ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

ক্ষিতীন্দ্রের রেকর্ড

সাঁতার কেটে ৬১ ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার অতিক্রম

  নেত্রকোনা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:২৩  
আপডেট :
 ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:৫৩

সাঁতার কেটে ৬১ ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার অতিক্রম

দূরপাল্লার সাঁতারে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন নেত্রকোনা মদন উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য। টানা ৬১ ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার পথ সাঁতরেছেন তিনি। তবে বিশ্বরেকর্ডের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি এখনো পাননি তিনি।

গত সোমবার সকাল ৭টা ১০ মিনিটে শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌর শহরের ভোগাই ব্রিজ থেকে সাঁতার শুরু করেন জাতীয় রেকর্ডধারী ৬৭ বছর বয়সী এই সাঁতারু। তারপর নেত্রকোনা জেলার মদন পৌর শহরের মগড়া নদীর দেওয়ান বাজারঘাটে গিয়ে ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যের এই সাঁতার শেষ হয় বুধবার রাত ৮টায়।

শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌরসভা ও নেত্রকোনার মদন উপজেলার নাগরিক কমিটি এবার যৌথভাবে দূরপাল্লার এই সাঁতারের আয়োজন করে।

এর আগে সেখানে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে এ সাঁতার কার্যক্রম উদ্বোধন করেন নালিতাবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমান। এ সময় নালিতাবাড়ী পৌরসভার মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক, নেত্রকোণা জেলার মদন পৌরসভার সাবেক মেয়র মোদাচ্ছের হোসেন শফিক, নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল হোসেন মাস্টার, বাঘবেড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সবুর, নেত্রকোনার মদন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল কুদ্দস, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মদন শাখার সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আজহারুল ইসলাম হিরু, মদন নাগরিক কমিটি এবং নালিতাবাড়ী প্রেস ক্লাব নেতৃবন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ভোগাই নদীর দুই পাড়ে শত শত দর্শনার্থী হাত নেড়ে ক্ষিতীন্দ্রকে স্বাগত জানায়। এ সময় তার নাম ধরে চিৎকার করে তাকে উৎসাহিত করতে থাকে । মদন উপজেলা নাগরিক কমিটি ও নালিতাবাড়ী পৌরসভা এ সাঁতার অনুষ্ঠানে ক্ষিতিন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যকে সার্বিক সহায়তা করেছেন।

সাতাঁরু ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার এক নারী সাঁতারু ১৭৭ কিলোমিটারের রেকর্ড ভঙ্গ করতে আমার এ সাঁতারে নামা।

২০১৭ সালে ৪ আগস্ট সন্ধ্যা থেকে ৬ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত ১৪৬ কিলোমিটার নদীপথে সাঁতার কেটেছিলেন তিনি। এবার আরও ৩৯ কিলোমিটার পথ যোগ করে ১৮৫ কিলোমিটার নদীপথে সাঁতার কেটে সফল হয়েছেন এ মুক্তিযোদ্ধা।

ক্ষিতীন্দ্র বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষের এএনএস কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় এমএসসি পাস করেন। সাঁতার কেটে এ পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ে চারটি পুরস্কার পেয়েছেন।

১৯৭০ সালে সিলেটের ধুপাদিঘি পুকুরে অরণ্য কুমার নন্দীর বিরামহীন ৩০ ঘণ্টার সাঁতার প্রদর্শনী দেখে ক্ষিতীন্দ্র উদ্বুদ্ধ হন। পরে একই বছর মদনের জাহাঙ্গীরপুর উন্নয়ন কেন্দ্রের পুকুরে তিনি ১৫ ঘণ্টার সাঁতার প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করে আলোচিত হন। এটিই তার প্রথম সাঁতার প্রদর্শনী।

১৯৭২ সালে সিলেটের রামকৃষ্ণ মিশন পুকুরে ৩৪ ঘণ্টা, সুনামগঞ্জের সরকারি হাইস্কুলের পুকুরে ৪৩ ঘণ্টা, ১৯৭৩ সালে ছাতক হাইস্কুলের পুকুরে ৬০ ঘণ্টা, সিলেটের এমসি কলেজের পুকুরে ৮২ ঘণ্টা এবং ১৯৭৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের পুকুরে ৯৩ ঘণ্টা ১১ মিনিট বিরামহীন সাঁতার প্রদর্শন করে জাতীয় রেকর্ড সৃষ্টি করেন। জাতীয় রেকর্ড সৃষ্টি করায় ওই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং ডাকসুর উদ্যোগে ক্যাম্পাসে বিজয় মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৭৬ সালে তিনি জগন্নাথ হলের পুকুরে ১০৮ ঘণ্টা ৫ মিনিট সাঁতার প্রদর্শন করে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেন। এর স্বীকৃতি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জগন্নাথ হলের পুকুরের পাড়ে একটি স্মারক ফলক নির্মাণ করে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে ঢাকা স্টেডিয়ামের সুইমিং পুল, নেত্রকোনা পৌরসভার পুকুরে তাঁর একাধিক সাঁতার প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।

সাঁতার প্রদর্শনী ও রেকর্ড সৃষ্টির স্বীকৃতি হিসেবে অনেক পুরস্কার-সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণভবনে তাকে রূপার নৌকা উপহার দেন। একই বছর ডাকসু তাকে বিশেষ সম্মানসূচক স্বর্ণপদক দেয়।

মদন নাগরিক কমিটির সভাপতি ও সাবেক পৌরমেয়র দেওয়ান মোদাচ্ছের হোসেন শফিক জানান, গুগল ম্যাপ ডাটায় দূরত্ব নির্ণয় করে এবং ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্রের বয়স বিবেচনা করে এই সাঁতার বিশ্ব রেকর্ড হিসেবে গণ্য হবে। গিনেস বুকে রেকর্ড করতে সার্বক্ষণিক সাঁতারের ভিডিও ধারণ করা হয়েছে। তিনি কিছুটা দুর্বল হলেও, সফলভাবেই মদন পৌঁছেছেন।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত