ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

মৃত্যুর আগে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চান ভাষা সৈনিক লাইলী বেগম

  ঝালকাঠি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৭:৩৩

মৃত্যুর আগে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চান ভাষা সৈনিক লাইলী বেগম

৫২-এর ভাষা আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের অনেকেই আজ জীবিত নেই। তবে যারা প্রত্যক্ষ সাক্ষী হিসেবে বেঁচে আছেন কেউ তাদের খোঁজ নেয়না। এদের মধ্যে একজন তৎকালীন ৭ম শ্রেণির ছাত্রী লাইলী বেগম (৭৬)।

লাইলী বেগম বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে স্বাধীনতার বীজ বপন করেছি। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, দেশও স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু ভাসা সৈনিকদের কোন স্বীকৃতি বা সম্মাননা মেলেনি। বয়স অনেক হয়েছে চলাফেরা করতেও অনেক কষ্ট হয়। যে কোন সময় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারি।’

তবে মৃত্যুর আগে বঙ্গবন্ধু কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে করে কথার বলার শেষ ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি।

আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানীদের চক্রান্তে মামলার স্বীকার হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭০ সালে ঝালকাঠিতে এসেছিলেন। তিনি ডাক বাংলোতে অবস্থানকালে আমি তার সাথে সাক্ষাত করতে যাই। দেখা হলে কিছুক্ষণ কথা বলার পরে পানির পিপাসার কথা বলেন। তখন টিউবওয়েল থেকে জগ ভরে পানি এনে তাকে দেই। এজন্য সেই সময়ে তিনি আমাকে ধন্যবাদও দিয়েছিলেন। তিনি যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে আমাদের ভাষা সৈনিকদের জন্য একটা সম্মানের ব্যবস্থা করে দিতেন। আমিও তার কাছে গিয়ে ঝালকাঠির লাইলী বলে পরিচয় দিলে তিনি আমাকে চিনতেন আমিও তার সাথে কথা বলতে পারতাম। এখন আমাকে কেউ চিনে না।’ তাই প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের আশা প্রকাশ করেন তিনি।

একান্ত সাক্ষাতকালে তিনি স্মৃতিচারণ করে জানান, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় ঝালকাঠিতে কোনো কলেজ ছিল না, স্কুল পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরাই সেদিন বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা দানের দাবিতে রাজ পথে নেমেছিল। শাসক চক্রের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ১৭ ফেব্রুয়ারি স্কুল ছাত্রদের নিয়ে ৯ সদস্যের সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। কমিটিতে জহুরুল আমীন সভাপতি, আমীর হোসেন সহ-সভাপতি, মোহাম্মদ আলী খান সম্পাদক এবং সদস্য হিসেবে ছিলেন আমিন হোসেন, মোজাম্মেল হক, মরতুজ আলী খানসহ আরও তিনজন। তবে তাদের নাম তিনি মনে করতে পারেননি।

ভাষা সৈনিক লাইলী বেগম জানান, ‘‘সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে এখানকার স্কুলগুলোতে ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল পালনের চেষ্টা করা হলেও গ্রেপ্তারের ভয় দেখানোর ফলে তা সফল হয়নি। এদিন ঢাকায় গুলি বর্ষণের খবর পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি সকালে ঝালকাঠিতে ছড়িয়ে পড়া মাত্রই উত্তেজিত ছাত্ররা রাস্তায় নেমে পরেছিল। স্থানীয় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো মিছিল বের হয়। মিছিলটি হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ের কাছে পৌঁছালে ছাত্রদের কাছ থেকে ঢাকায় ছাত্র হত্যার খবর পাই।

৭ম শ্রেণির ছাত্রী লাইলি বেগমের নেতৃত্বে ছাত্রীরা বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেয়। মিছিলটি উদ্বোধন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কাছে পৌঁছালে সেখানকার শিক্ষার্থীরাও এতে যোগ দেয়। মিছিলের সম্মুখ ভাগে ছিলেন জনসাধারণের পক্ষে একমাত্র প্রতিনিধি সংবাদপত্রের এজেন্ট আবদুর রশীদ ফকির। ছাত্র হত্যার প্রতিবাদ এবং মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা দানের স্বপক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে শহর প্রদক্ষিণ শেষে সরকারি বালিকা বিদ্যালয় মাঠে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

পরের দিন ২৩ ফেব্রুয়ারি আমাকে বাসা থেকে পাকিস্তানি মিলিটারিরা আমাকে ধরে নিয়ে যায়। ঝালকাঠি পৌরসভা সংলগ্ন ডাক বাংলোতে নিয়ে কর্মকর্তাদের সামনে হাজির করে আমাকে স্বীকারোক্তির জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। কে কে মিছিলে ছিলো ? তাদের বাসা কোথায়? আমি সব জানা সত্বেও কারোরই পরিচয় না দিয়ে বলছিলাম, কাউকেই আমি চিনি না। এভাবে পরদিনও আমাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে স্বীকারোক্তির জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। আমার একই কথা ছিলো ‘কাউকেই আমি চিনি না।’

এরপর আমার বিয়ে হয় পুলিশের এক হাবিলদারের সাথে। যিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে অতন্দ্রভাবে সরকারি ডিউটি এবং বাকিটা সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ব্যয় করতেন। এসময় দেশের ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে পুলিশের পরিকল্পনা জেনে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে জানাতেন। পরবর্তীতে এক পুলিশ কর্তার অনৈতিক দাবি উপেক্ষা করে প্রতিবাদ করায় তাকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।’

লাইলী বেগমের ৮ মেয়ে ২ ছেলে সন্তানের মধ্যে কারো কোন ভালো চাকরি না থাকায় কোনোমতে জীবনের বাকি সময়টা অতিবাহিত করছেন। তার মনের কষ্ট এখন একটাই দীর্ঘ ৬৬ বছেরেও কেউ তাদের খোঁজ নেয়নি, পাননি কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিও।

জেডআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত