ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

উৎকোচ না দিলে বদলি, সহকর্মীর টাকাও নিজ পকেটে

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০১৮, ২১:৫০

উৎকোচ না দিলে বদলি, সহকর্মীর টাকাও নিজ পকেটে

চাকরি বিধি লঙ্ঘন ও কর্মস্থলে না থেকে মাসের পর মাসের বেতন-ভাতা উঠিয়ে নেয়ার দায়ে বিভাগীয় মামলা চলমান থাকা বাংলাদেশ পিডব্লিউডি ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির সাধারন সম্পাদক আলী আকবর সরকারের বিরুদ্ধে এবার সহকর্মীদের সাথে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। দায় এড়াতে নানা কৌশল অবলম্বন করেও শেষ পর্যন্ত রেহাই মেলেনি ওই কর্মকর্তার।

প্রতারনার মাধ্যমে নেয়া টাকা আদায় ও বিশ্বাসভঙ্গের শাস্তি দিতে এতোদিন মিতালী করে চলা সমিতির সেই সদস্যরাই লাঞ্ছিত করেছেন তাকে। লন্ডভন্ড হয় সেগুনবাগিচায় গণপূর্ত ভবনের সেই ঐতিহ্যবাহী সমিতি কার্যালয়ও।

ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের অভিযোগ, সংগঠনের সম্মেলন করার নামে সমিতির কয়েক হাজার সদস্যের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের বাধ্যতামূলক চাঁদা আদায় করে নিয়েছেন ওই নেতা। কয়েকদিন পর পরই ঢাকা ছাড়া অন্যসব বিভাগীয় শহরে সংগঠনের ‘বিভাগীয় সম্মেলন’ আহবান করে তাদের নিকট থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়েছে।

কোনো সদস্য চাঁদা দিতে অপরারগতা প্রকাশ করলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশে তাকে বদলি করা হতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে। যে কারণে যতো পরিমাণ চাঁদাই তাদের উপর ধরা হতো তারা দিতে বাধ্য হতেন। অনেককে আবার ভালো জায়গায় পোস্টিং প্রদানের আশ্বাস দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন।

সর্বশেষ হওয়া চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্মেলনেও বড় অঙ্কের টাকা তাদের নিকট থেকে নেয়া হয়েছে অভিযোগ করেছেন একাধিক ডিপ্লোমা প্রকৌশলী। তারা বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্মেলন হলেও এতে ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, সিলেট, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুরসহ সারাদেশের অধিকাংশ জেলা থেকেই ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের চাপ প্রয়োগ করে এবং বদলির ভয় দেখিয়ে চট্টগ্রামে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। বিধি অনুসারে, এসব কর্মকর্তাদের কর্মস্থল ত্যাগের আগে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন থাকলেও তাদের সেই সুযোগটুকুও দেয়াও হয়নি।

এদিকে সদস্যদের নিমাই স্কেল (বর্ধিত বেতন স্কেল) পাইয়ে দেয়ার নামে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে প্রায় ৭০ লাখ টাকা আদায় করে আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে।

সমিতির বেশ কয়েকজন সদস্য জানান, সমিতির সাধারন সম্পাদক হিসেবে সদস্যদের বর্ধিত বেতন স্কেল পাইয়ে দিতে উৎকোচ লাগবে বলে তিনি এই টাকা নিয়েছেন। সদস্যরা নিজেদের নেতা হিসেবে তাকে বিশ্বাস করে টাকা দিয়েছেন। কিন্তু সেই টাকা তিনি কোথাও না দিয়ে নিজের পকেট ভারি করেছেন। এখন নিমাই স্কেল তো দূরে থাক, দেয়া টাকাটাই ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না।

তারা অবিযোগ করেন, সমিতির ফান্ডে থাকা টাকাও লুটে নিয়েছেন আলী আকবর সরকার। সমিতি কার্যালয় সংস্কারের নামে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাত করেন তিনি। সদস্যরা এসব বিষয়ের সমাধান চাইলে তিনি বরাবরই এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাকে লাঞ্চিত করার ঘটনা দীর্ঘদিনের ক্ষোভেরই বহি:প্রকাশ বলে জানান তারা।

এদিকে দাপ্তরিক নির্দেশ অমান্য ও বিধি লঙ্ঘনের দায়ে পিডব্লিউডি ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির এই নেতার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও রুজু হয়েছে বলে জানা গেছে। সেইসঙ্গে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

সংশ্লিস্টরা জানান, ২০০৪ সালে চাকরি জীবন শুরুর পর থেকেই দাপ্তরিক নির্দেশনা অমান্য ও লাগাতার চাকরি বিধি লঙ্ঘন করে আসছেন আলী আকবর সরকার। এক যুগের চাকরি জীবনে যেমন নানা নেতিবাচক কর্মকান্ডের সাথে লিপ্ত হয়েছেন তেমনি ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে উপার্জন করেছেন কাড়ি কাড়ি টাকা। ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর তার প্রভাবে তটস্থ হয়ে পড়েন উর্দ্ধতনরাও। চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে একের পর এক অনিয়ম ও লুটপাট শুরু করেন তিনি। যেকারণে কর্তৃৃপক্ষ ২০১৬ সালের ০৯ অক্টোবর তাকে সাভার গণপূর্ত বিভাগ থেকে খুলনা গণপুর্ত বিভাগে বদলীর আদেশ জারী করে। কিন্তু দাপুটে এই কর্মকর্তা দাপ্তরিক নির্দেশ লঙ্ঘন করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে চার্জ নেননি।

যে কারণে পরদিন ১০ অক্টোবর কর্তৃপক্ষ তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করেন। এর পরপরই ধূর্ত এই কর্মকর্তা তার বদলীর আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রীট করেন। একমাস মামলা চলার পর ২২ নভেম্বর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগ তার রীট খারিজ করে দেন। এরপর তিনি দীর্ঘ ৬ মাস কোথাও যোগদান করেননি। অথচ এই সময়ে তিনি মাসিক বেতন ভাতাদি উত্তোলন করেছেন।

এসব বিষয়ে আলী আকবর সরকারের সাথে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্ঠা করলেও সাংবাদিক পরিচয় জেনে তিনি কথা না বলে ফোন কেটে দেন।

এসআইএস/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত