ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

পরকীয়ায় স্বামী হত্যা: শিক্ষিকা ও প্রেমিকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

  রংপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৮:২১

পরকীয়ায় স্বামী হত্যা: শিক্ষিকা ও প্রেমিকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক রথীশ চন্দ্র ভৌমিক ও তার স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার ভৌমিক এবং স্ত্রীর প্রেমিক কামরুল ইসলাম

রংপুরে বহুল আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলা জজ আদালতের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট রথীশ চন্দ্র ভৌমিক ওরফে বাবুসোনা হত্যা মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। সোমবার এক ব্রিফিংয়ে রংপুরের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান এ তথ্য জানান।

দুপুরে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান তার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, নিহত বাবু সোনার স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিক ও তার কথিত প্রেমিক কামরুল ইসলামকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। এ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া দুই স্কুলছাত্রকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রংপুরের দৈনিক যুগের আলো পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার সাংবাদিক উৎস রহমান হত্যা মামলার অভিযোগপত্রও আদালতে দাখিল করা হয়েছে বলে পুলিশ সুপার জানান।

গত ৩০ মার্চ অ্যাডভোকেট রথীশ চন্দ্র ভৌমিক নগরীর বাবুপাড়ার বাসা থেকে নিখোঁজ হন। নিখোঁজের পাঁচদিন পর র‍্যাব ১৩-এর সদস্যরা রথীশ চন্দ্রের গলিত লাশ উদ্ধার করে। স্কুলশিক্ষিকা স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিক পরকীয়ার কারণে প্রেমিক কামরুলের সহায়তায় নিজ বাসায় স্বামী রথীশকে হত্যা করে লাশ গুম করেছিলেন এবং তদন্তে তা প্রমাণিত হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।

প্রেস ব্রিফিংয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আলামিনসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পাঁচদিন নিখোঁজ থাকার পর গত ৩ এপ্রিল রাতে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক রথীশ চন্দ্র ভৌমিক ওরফে বাবুসোনার লাশ উদ্ধার করেন র‍্যাব-১৩ সদস্যরা। এর আগে রথীশের স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার ভৌমিককে আটক করে র‍্যাব। স্নিগ্ধাকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি পরকীয়ার কারণে স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।

এরপর স্নিগ্ধার দেওয়া তথ্যানুযায়ী র‍্যাব উদ্ধার অভিযান চালায়। রাত ১১টার দিকে রথীশের বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে তাজহাট মোল্লাপাড়া জামে মসজিদের কাছে স্নিগ্ধার প্রেমিক কামরুল ইসলামের ভাইয়ের নির্মাণাধীন বাড়ির একটি ঘরের মেঝে খুঁড়ে লাশ উদ্ধার করেন র‍্যাব সদস্যরা। পরে রথীশের ভাই সুশান্ত কুমার ভৌমিক গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন।

এ হত্যার পরিকল্পনা করা হয় দুই মাস আগে। ঘুমের ওষুধ খাইয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করেন স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার ভৌমিক ও তার প্রেমিক কামরুল ইসলাম। দুজনই রংপুরের তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। রথীশকে হত্যার পর মাটিচাপা দিতে দুই ছাত্রকেও ব্যবহার করেন তারা।

যেভাবে পরকীয়ায় স্নিগ্ধা-কামরুল: একটি পরকীয়া। ভেঙে চুরমার দুটি সাজানো সংসার। স্ত্রী স্নিগ্ধা ও তার প্রেমিক কামরুল মিলে অ্যাডভোকেট রথীশ চন্দ্র ভৌমিককে খুনের ঘটনায় বিস্মিত-হতবাক হয় রংপুরের মানুষ। সর্বত্র ক্ষোভ-ধিক্কার। দু’ জন দু’ ধর্মের। পরিবার-সন্তান রয়েছে দু’ জনেরই।

স্কুলের শিক্ষিকা ফেরদৌসী আরা পলি বলেন, যেভাবে এ দু’শিক্ষক মেলামেশা করতো তাতে আমরা সহকর্মী হিসেবে তেমন কিছু মনে করতাম না।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে দু’সন্তানের জননী স্নিগ্ধা ভৌমিক ও এক সন্তানের জনক কামরুল ইসলামের পরকীয়া প্রেমের গল্প। প্রায়ই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির পর সব শিক্ষকদের পরে বের হতো স্নিগ্ধা ও কামরুল। প্রায়ই তারা মোটরসাইকেলে করে দূরে নিভৃত স্থানে গিয়ে সময় পার করতো। অ্যাড. রথীশ ভৌমিকের দুই সন্তানের মধ্যে এল.এল.বি অনার্স পড়ুয়া পুত্র ঢাকায় থাকতেন। নবম শ্রেণি পড়ুয়া কন্যা থাকতো বাসায়। কন্যা স্কুলে চলে যাওয়ার পর কামরুল পেছনের দরজা দিয়ে স্নিগ্ধার বাসায় গিয়ে গোপনে অবৈধ মেলামেশা করতো। বিষয়টি রথীশ ভৌমিক আঁচ করতে পারলে তাদের সংসারে অশান্তি নেমে আসে।

এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, ১৮৯৪ সালে গড়ে ওঠা তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯৯৪ সালে অ্যাড. রথিশ চন্দ্র ভৌমিকের স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিক ধর্মীয় শিক্ষক এবং কামিল পাস করা কামরুল ইসলাম একই সঙ্গে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। স্নিগ্ধা ভৌমিক শান্ত স্বভাবের হলেও কামরুল ইসলাম চতুর ও চঞ্চল প্রকৃতির। হাসি, ঠাট্টা করতো সবার সঙ্গে। দীর্ঘদিন চলার পথে শিক্ষক স্নিগ্ধা ও কামরুলের মধ্যে একটি সম্পর্ক গড়ে উঠে। এ সম্পর্কের কারণে স্নিগ্ধার দাপ্তরিক যাবতীয় কাজকর্ম কামরুল করে দিতো। বিনিময়ে স্নিগ্ধা বাড়ি থেকে টিফিন বক্সে করে কামরুলের জন্য খিচুড়ি, ছানা, পায়েসসহ ফলমূল নিয়ে এসে তাকে খাওয়াতো। তার সহকর্মীরা প্রশ্ন করলেও স্নিগ্ধা বলতো আমার কাজ করে দেয় বিধায় তাকে নাস্তা খাওয়াই।

এসব বিষয় জানতে পারেন স্নিগ্ধার স্বামী রথীশ চন্দ্র ভৌমিক। তিনি শিক্ষক কামরুলকে সাবধান করে দেন। এ থেকে তাদের মেলামেশা বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে মোবাইল ফোনে কামরুল আর স্নিগ্ধা পরিকল্পনা করে কীভাবে আগের সম্পর্ক ফিরিয়ে আনা যায়। তারা দিনে কখনো ৩০-৩৫ বারও কথা বলেছেন। এসব বিষয় নিয়ে রথীশের পরিবারে নেমে আসে চরম অশান্তি। দেখা দেয় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য ও বিরোধ। স্নিগ্ধা প্রায়ই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বামীকে গালমন্দও করতো।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত