ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

‘আমাদের কান্না প্রধানমন্ত্রীর চোখে পড়ে না’

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৬ মে ২০১৮, ১৬:২৪  
আপডেট :
 ২৬ মে ২০১৮, ১৬:৩০

‘আমাদের কান্না প্রধানমন্ত্রীর চোখে পড়ে না’

‘প্রতি বছরই এই জায়গায় এসে মায়েদের কান্নার সাথে সাথে আমাদেরও কাঁদতে হয়। আমাদের কান্না প্রধানমন্ত্রীর চোখে পড়ে না। কারণ, গুম হওয়া স্বজনদের কারো সাথে প্রধানমন্ত্রীর কোন আত্মীয়তা নেই।’

শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘আন্তর্জাতিক গুম সপ্তাহ’ উপলক্ষে ‘মায়ের ডাক’ এর উদ্যোগে আয়োজিত এক মানববন্ধনে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এসব কথা বলেছেন।

গুম হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন মারুফা ইসলাম ফেরদৌসির সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন, জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা।

এছাড়া গুম হওয়া ব্যক্তির পরিবারগুলোর মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাইফুল রহমান সজিবের বাবা শফিকুর রহমান, আব্দুল কাদের মাসুমের মা আয়েশা আলী, তরিকুল ইসলাম তারার স্ত্রী শামসুন্নাহার বেবী, মো. নুর আলমের স্ত্রী রিনা আলম, মাহবুব রহমান সুজনের ভাই জাহিদ খান, কাজী ফরহাদের ভাই আমান, ছাত্রলীগ রামপুরা থানার সভাপতি এস.এম মোয়াজ্জেম হোসেন তপুর মা সালেহা বেগম, ড্রাইভার কাওসারের শিশু কন্যা লামিয়া আক্তার মীম, মাহবুবুর রহমান রিপনের ভাই মোস্তাফিজুর রহমান শিপন, আমিনুল ইসলাম জাকিরের ভাই আলমগীর হোসেন আলিক, আদনান চৌধুরীর মা কানিজ ফাতেমাসহ প্রমুখ।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এখানে ছাত্রলীগের তপুর মা সালেহা বেগম রয়েছেন। তিনি প্রায়ই বলেন, আমরা তো আওয়ামী লীগ করি, আমার পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগে ভোট দেয় এবং আমার ছেলে রামপুরা থানা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলো। তাকে কেন গুম করা হলো ? এর জবাব কি প্রধানমন্ত্রী জানেন? এখানে যত পরিবার রয়েছে তাদের কেউ মিছিল করতে গিয়ে গাড়ি ভাঙ্গেনি, সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের কোন বক্তব্য দেয়নি। তারপরও তারা গুম হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহচর হিসেবে পরিচিত কুমিল্লার মতিনের ছেলে সেও যুবলীগ করতো। আমাদের রেলমন্ত্রীর অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিল। তাকেও গুম করা হয়েছে।

নাগরিক ঐক্যের এই আহ্বায়ক বলেন, গুমের ক্রন্দনে যখন আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে ঠিক সেই সময় মাদক নিয়ন্ত্রণের নামে প্রতিদিন ক্রসফায়ারে সাধারণ মানুষদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। মাদক সম্রাটদের পক্ষে সাফাই গাইছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখানে তারা গ্রেপ্তার হবে কিভাবে? রমজান মাস নাকি সংযমের মাস। এই মাসেই মানুষ হত্যায় নতুন করে মেতে উঠেছে সরকার। আর সবকিছুর মূল আগামী একাদশ নির্বাচন। বিনা চ্যালেঞ্জে আবার ক্ষমতায় যাবার জন্য এইসব তালবাহানা করছে। কিন্তু দেশবাসী আর ছাড় দেবে না। যেকোন মূল্যে এই সরকারকে হটিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

তিনি দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার আহ্বান জানান এবং পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের আগে গুম হওয়া স্বজনরা যেন তাদের পরিবারের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারে সেই আহ্বান জানান।

মানববন্ধনে সভাপতি মারুফা ইসলাম ফেরদৌসি বলেন, আমার মা এখানে আজ আসার কথা ছিল। সে কাঁদতে কাঁদতে কুজো হয়ে গেছে। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। মায়ের ডাকে সে আজ উপস্থিতও হতে পারলো না। তার ছোট্ট নাতি সুমনের ছোট্ট মেয়ে আরোয়াকে বললো আমি আর তুমি পাসপোর্ট করে ওপারে চলে যাবো। ওখানে যতগুলো কারাগার আছে খুঁজে খুঁজে তোমার বাবাকে বের করে আনবো। আপনারা জানেন সুমনের মতো আজকে এখানে যারা উপস্থিত রয়েছেন সবারই একই অপেক্ষা। কারো বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই। আমরা আমাদের প্রিয় মানুষকে কাছে পেতে চাই। তাদের সাথে ঈদ করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী আপনি তো আপনার স্বজনকে নিয়েই ঈদ করেন। তবে আমাদেরকে কেন ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত করবেন।

শিশু কন্যা লামিয়া আক্তার মীম বলেন, আমি আমার বাবাকে ফেরত চাই। বাবা আমাকে স্কুলে নিয়ে যাবে। ঈদের জামা কিনে দেবে। অন্যদের মতো বাবার হাত ধরে আমিও হাঁটতে চাই। হাসিনা আন্টি আপনি আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন।

আফরোজা ইসলাম আখি বলেন, হয় গুম হওয়া সবাইকে ফিরিয়ে দিন না হয় আমাদের সবাইকে মেরে ফেলুন। এভাবে তিলে তিলে মৃত্যুবরণ না করে একসাথে মরে যেতে চাই। এত কষ্ট আর সহ্য হয় না। সূত্রাপুরে গুম হওয়া পারভেজের ছোট্ট মেয়ে হৃদি আজ খুবই অসুস্থ্য। ঠিকমত খেতে পারে না।

রানার বোন পাগল হয়ে গেছে। আমরা এইসব দৃশ্য আর দেখতে চাই না। আমার বৃদ্ধ মা হাজেরা বেগম রাতের অন্ধকারে প্রলাপ বকে। গভীর রাতে হঠাৎ হঠাৎ দরজা খুলে রাখে এই বুঝি তার প্রিয় সন্তান সুমন ঘরে ঢুকবে। কিন্তু বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে কারো সন্তান কারো ঘরে ঢুকছে না। আল্লাহ আমাদেরকে নিয়ে যাও নাহলে আমাদের ভাইদেরকে ফিরিয়ে দাও।

ডিপি/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত