ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

নতুন বাবা-মা পেলো পিতৃহীন নবজাতক স্বাধীন

  কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০১৮, ১৮:২৭

নতুন বাবা-মা পেলো পিতৃহীন নবজাতক স্বাধীন

কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে জন্ম নেয়া পিতৃহীন স্বাধীনের নতুন ঠিকানা হলো সন্তানহীন দিনমজুর পরিবারের মাঝে। মমিনুল ইসলাম (৩৫) ও মৌসুমি আক্তারের (৩০) দশ বছরের দাম্পত্য জীবনে ছিল না কোন সন্তান। আর এতে করে স্বাধীন পেলো তার নতুন বাবা-মা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন নিজ হাতে বাঁচ্চাটিকে কোলে নিয়ে সন্তানহীন এই দম্পতির কাছে তুলে দেন। আর মানসিক ভারসাম্যহীন নাসিমা বেগমের দায়িত্ব নেন মৌসুমি আক্তারের পিতা রিকশাচালক সৈয়দ আলী।

এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিভিল সার্জন ডাঃ এস এম আমিনুল ইসলাম, সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এটিএম আনোয়ারুল হক প্রামানিক, ইউএনও ফুলবাড়ি দেবেন্দ্র নাথ ঊরাঁও, কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি এ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু।

সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের দিনমজুর মমিনুল ইসলাম ও তার স্ত্রী মৌসুমি আক্তার সন্তান পেয়ে আবেগ আপ্লুত কন্ঠে বলেন, দশ বছর হলো আমাদের সংসারে কোন সন্তান নেই। সন্তান না থাকার যন্ত্র আর মা ডাক শুনার জন্য এই শিশুটি টিকে সন্তান হিসেবে দত্তক নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করি। বাঁচ্চাটি নেয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করি। পরে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী পাগলী ও তার বাচ্চার দায়িত্ব গ্রহণ করি আমরা।

সিভিল সার্জন ডা. এসএম আমিনুল ইসলাম জানান, গত ৮আগষ্ট বুধবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন মানসিক ভারসাম্যহীন নাসিমা বেগম। খবর পেয়ে শিশুটিকে দেখতে সদর হাসপাতালে আসেন জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন। বাঁচ্চাটিকে কোলে নিয়ে আদর করেন আর শিশুটির নাম রাখেন ‘স্বাধীন’। এ ছাড়া জেলা প্রশাসক এই নবজাতক ও মায়ের দায়িত্ব নেন। সন্তান হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ হলে অনেকেই তার দায়িত্ব নিতে চাইলেও মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাটির দায়িত্ব নিতে রাজি হয়নি। ফলে তাদের কাছে শিশুটিকে দেয়া হয়নি তাদের। পরবর্তীতে মমিনুল ও মৌসুমি নামের দম্পতি শিশু ও তার মায়ের দায়িত্ব নেয়ায় জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ মিডিয়াকর্মীদের উপস্থিতিতে দুজনকে তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়। এছাড়াও দুজনের চিকিৎসার ভার তিনি গ্রহণ করেন বলে জানান।

আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শাহিনুর ইসলাম সরদার বলেন, ‘গত ২৭ জুলাই হাসপাতালের সামনে মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীকে অসুস্থ অবস্থায় ছটফট করতে দেখেন এক পথচারী। তিনি লোকজনের সহায়তায় তাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা যায় মহিলাটি গর্ভবতী। পরে তাকে প্রসূতি বিভাগে ভর্তি করানো হয়।

জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন বলেন, একজন মা হিসেবেই আমি স্বাধীনের দায়িত্ব নিয়েছি। মানসিক ভারসাম্যহীন তার মায়ের কাছে শিশুটির নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সন্তানহীন দম্পতির কাছে হস্তান্তর করা হয়। আল্লাহ যদি আমায় বাঁচিয়ে রাখে, আমি যে প্রান্তেই থাকি স্বাধীনের খোঁজ খবর নিবো। ইতিমধ্যে একজন ব্যক্তি স্বাধীনের খবর পেয়ে একটি অটোরিক্সা দিয়েছে। যা দু’একদিনের মধ্যেই পরিবারের হাতে তুলে দেবো।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত