ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

আইনি জটিলতায় চম্পা

  ঝালকাঠি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৫ মে ২০১৮, ১৮:৩০

আইনি জটিলতায় চম্পা

ঝালকাঠি থেকে ভারতে পাচার হওয়া চম্পা আক্তার রহিমাকে (১৭) ফিরে পেতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তার মা ফাতেমা বেগম কমলি। ভারতের ব্যাঙ্গালুরু রাজ্যের একটি সেইভ হোমে থাকা মেয়েটি তিন বছরেও উদ্ধার না হওয়ায় চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে স্বজনদের।

মামলার আসামিরা আদালত থেকে জামিন নিয়ে মেয়েটির স্বজনদের ভয় ভীতি দেখাচ্ছে বলে মামলার বাদী ফাতেমা বেগমের অভিযোগ। মেয়েটিকে ফিরে পেতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কূটনৈতিক তৎপরতার প্রয়োজন বলে মনে করেন বাদীর আইনজীবী।

মামলার আসামিরা হচ্ছেন- খুলনার শেনহাটা খালিশপুর গ্রামের মোমিন হাওলাদারের স্ত্রী হাসিনা বেগম, ঝালকাঠি বাসন্ডা গ্রামের কবির হোসেনের স্ত্রী ঝুমুর আক্তার, একই গ্রামের ইন্দ্রজিৎ সিকদারের স্ত্রী মিনতি সিকদার।

ঝালকাঠি পৌর এলাকার বাসন্ডা গ্রামে স্বপন হাওলাদারের মেয়ে চম্পা আক্তার রহিমাকে ২০১৫ সালের ৫ জুন খুলনার খালিশপুর শোনহাটা এলাকার হাছিনা বেগম মোটা বেতনে কাজের কথা বলে কৌশলে ভারতে পাচার করে একটি পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয়। তখন চম্পার বয়স ছিলো ১৪ বছর। এ ঘটনায় চম্পার মা ফাতেমা বেগম ঐদিনই ঝালকাঠি সদর থানায় তিনজনকে আসামি করে মানব পাচার আইনে একটি মামালা করেন। পরবর্তীতে মেয়েটিকে ভারতীয় পুলিশ পতিতালয় থেকে উদ্ধার করে আদালতের মাধ্যমে একটি সেইভ হোমে হস্তান্তর করে। মেয়েটির বিরুদ্ধে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে মামলা হওয়ায় তার দেশে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পরেছে। দীর্ঘ আইনি লড়াই চালিয়েও মেয়েকে ফিরে না পেয়ে হতাশ হয়ে পরেছেন চম্পার মা। ২০১৫ সালের ২ ডিসেম্বর ভারতের বেঙ্গালুরু রাজ্যের জাস্টিস এন্ড কেয়ার অফিসের উদ্যোগে ভারতীয় পুলিশের সহায়তায় চম্পাকে সেই পতিতালয় থেকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ চম্পাকে উদ্ধার করে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের অপরাধে একটি মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে বেঙ্গালুরু শাওকাস্ত্রা নামক একটি সেইভ হোমে হস্তান্তর করে। চম্পার নামে সে অনুপ্রবেশের মামলাটি চলমান থাকায় ও আইন জটিলতার কারণে তাকে বাংলাদেশে ফেরানো যাচ্ছেনা।

তদন্তকারী কর্মকর্তা আরো বলেন, চম্পা আক্তার রহিমা প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি ঢাকার গুলশানস্থ বাংলাদেশ জাস্টিস এন্ড কেয়ার নামক একটি সংস্থা তদারকি করছে। এদিকে গত তিন মাস পূর্বে মামলার ১ নং আসামি এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ঝালকাঠি কারাগারে বন্দি ছিল। কিন্তু সে চম্পার অবস্থান সম্পর্কে আদালতকে কোন সুস্পষ্ট ধারণা দিতে পারেনি। সম্প্রতি হাসিনা বেগমসহ মামলার অন্যান্য আসামিরা জামিনে মুক্তি পেয়ে বাদীকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিচ্ছে।

এ বিষয়ে মামলার বাদী চম্পার মা ফাতেমা বেগম কমলি বলেন, তিন বছর হলো মেয়েটি ভারতের সেইভ হোমে আছে। আমার কোল শূন্য করে আসামি হাছিনা বেগম চম্পাকে ভারতে পাচার করে দেয়। আজ পর্যন্ত এ মামলার বিচার পাইনি। আসামিরা জামিনে মুক্তি পেয়ে আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে। আমার মেয়েটি ভারত থেকে ফিরতে পারবে কিনা তাও আমি জানিনা। আমার মেয়েকে ফিরে পাওয়ার বিষয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য কামনা করছি।

এ বিষয়ে বাদীর আইনজীবী বনি আমিন বাকলাই বলেন, পুলিশের তদন্ত ও বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি মেয়েটি ভারতের বেঙ্গালুরু রাজ্যের একটি সেইভ হোমে আছে। ১নং আসামি হাছিনা বেগম জামিন শুনানির সময় আদালতে এই মর্মে মুচলেকা দেন যে আগামী ৩ মাসের মধ্যে চম্পার অবস্থান জানাতে ও তাকে উদ্ধারে সহায়তা করবে। মেয়েটি পতিতালয় থেকে উদ্ধার হওয়ার পরেও ভারতীয় পুলিশের অনুপ্রবেশ মামলাটি চম্পার বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি আইনি জটিলতায় ফেলেছে। এই মূহুর্তে চম্পাকে বাংলাদেশে ফেরাতে হলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক তৎপরতা প্রয়োজন।

বিএএফ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত