ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

বিএনপির নির্বাচনী গতিবিধি পর্যবেক্ষণে আওয়ামী লীগ

  তৌফিক ওরিন

প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:১৯

বিএনপির নির্বাচনী গতিবিধি পর্যবেক্ষণে আওয়ামী লীগ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলো এখন নির্বাচনমুখী। নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে বিএনপির জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমর্থন এবং সেই সমাবেশে যোগদান রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করেছে। বিএনপিসহ অনান্য রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রচেষ্টা ও প্রক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা জানিয়েছেন, প্রতিপক্ষ রাজনীতিকদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও তাদের বক্তব্যের চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তাদের গতিবিধি নজরে রেখে পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়াই যুক্তিযুক্ত বলে মনে করছেন তারা। নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনোভাবেই বিরোধীদের সুযোগ দিতে চায় না তারা। এসব ভেবেচিন্তে ভোটের আগ মুহূর্তে এসেও নিজেদের নির্বাচনী জোটের রূপরেখা আর আসন বণ্টনের সিদ্ধান্ত দিতে দেরি করছে দলটি।

এদিকে শনিবার ঢাকা মহানগর নাট্য মঞ্চে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। দেখা গেছে, বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে অংশগ্রহণ করছেন। এ সময় তারা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগানে মুখর করে তোলে মিলনায়তন প্রাঙ্গণ।

আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি আসবে এমনটি ধরে নিয়ে ভোটের আগে জোটের পরিধি বাড়ানোর কাজ করছে আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ ও আলোচনা অব্যাহত রেখেছে দলটি। তবে বিএনপি একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলে সর্বোচ্চ সংখ্যক দল যাতে নির্বাচনে আসেন সে প্রচেষ্টাও অব্যাহত রেখেছেন ক্ষমতাসীনরা।

নির্বাচন কমিশন সূত্রমতে, আগামী নভেম্বরে একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এবং ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভোট করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে কমিশন।

এদিকে তফসিল ঘোষণার আগে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে নির্বাচনী জোট নিয়ে এখনও সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, বিএনপি নির্বাচনে এলে জোটের চেহারা একরকম হবে, না এলে অন্যরকম। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের শরিকরা নিজ নিজ দলের চাহিদা অনুযায়ী আসনের নিশ্চয়তা চাইছে। জাতীয় পার্টিও (জাপা) একশ আসন দাবি করে অন্তত ৭০ আসন প্রাপ্তির আশা করছে।

জোটের আসন বিন্যাস প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে এলে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে মহাজোট গঠন করা হবে। জাতীয় পার্টি আমাদের কাছে ৭০টি আসন চেয়েছে। তবে বিএনপি নির্বাচনে না এলে জাতীয় পার্টি একক নির্বাচন করবে বলে তারাই বলেছেন। তবে শরিকদের সবমিলে ৬০ থেকে ৭০টি আসন ছেড়ে দেয়া হতে পারে বলে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

অক্টোবরেই নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা আসলেও নির্বাচনী জোটের রূপরেখা কবে দেয়া হবে, এ বিষয়ে এখনও সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, ভোটের মাঠ বিশ্লেষণে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময় পরপর জরিপ চালানো হচ্ছে। জরিপে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী ছাড়াও প্রতিপক্ষ ও শরিকদের দলের প্রার্থীদের অবস্থা যাচাই করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দলের বর্তমান মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের মধ্যে জয় নিশ্চিত এমন একশ জনের তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। দলে অপেক্ষাকৃত তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে এবং তারকা খ্যাতি রয়েছে এমন কিছু ব্যক্তিত্বকে পছন্দের তালিকায় রেখে আরো একশ আসনে মনোনয়ন চূড়ান্তকরণের কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। অবশিষ্ট একশ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে তফসিল ঘোষণার আগে। শেষ পর্যায়ে জোট-মহাজোটের সঙ্গে আসন বণ্টনের বিষয়টিও চূড়ান্ত করার কথা ভাবছে আওয়ামী লীগ।

এদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ আবারও বিএনপিকে বাইরে রেখে একতরফা নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে। জনগণ এটা মেনে নেবে না দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে জাতীয় নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। এ লক্ষ্যে ২০ দলীয় জোটের নেতৃত্বে থাকা বিএনপি দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটি বৃহত্তর ঐক্য গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

বিএনপির দাবি, সরকারের বাইরে থাকা দলগুলোও বর্তমান সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করছে, তারা এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। তারা বলছে যেভাবে দেশ চলছে, সেভাবে চলতে পারে না। বিএনপির জাতীয় ঐক্যের ডাকে এ কারণেই দলগুলো আগ্রহী হয়েছে। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা করতে সরকারকে বাধ্য করতে আন্দোলন শুরু করতে চায় তারা। নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে এসে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সাথে একত্বতা প্রকাশ করেছ দলটি।

এদিকে সংসদ ভেঙে নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, সেনা মোতায়েন, সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকারে সব দলের প্রতিনিধিত্ব, দলীয় প্রধানের কারামুক্তিসহ বিএনপির উত্থাপিত বেশিরভাগ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে আওয়ামী লীগ। আন্দোলনের মাধ্যমে বিএনপির নির্বাচন প্রতিরোধের ঘোষণাও আমলে নিচ্ছে না তারা।

যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া সম্পর্কে আওয়ামী লীগ সাধারণ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের রাজনীতি জনগণ গ্রহণ করেছে। বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রতি দেশের মানুষের আস্থা আছে। নেতায় নেতায় ঐক্য জনগণের মধ্যে প্রভাব ফেলতে পারবে না।

অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণে একাধিকবার বৈঠক করে বিকল্পধারার সভাপতি ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, জেএসডি সভাপতি আসম রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা আগেই ঐকমত্যে পৌঁছান। সে সময় জাতীয় প্রেসক্লাবে ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর যুক্তফ্রন্ট ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার এক সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়। সেগুলো- তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সব রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করাসহ নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনের এক মাস আগে থেকে নির্বাচনের পর ১০ দিন পর্যন্ত মোট ৪০ দিন প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা বাদ দেয়া।

এছাড়া যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ক্ষমতায় গেলে কী কী করা করবে, সে বিষয়ে ৯টি লক্ষ্যও ঘোষণা করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বিএনপির জাতীয় ঐক্যের ডাকের প্রসঙ্গে বলেন, বিএনপি জাতীয় ঐক্যের ডাক দেয়, আবার আন্দোলনের ঘোষণা দেয়। আবার বিদেশিদের কাছেও ধর্ণা দেয়।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বিদেশি চাপকে ভয় পায় না। বিএনপি যেসব অযৌক্তিক এবং সংবিধান পরিপন্থী দাবি তুলেছে, তা মেনে নেয়া হবে না। সংসদ ভেঙে দিলে, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে রাষ্ট্রক্ষমতা কার হাতে দেয়া হবে? অনির্বাচিতদের হাতে ক্ষমতা দেয়ার নজির জনগণ দেখেছে। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন হবে।

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা আদালতের বিষয়, আইনের মাধ্যমেই সমাধানে আসতে হবে। এখানে সরকারের কিংবা আওয়ামী লীগের কিছু করার নেই।

হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ চায় বিএনপিসহ সব নিবন্ধিত দল একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিক। বিএনপি যদি এবারও নির্বাচনে না আসে, তারা নিজের ক্ষতি নিজেই করবে। তবে নির্বাচন থেমে থাকবে না। প্রয়োজনে বিএনপি ছাড়া অন্য সব দলের অংশগ্রহণে যথাসময়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশে নির্বাচনে অংশ নেয়ার মতো আরো অনেক দল আছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপির নির্বাচনকেন্দ্রিক দাবি দাওয়া প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেছেন, বিএনপির এসব দাবি- মামাবাড়ির আবদারের মতো। অযৌক্তিক, অসাংবিধানিক এসব দাবি মেনে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই গঠিত হবে নির্বাচনকালীন সরকার। সংসদে যাদের প্রতিনিধিত্ব নেই তাদের এই সরকারে রাখা হবে না। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে। নির্বাচনকালীন সরকার ইসিকে সাংবিধানিক সহযোগিতা দেবে।

জেডআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত