ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

হারিয়ে যাওয়া সেই হাওয়াই মিঠাই

  রূপগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০১৮, ১১:৪৭  
আপডেট :
 ২৯ আগস্ট ২০১৮, ১৪:৪৬

হারিয়ে যাওয়া সেই হাওয়াই মিঠাই
তৈরি হচ্ছে মজার হাওয়াই মিঠাই

দিন বদলে গেছে। মানুষ আধুনিক হয়েছে। অতীত ইতিহাস অনেক কিছুই মানুষ ভুলতে বসেছে। যুগের হাওয়া লেগেছে গ্রাম-গঞ্জেও। ঐতিহ্যবাহী অনেক কিছুই আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। তেমনি একটি শিশুদের খাবার রঙিন দুষ্ট মিষ্ট হাওয়াই মিঠাই।

হাওয়াই মিঠাই! শিশুদের মন ভোলানো প্রাণ জুড়ানো পছন্দের অন্যতম খাবার। মুখে দিলে নিমিষেই হাওয়ার মতো মিলিয়ে যায়। এক সময় গ্রামের মেঠো পথে হাঁক ডেকে সুর করে ডাকতেন “সুস্বাদু মিষ্টি হাওয়াই মিঠাই” ফেরিওয়ালারা আর বিক্রি করতেন শিশুদের কাছে। শিশুরা ডাক শুনেই বাবা-মার কাছে বায়না ধরতো এ মিঠাই খাওয়ার জন্যে। তবে বড়দের খাবারের তালিকায়ও জায়গা রয়েছে বাহারি রংয়ের, হরেক আকৃতির হাওয়াই মিঠাইয়ের। কালের পরিক্রমায় এখন তা প্রায় বিলুপ্তির পথে।

দিনকে দিন হারিয়ে যাচ্ছে হাওয়াই মিঠাইয়ের ফেরিওয়ালাদের সংখ্যা। কারণ বর্তমান আধুনিক যুগে প্রযুক্তি এখন হাতের মুঠোয়। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এখন মানুষের দোরগোড়ায় হাজারো নামী দামী খাবার। তাছাড়া হাওয়াই মিঠাইকে অস্বাস্থ্যকর ও নিন্মমানের খাদ্য হিসেবে গণ্য করে তা শিশুদের খেতে দেন না অনেক অভিভাবক। তাই পরবর্তী প্রজন্মকে এ পেশায় দিক্ষিত করতে চান না হাওয়াই মিঠাইওয়ালারা।

বিশেষ প্রক্রিয়ায় চিনিকে তাপ দিয়ে মেশিনে হাত ঘুরিয়ে হাওয়াই মিঠাই তৈরি করা হয়। সাদা ও গোলাপী এ দু ধরনের হাওয়াই মিঠাই হয়ে থাকে। গ্রামে ভ্যানের ওপর হাওয়াই মিঠাই তৈরির সরঞ্জাম সাজিয়ে নিয়ে হাওয়াই মিঠাই তৈরি করতে দেখা যায়। কাঁচ দিয়ে ঘেরা বক্সে ছোট ছোট গোলাকার এবং বড় আকারের হাওয়াই মিঠাই পলিথিনে মুড়িয়ে বাঁশের সাথে বেঁধে ফেরিওয়ালারা বিভিন্ন সুরে ডেকে ডেকে এগুলো বিক্রি করে থাকেন।

এমনই একজন হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতা জলিল মিয়া। তিনি প্রায় এক যুগ ধরে হাওয়াই মিঠাই তৈরি ও বিক্রি পেশার সাথে জড়িত। এ কাজ করেই ৪ সদ্যেসের পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন তিনি।

বৃদ্ধ জলিল মিয়া জানান, 'আর পরি না বাপ। এগুলো আর পোলাপানরা খায় না। আধুনিক যুগে চিপস, বার্গার, চকলেট আর জুসের দিকেই শিশুদের নজর বেশি। তাছাড়া হাওয়াই মিঠাই এখন বিলুপ্তির পথে। তবে বংশ পরম্পরায় জাত ব্যবসা ধরে রাখতে এ ব্যবসা চালিয়ে আসছি। বয়সও হয়েছে এখন আর পারি না।

পরবর্তী প্রজন্মকে এ পেশায় আনবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জলিল মিয়ার সোজাসাপটা জবাব, যতদিন পারবো এ ব্যবসা আমি চালিয়ে যাবো। তবে আমার সন্তানদের এ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত করবো না।কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, এ পেশার লোকজনদের মানুষ সন্মানের চোখে দেখে না। এছাড়া এ পেশার ভবিষ্যৎ নেই বললেই চলে।

হাওয়াই মিঠাইওয়ালা রিপন মিয়া জানান, এক একটি হাওয়াই মিঠাই তৈরি করতে ২০ থেকে ২৫ গ্রাম চিনি খরচ হয়। চিনিসহ অন্যান্য খরচ বাবদ প্রায় ৫ টাকার মতো পড়ে। আর বিক্রি হয় প্রতিটি ১০ টাকা করে। তিনি আরো বলেন, হাওয়াই মিঠাই মূলত দু’ধরনের তৈরি করা হয়। সাদা এবং গোলাপী রংয়ের। গোলাপীটা তৈরিতে একটু বেশি খরচ হয়। এতে গোলাপী রঙ মেশানো হয়। এক কেজি চিনি দিয়ে প্রায় ৫০/৬০ পিস হাওয়াই মিঠাই তৈরি করা যায়। এ হাওয়াই মিঠাই গ্রামের বিভিন্ন স্কুলের গেটে, ছোটবাজার এবং বিভিন্ন মেলায় গিয়ে বিক্রি করা হয়।

সম্প্রতি উপজেলার খামার এলাকায় হাওয়াই মিঠাই কেনার সময় মাহির, মাইশা, তামিম, মঞ্জু, হামিম, মুক্তা, মনিসহ কয়েকজন শিশু বলেন, হাওয়াই মিঠাই! ওহ! মজাই আলাদা। একবার খাইলে বারবার খেতে মন চায়। এটি খেতে আমাদের অনেক ভাল লাগে।

রূপগঞ্জ বেকার বন্ধু কল্যাণ সংস্থার সভাপতি ঝন্টু মোহাম্মদ বলেন, একটা সময় গ্রাম-গঞ্জের রাস্তায় পিতলের ঘন্টায় টুং টাং আওয়াজ হলেই শিশুরা ছুটে যেতো। পুরনো লোহা জাতীয় পদার্থ, প্লাস্টিক, পরিত্যক্ত ব্যাটারি, ছেড়া জুতার বিনিময়ে মিলতো হাওয়াই মিঠাই। আর এখন কালক্রমে দেখা মিললেও লাগে নগদ টাকা। তবে বাচ্চাদের জন্যে খুবই একটা মজার খাবার এটা। মুখে দিলেই হাওয়া।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত