবন ঘটানোর সুপারিশ ও পরামর্শ দেয়। গত ১৭ জানুয়ারি ইভিএম বাস্তবায়ন কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে কারিগরি কমিটি তাদের সিদ্ধান্ত জানায়। সর্বশেষ গত ৬ ফেব্রুয়ারি কারিগরি সাব-কমিটি তাদের সুপারিশ পেশ করে।

ইভিএমের কারিগরি কমিটির কার্যপত্রের তথ্যমতে, এই প্রযুক্তি নির্বাচনের ভোটে ব্যবহারের মাধ্যমে ১০টি সুবিধা নিশ্চিত হবে। সুবিধাদির মধ্যে রয়েছে- ভোটগ্রহণের আগে মেশিন চালু না হওয়া ও মেশিন ছিনতাই হলেও অবৈধ ভোটদান বন্ধ, পাসওর্য়াড সুরক্ষিত থাকায় অনুমোদিত ব্যক্তির বাইরে মেশিন চালু করা সম্ভব নয়, নির্বাচনে পছন্দমত ভোট কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েও ভোট কারচুপি না করতে পারা, ভোট শুরুর আগে-পরে শূন্য ভোটিং ও প্রিন্ট করার সুবিধা এবং স্বয়ংক্রীয়ভাবে ফলাফল প্রিন্ট, ঘোষণা ও বিতরণ সম্ভব।

এছাড়া ইভিএমকে ব্যবহার বান্ধব করার লক্ষ্যে ভোটার সনাক্তকরণ মেশিন এবং ভোটিং মেশিন দুটি একত্রিত করে একটি মেশিনে রুপান্তরিত করা, ব্যালট ইউনিট ক্যানসেল বোতামটি বাদ দেয়া, ব্যালট ইউনিটের ভোট প্রদানের বোতামগুলো বড় আকারের ও ভিন্ন রঙের করা, ভোট সম্পন্ন হওয়ার পর ভোটারের সন্তুষ্টির জন্য ধন্যবাদ শব্দ যুক্ত করা, ইভিএমের কাঠামো, টাচ স্ক্রীন, কি-বোর্ড এবং ভোটদান বোতামগুলোর মান উন্নত করা, ভোটার ভেরিফিকেশন মেশিনের সঙ্গে যুক্ত প্রোজেক্টরটি মেশিনের মধ্যে সংযুক্ত (ইন বিল্ট) করা, কিউআর কোড মুদ্রণ বাদ দিয়ে একটি মেশিনের মাধ্যমে ভোটার সনাক্ত করা, ইভিএমের পুরো প্রোটোকল, বিজনেস প্রসেস, সোর্সকোড ইত্যাদির উপর রাইট আপ প্রস্তুত করা ইসির সার্বিক তত্বাবধানে সংরক্ষণ করা এবং ইভিএম নিরাপদে ব্যবহারের জন্য মেশিন অনুযায়ী সুরক্ষা বক্স ব্যবহার করা যাবে।

নতুন ইভিএমের প্রতি ভোটারদের আস্থা অর্জনের জন্য ইভিএম সংক্রান্ত কারিগরি কমিটি বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইভিএমের আইন-বিধি সংশোধন করা, ভোটগ্রহণের সময় যন্ত্রে যান্ত্রিক ক্রটি এড়ানোর জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে অতিরিক্ত কয়েকজন সহকারি প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগ রাখা, ভোটারদের আস্থা অর্জনের জন্য সাময়িক ইভিএম মেশিনে কাগজে মুদ্রিত ব্যালট পেপার রাখা এবং ভোটদানের পর পরই ডিজিটাল ব্যালটের পুরো স্ক্রীনজুড়ে তার প্রদানকৃত ভোটের প্রতীক প্রদর্শন করার ব্যবস্থা রাখা।

এসআইএস/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত