ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

কথা রাখলেন শেখ হাসিনা, তিন উপজেলায় আনন্দের বন্যা

  মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০১৮, ১৭:১৮

কথা রাখলেন শেখ হাসিনা, তিন উপজেলায় আনন্দের বন্যা

২০১৩ সালের ৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলা সফরকালে বড়লেখা ডিগ্রি কলেজ মাঠে আয়োজিত জনসভায় এলাকাবাসীর পক্ষে সংসদ সদস্য হুইপ মো. শাহাব উদ্দিন কুলাউড়া-বড়লেখা রেল লাইন চালু দাবি উত্তাপন করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে রেললাইন চালুর ঘোষণা দিয়েছিলেন।

এতে করে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন পুনঃস্থাপনের কাজ। প্রায় ১৫ বছর ধরে বন্ধ থাকা এ রেলপথটির কাজ গত ১০ আগস্ট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে রেলের পুরাতন ব্রিজ ও রেললাইন উঠানোর কাজ শুরু হয়েছে। বড়লেখা উপজেলার সীমান্ত এলাকা কুমারশাইল থেকে এ কাজ শুরু করা হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের শুরুতেই বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ও দক্ষিণভাগ এলাকায় দুটি ইয়ার্ড তৈরি করাসহ প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে।

এদিকে দীর্ঘদিন পর এ রেল পথটির কাজ শুরু হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে। এ রেলপথটি চালু হলে ২৪টি চা বাগানসহ বৃহত্তর বড়লেখা-জুড়ী-কুলাউড়া ও সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায় ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিপণ্য আমদানি ও যাতায়াতের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। উদ্ধার হবে রেলওয়ের বেহাত হওয়া কোটি কোটি টাকার সম্পদ। সচল হবে জুড়ী, দক্ষিণভাগ, কাঁঠালতলী, বড়লেখা, মুড়াউল ও শাহবাজপুর রেলস্টেশন।

সরেজমিনে উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের কুমারশাইলে দেখা গেছে, এলাকার ঝলঙ্গা ও কাঁকড়িছড়া পুরাতন রেলব্রিজ ভাঙার কাজ চলছে। শ্রমিকদের কেউ রেলব্রিজ ভাঙছেন। কেউ পুরাতন রেল লাইন তুলছেন। আর এসব কাজ তদারকি করছেন রেল লাইন পুনঃস্থাপনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারতীয় ঠিকাদারি রেল নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কালিন্দীর জ্যেষ্ঠ জরিপকারক (সার্ভেয়ার) রিপন শেখ, বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী সন্দীপ বিশ্বাস ও রূপসী বাংলা রেল নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক ইমরান হোসেন। স্থানীয় লোকজন এসব কাজ দেখতে ভীড় জমিয়েছেন।

স্থানীয় শ্রমিক কুমারশাইল গ্রামের আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা রূপসী বাংলা রেল নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০ জন শ্রমিক কাজ করছি। কাজ শুরু হওয়ায় এলাকার মানুষ খুশি।’

কালিন্দির শ্রমিক রাজু আহমদ বলেন, ‘জানুয়ারি থেকে আমরা এখানে আছি। প্রথমে ঘাস কাটা ও খুঁটিনাটি কাজ করেছি। মূল কাজটা এ মাসে শুরু করেছি। এখন ব্রিজ ভাঙা ও পুরাতন রেললাইন উঠানোর কাজ করছি। একশ জনের মত শ্রমিক কাজ করছে। ঈদের পরে আরো শ্রমিক আসবে।’

রেলওয়ে ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৮৮৫ সালে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের অংশ হিসেবে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন চালু হয়েছিল। বড়লেখা উপজেলার লাতু সীমান্ত দিয়ে কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন হয়ে আসাম রেলওয়ের ট্রেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আসা যাওয়া করতো। কুলাউড়া-শাহবাজপুর লাইনে চলাচলকারী ট্রেনটি এলাকাবাসীর কাছে ‘লাতুর ট্রেন’ নামে পরিচিত ছিল। রেল লাইনটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় তা সংস্কার না করেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ২০০২ সালের ৭ জুলাই লাইনটি বন্ধ করে দেয়। এরপর লাইনটি চালু করার জন্য নানা কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) আসনে মহাজোটের প্রার্থী মো. শাহাব উদ্দিন (বর্তমানে জাতীয় সংসদের হুইপ) অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিলো, বিজয়ী হলে কুলাউড়া-শাহবাজপুর ট্রেনলাইন চালু করবেন। পরে নির্বাচনে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রার্থী মো. শাহাব উদ্দিন। লাইনটি চালুর জন্য তিনি একাধিকবার দাবি তুলেন সংসদে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ২৬ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৬৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনঃস্থাপন প্রকল্প অনুমোদন হয়। এরমধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিবে ১২২ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং ভারত সরকার ৫৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। ৪৪ দশমিক ৭৭ কিলোমিটারের পুরোটাই দ্বৈত গেজ লাইন করা হবে। এরমধ্যে সাত দশমিক ৭৭ কিলোমিটার লুপ লাইনের কাজ হবে। ওই বছরের ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদি বাংলাদেশ সফরে আসেন। পরদিন ৭ জুন ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যৌথভাবে অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে এ প্রকল্পেরও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

কালিন্দি রেল নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ জরিপকারক (সার্ভেয়ার) রিপন শেখ মুঠোফোনে বলেন, ‘১৬ আগস্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাজ পরিদর্শন করে গেছেন। ১০ আগস্ট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রেলের পুরাতন ব্রিজ ও রেল লাইন উঠানোর কাজ শুরু করেছি। এর আগে জানুয়ারি থেকে রেলের উপর জন্মানো ঝোঁপঝাড় পরিষ্কার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কাজের জন্য যন্ত্রপাতি পৌঁছে গেছে। দক্ষিণভাগ ও শাহবাজপুর এলাকায় মালামাল রাখা হয়েছে। এখন থেকে কাজ চলমান থাকবে।’

স্থানীয় উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) সেলিম আহমদ খান মুঠোফোনে বলেন, ‘রেলের কাজ শুরু হওয়ায় মানুষের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও হুইপ শাহাব উদ্দিনের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। লাইনটি চালু হলে এই অঞ্চলের মানুষ কম খরচে পণ্য পরিবহন ও যাতায়াত করতে পারবেন।’

বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া সেকশনের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কার্য) মো. জুয়েল হোসেন কাজ শুরুর বিষয়টি নিশ্চিত করে মুঠোফোনে বলেন, ‘এতদিন কাজ দৃশ্যমান ছিল না। এখন কাজ দৃশ্যমান হচ্ছে। ব্রিজ ভাঙা ও পুরাতন রেললাইন উঠানোর কাজ চলছে। কাজের জন্য সব যন্ত্রপাতি এখন স্পটে রয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে। কাজ অব্যাহত থাকবে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর সামনের মাসে লাইনের কাজের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। তাই দ্রুত কাজ হচ্ছে। রেলাইনের পাশে বনবিভাগের গাছ না কাটা ও সার্ভেসহ কিছু কাজের জন্যই এতদিন বিলম্ব হয়েছিল। ভারতীয় সীমান্ত থেকে-শাহবাজপুর স্টেশনের মধ্যখানে এ কাজ শুরু হয়েছে।’

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত