ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

খোলা আকাশের নিচে তারা যখন ঘুমে বিভোর

  ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০১৮, ১১:২৩

খোলা আকাশের নিচে তারা যখন ঘুমে বিভোর

সারা দিনের ক্লান্তি শেষে ঘুমানোর জন্য সকল মানুষেরই চাই একটু নিশ্চিন্ত ঠাঁই। মনের মত এক টুকরো বিশ্রামস্থল। কেউ ঘুমায় অট্টালিকায়, আবার কেউবা কুঁড়েঘরে। যার যেমন সামর্থ। কিন্তু ঠাকুরগাঁওয়ের কিছু হোটেল শ্রমিক ও ছিন্নমুল মানুষের জন্য রয়েছে অন্যরকম ব্যবস্থা। তাই পুরাতন বাসষ্ট্যান্ডে গেলেই দেখা মেলে ভিন্ন চিত্রের।

এখানে অট্টালিকাও নেই আবার নেই কুঁড়েঘরও। এরপরও আরাম করে খোলা আকাশের নিচে দিব্বি ঘুমাচ্ছেন একদল মানুষ যারা সারাদিন হোটেল বা অন্য কোথাও শ্রম বিক্রির কাজে ব্যস্ত থাকেন।

মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) দিনগত রাত ২টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, শুনশান ঠাকুরগাঁওয়ের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের গোল চত্বরে হোটেল শ্রমিক ও ছিন্নমুল কয়েকজন মানুষ ঘুমিয়ে রয়েছে। দিনের কোলাহলের বিপরীতে রাতে কয়েকজন মানুষের সাথে দেখা মেলে। তারা জানান, রাতে বেশিরভাগ সময় হোটেল বন্ধ করে গোল চত্বরেই ঘুমিয়ে পড়েন অনেকেই।

রাতে জেগে শহর পাহারা দেন জাকির। তিনি জানান, শহরে বিভিন্ন হোটেলে যারা কাজ করে বা সারাদিন অন্যত্র শ্রম দেয়, তারা থাকার জায়গা না পেয়ে বাসস্ট্যান্ডের গোল চত্বরে খোলা আকাশের নিচেই ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে পড়ে। এসব লোকজন যা রোজগার করে তা দিয়ে ভাড়া দিয়ে কোথাও থাকার সামর্থ নেই তাদের। এজন্য বাধ্য হয়েই খোলা আকাশের নিচে রাত পার করে থাকে। রাত শেষে আবার প্রতিদিনের মতই কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

পাহাদার জাকির হোসেন পেটের দায়ে দীর্ঘদিন ধরে দোকান পাহারার কাজ করছেন। তিনি বলেন, মাসে দোকান হতে ইনকাম হয় ৩ হাজার টাকার মতো। এ দিয়ে তো ভাড়া থাকা যায় না। তাই কোনোভাবে জীবন চালিয়ে নিচ্ছেন জাকির মিয়া

বৃষ্টির সময় কি করে ঘুমান এসব মানুষেরা? এমন প্রশ্নের জবাবে জাকির বলেন, তখন কোনও বিল্ডিংয়ের সিঁড়ির নিচে চলে যায় খোলা আকাশের নিচে ঘুমান মানুষেরা।

ট্রাক শ্রমিক হোসেন আলী জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এমন চিত্র নিত্যদিনের। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষেরা সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত শরীর বিছিয়ে দেয় খোলা কোনও স্থানে। ক্লান্তির কারণে তখন আর বাসা, বাড়ি বা অট্রলিকার কথা তাদের মাথায় আসে না। অনেক কষ্ট হয় এমন চিত্র চোখে পড়লে। সরকার যদি এ সব মানুষের জন্য শহরে থাকার ব্যবস্থা করতো তাহলে শ্রমজীবি মানুষেরা শত কষ্টের মাঝেরও একটু আস্থা খুজেঁ পাবে।

ঠাকুরগাঁও সমাজসেবক আব্দুল লতিফ জানান, খাদ্য,বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা নাগরিক অধিকার যা দেশের সংবিধানে উল্লেখ্য রয়েছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। যেখানে মানুষকে খোলা আকাশের নিচে ঘুমাতে হয় সেখানে একজন মানুষের জীবন কতটুকু নিরাপদ? এ প্রশ্ন সমাজসেবক আব্দুল লতিফের।

তার মতে, সরকার ও বিভিন্ন বে-সরকারি সংস্থা যদি এ সব গৃহহীন মানুষের জন্য কোন উদ্যাগ গ্রহন করে তাহলে দিন শেষে তারা ঘুমানোর জন্য শান্তির জায়গা খুঁজে পাবে। একই সঙ্গে একটি সুন্দর দেশ ও সমাজ গড়তে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ারও আহবান জানান তিনি।

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত