ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

সংবিধানের বাইরে যাবে না আওয়ামী লীগ

  বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:২৫

সংবিধানের বাইরে যাবে না আওয়ামী লীগ

বিরোধী জোটের আন্দোলনের হুমকিকে পাত্তা দিচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন কর্মসূচি পালনে বাধা না দিলেও জননিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটে এমন কোনো হিংসাত্মক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামলে হার্ডলাইনে যাবে সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার বিরোধী জোটের দাবিগুলো নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা নিজেদের মধ্যে কম-বেশি আলোচনা করেছেন। এতে তারা মনে করেন বিরোধী জোটের দাবি-দাওয়াগুলো সংবিধান বিরোধী এবং সংবিধান সংশোধনীর পর্যায়ের। তাই তাদের দাবিগুলো একাদশ নির্বাচনের আগে মানা ও বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। সংবিধানের বিধান মেনেই একাদশ নির্বাচন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অধীনেই করতে হবে। তার নির্বাচনী সরকারের অধীনেই বিরোধী জোটকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। আপাতত সংবিধানের বাইরে এক চুলও সরার চিন্তা নেই ক্ষমতাসীনদের। আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে আলাপকালে তারা এসব কথা বলেন।

জাতীয় সংসদের অভিজ্ঞ পার্লামেন্টরিয়ান আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক আইনমন্ত্রী এডভোকেট আব্দুল মতিন খসরুর মতে, বিএনপি ও যুক্তফ্রন্টের দাবি-দাওয়াগুলো সংবিধান পরিপন্থী।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, জাতীয় ঐক্য গড়তে যুক্তফ্রন্টের দুই প্রবীণ রাজনীতিবিদ যে ধরনের প্রস্তাব দিয়েছেন তা সংবিধান পরিপন্থী এবং অগ্রহণযোগ্য। সংবিধান এগুলো গ্রহণ করবে না। সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তারিখে নির্বাচন হবে। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

আব্দুল মতিন খসরু বলেছেন, সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন দিতে হবে এমন কোনো কথা সংবিধানে নেই। তিনি বলেন, বিএনপি ও তাদের মিত্ররা যে প্রস্তাব দিয়েছে তা মানতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। সংবিধান সংশোধনের মতো অবস্থা সংসদে নেই। সময়ও নেই। কাজেই সংবিধান মতেই একাদশ সংসদ নির্বাচন করতে হবে। বিরোধী জোটের দাবি ও প্রস্তাব বাস্তবায়নযোগ্য নয়। তাই আন্দোলন করে কোনো লাভ হবে না।

সংসদ ভেঙে নির্বাচনের দাবি নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংসদ ভেঙে নির্বাচনের দাবি অসাংবিধানিক। বি.চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন 'বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যে'র পাঁচ দফা দাবি নাকচ করে তিনি বলেন, নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। তফসিলের আগে সংসদ ভেঙে নির্দলীয় সরকার গঠন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, ভোটের সময় বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েনসহ পাঁচ দফা দাবি এগুলো অগ্রহণযোগ্য।

তিনি আরো বলেন, সংসদের শেষ অধিবেশন ২০ অক্টোবরের আগেই শেষ হয়ে যাবে। এরপর আর সংসদ বসবে না নির্বাচন পর্যন্ত। সংসদ সদস্যদের ক্ষমতা ও কার্যকারিতা থাকবে না। কাজেই সংসদ ভেঙে দেয়া ও গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মতো বহাল রাখার মধ্যে পার্থক্য নেই।

দলীয় সূত্রগুলো জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে দলীয় কর্মকাণ্ড তত বাড়ছে। কাজেই বিরোধীদের আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে সময় ব্যয় করার মত সময় নেই আওয়ামী লীগের। সংবিধান মেনে সারাবিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে যেভাবে জাতীয় নির্বাচন হয় বাংলাদেশেও তাই হবে। এর ব্যত্যয় হবে না। সংবিধানের বাইরে এক চুল পরিমাণও সরবে না আওয়ামী লীগ।

দলের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট নেতারা মনে করেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও তাদের জোটের শরীকরা নির্বাচনে অংশ না নিয়ে যে ভুল করেছিল তার পুনরাবৃত্তি এবার তারা করবে না।

আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, এবারের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবেই। তাদের মতে, সংসদে বিএনপি ছাড়া গত পাঁচবছর ভালোই চলেছে। কোন খিস্তি-খেউর ছিল না। দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও ছিল না প্রতিবন্ধকতা। সংসদে বিএনপি না থাকলে যে কিছু হয় না এদেশের মানুষ তা বুঝে গেছে। কাজেই আগামী নির্বাচনেও যদি তারা অংশ না নেয় তাতে নির্বাচন থেমে থাকবে না। তারা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করলেও সফল হবে না। ক্ষমতাসীন দল ও সরকার সতর্ক। নির্বাচনে না এসে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশের চেষ্টা করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, বিএনপির প্রত্যেকটি দাবি জনবিচ্ছিন্ন। ক্ষমতায় যাওয়ার কৌশল। তাই বিএনপির দাবির প্রতি জনগণের সমর্থন না থাকায় তারা কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। তিনি বলেন, বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেছে আমেরিকা-লন্ডনে। তারা এখন বিদেশিদের কাছে ধর্না ধরেছে। একমাত্র রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হলেই কেউ লবিস্ট নিয়োগ করে বিদেশিদের কাছে ধর্না ধরতে পারে। এতে প্রমাণিত হয়েছে এদেশের জনগণের প্রতি বিএনপির আস্থা নেই। ষড়যন্ত্রের প্রতিই তাদের আস্থা।

তিনি আরো বলেন, বিএনপি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চায়। বাংলাদেশের মানুষ কখনোই তাদের এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে দেবে না।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত