ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রে খালেদাও জড়িত ছিলেন: হাসিনা

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০১৮, ২১:০২

১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রে খালেদাও জড়িত ছিলেন: হাসিনা

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও যে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘জিয়ার স্ত্রী ভোট জালিয়াতি করে জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনিকে সংসদে নিয়ে এসেছিলেন। এর মানে কী? শুধু জিয়া নয়, তার স্ত্রীও ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।’

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে স্মরণসভার সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভার শুরুতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তদন্তে বাধা দিয়েছেন, কারণ তিনি এতে পুরোপুরি জড়িত ছিলেন।

জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়াই হচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রতিজ্ঞা দাবি করে শেখ হাসিনা বলেছন, এই দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করে আমরা ক্ষুধামুক্ত দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলব। খুনিদের রাজত্ব এদেশে আর আসবে না, আসতে দেওয়া হবে না।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, দেশকে রক্ষা করা, দেশের মানুষকে রক্ষা করা এটাই তো আমাদের কর্তব্য। প্রথম দুই দিন শিশুরা রাস্তায়। আপনারা দেখেছেন আমরা সবাই ধৈর্য দেখিয়েছি। তাদেরকে সব রকমের সহযোগিতা করা হয়েছে। কিন্তু যখন তৃতীয় পক্ষ ঢুকে গেল? শার্টের উপরে আবার স্কুলের ড্রেস পরা, এবং দর্জিরা হিমশিম খাচ্ছে স্কুল ড্রেস বানাতে। এ বুড়োরা আবার হঠাৎ করে ছোট ছোট হতে চাইল কীসের জন্য? উদ্দেশ্যটা কী? পেছনে ব্যাগ, ব্যাগের ভেতর থেকে দা বেরুচ্ছে, চাইনিজ কুড়াল বেরুচ্ছে, পাথর বেরুচ্ছে, লাঠিসোটা বেরুচ্ছে? স্কুলের ছেলেমেয়েদের হাতে তো এগুলো থাকার কথা না? তাদের ব্যাগে তো বই থাকবে। তাহলে এরা কোন স্কুলের ছাত্র।

‘তাহলে তাদেরকে গ্রেফতার করলে কাদের দুঃখ? কাদের হাহাকার? আন্তর্জাতিক সাংবাদিক বা আমাদের দেশের যে বুদ্ধিজীবী তারা কি চোখ খুলে সেগুলো দেখবেন না? উসকানি দাতাকে গ্রেফতারের সঙ্গে সঙ্গে আর্টিকেল লিখতে পারেন আর এই যে যারা অন্যায়গুলি করার চেষ্টা করেছিল একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে, তাদের কি এর বিরুদ্ধে কলম ওঠে না। কলমের কালি ফুরিয়ে গেল? তারা লিখতে পারছেন না! তাদের ভাষা বন্ধ হয়ে গেছে? কেন বন্ধ হল তাহলে? ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করবার সুযোগটা হাতছাড়া হয়ে গেল বলে?’

যে যত বড়ই হোক, কেউ যদি কোন অন্যায় করে, তার কি বিচার হবে না বাংলাদেশের মাটিতে? আর যদি তারা এই অন্যায়কারীদের পক্ষে থাকেন, তাহলে আমাকে যক্তি এইটাই খুঁজতে হয়, আমার পিতা-মাতা ভাইদের হত্যার বিচার চাইতে আমার ৩৫ বছল অপেক্ষা করতে হয়েছিল এবং নিজেই ক্ষমতায় এসে বিচার করতে হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রতিবাদকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত আর এখনো যারা এ চক্রান্ত করে যাচ্ছে বংশ পরম্পরায়, বাংলাদেশের জনগণকে বলব, এদের সম্পর্কে আপনাদেরও সচেতন থাকতে হবে। কারণ এরা বাংলাদেশের উন্নয়ন, বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণ, বাংলাদেশের মানুষের ভালো দেখতে চায় না। শুধু নিজেরাই ভালো থাকতে চায়। তাদের অর্থ সম্পদ কোথা থেকে আসে? কিছু কিছু পত্রিকা দেখবেন অনবরত মনে হচ্ছে যেন, আওয়ামী লীগকে ঘায়েল করাই বা আমাদের সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং জনপ্রিয়তা যাতে হারায় সেই ব্যবস্থা করাটাই যেন তাদের একমাত্র কর্তব্য?

এটা কেন প্রশ্ন উত্থাপন করে এর কারণ তুলে ধরে বলেন, ‘যখন বাংলাদেশে অসাংবিধানিক সরকার থাকে, যখন বাংলাদেশে কোনো গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকে না। তখন অবৈধভাবে ক্ষমতাদখলকারীদের কাছে তাদের খুব কদর বাড়ে, তাদের মূল্য বাড়ে। তাদের মূল্যায়ন হয়। তাই তারা এদেশে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক। দেশের উন্নয়ন হোক। গ্রামের মানুষেরা দুবেলা পেটপুরে ভাত খাক, তাদের ছেলেমেয়ে স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া করুক, চিকিৎসা পাক, গৃহহারা মানুষ ঘর পাক; এই গুলো তাদের মাথায় কিছুই নেই। তাদের মাথায় একটাই আছে, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী আসলেই তাদের কদর বাড়বে, তারা একটা পতাকা পাবে অথবা তারা কিছু ব্যবসা পাবে।’

‘এরাই সুযোগ সুযোগসন্ধানী। এদের কারণেই বাংলাদেশের মানুষকে বারবার বিপদে পড়তে হয়েছে। এদের কারণেই দেশের মানুষ বারবার তাদের অধিকার হারা হয়েছে। এদের কারণেই বাংলাদেশ বারবার গণতন্ত্র হারিয়েছে। এরাই সংবিধান ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে। এরা এখনো তাদের সেই পূর্ব প্রভুদের ভুলতে পারে না। এখনও তাদের মনের মধ্যে সেই তোষামোদী-খোশামোদী, চাটুকারী মনোভাব রয়ে গেছে। ওই পাকিস্তানিদের পদলেহন করা, তাদের পা চেটে থাকবে, এটাই তাদের চরিত্র।’

‘যে কারণে আজকে যখণ বাংলাদেশ উন্নয়ন করে যাচ্ছে, জাতির পিতা রক্ত দিয়ে গেছেন কিন্তু তার আদর্শ আছে আমাদের কাছে। তিনি এই দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। তিনি চেয়েছিলেন বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে। আর আমরা সেই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেই আজকে ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ করেছি। দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ ইনশাল্লাহ আমরা করব।’

বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের ভেতর যখন একটা আলাদা চেতনা-উদ্দীপনা এসেছে তখন এই শ্রেণিটার মন খুব খারাপ। মানুষের এই ভালো হওয়াটা তাদের কাছে ভালো লাগছে না। কাজেই এরা জাতির শত্রু, এরা দেশের শত্রু।’

‘যারা ওই শিশুদের নিয়ে খেলতে চায়? শিশুদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়, তারা আর যাই হোক বাংলাদেশের জনগণের ভবিষ্যত অন্ধকারে ঠেলে দিতে চায়, আলোর পথে যাত্রায় বাধা দিতে চায়’ বলে দাবি করেন শেখ হাসিনা।

জাতির পিতা আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তার আদর্শ আছে। তিনি এই দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। তিনি ওয়াদা দিয়েছিলেন প্রয়োজনে বাংলাদেশের মানুষের জন্য বুকের রক্ত দেবেন। আজকে তিনি বুকের রক্ত দিয়েছেন। এই রক্ত কোনোদিন বৃথা যেতে পারে না। তার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব, এটাই হচ্ছে আমাদের প্রতিজ্ঞা। তার জন্য জীবনপণ আমাদের। আমরা এই দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। আজকের দিনে এটাই আমার প্রতিজ্ঞা।

আওয়ামী লীগসহ মুজিব আদর্শের সকল সৈনিকের প্রত্যেকেই এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া না। জাতির পিতার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করে আমরা ক্ষুধামুক্ত দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলব। খুনিদের রাজত্ব এদেশে আর আসবে না, আসতে দেওয়া হবে না।’

স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সাহারা খাতুন, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আইন বিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম, কার্যনির্বাহী সদস্য সিমিন হোসেন রিমি, আনোয়ার হোসেন।

সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। যৌথভাবে পরিচালনা করেন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।

অনুষ্ঠানে সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা ‘আমার পরিচয়’ আবৃতি করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত