ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

সিনহার অ্যাকাউন্টে ৪ কোটি টাকা, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:৪৭  
আপডেট :
 ০৪ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:৫৮

সিনহার দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে দুদক!

ফারমার্স ব্যাংকের দুইটি একাউন্ট থেকে সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার একাউন্টে চার কোটি টাকা লেনদেনের ঘটনায় অনিয়ম ও জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার বিকালে দুদকের সেগুনবাগিচা কার্যালয়ে চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সাংবাদিকদের একথা জানান।

দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ফারমার্স ব্যাংকের দুটি একাউন্ট থেকে চার কোটি টাকা ঋণের ব্যাপারে আমরা তদন্ত করেছি। তদন্ত শেষ হয়ে গেছে। অনেকের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে বা চিহ্নিত করা হয়েছে। ঋণ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। সেখানে অনেকেরই সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। আমরা সেগুলো বিচার বিশ্লেষণ করছি।

সাবেক প্রধান বিচারপতি জড়িত কিনা এমন প্রশ্নের দুদক চেয়ারম্যান বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি থাকুক আর যেই; থাকুক যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে বা যাবে তাদের বিরুদ্ধেই আমরা ব্যবস্থা নিবো।

তবে এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির নাম বলতে রাজি হন নি দুদক প্রধান। তিনি বলেন, দুটি একাউন্ট থেকে ঋণ প্রক্রিয়া এবং এই টাকা মানি লন্ডারিং বা বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া, নগদ উত্তোলন এসকল বিষয়ে অনেক কিছু এসেছে।

দুদকের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, যা হয়, তাই হবে। যদি অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে আইন অনুযায়ী মামলা করা হবে।

দুদক সূত্রে জানা যায়, ফারমার্স ব্যাংক থেকে ব্যবসায়ী নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা এবং মোহাম্মদ শাহজাহান ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে একই দিনে ২ কোটি করে ৪ কোটি টাকা উত্তোলন করেন। ওইদিনই তারা টাকাগুলো পে-অর্ডারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির (সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা) অ্যাকাউন্টে জমা দেন। এরপর সেই অ্যাকাউন্ট থেকে একই দিন টাকাগুলো তুলে আত্মসাৎ করা হয়।

অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন।

দুদকের পক্ষ থেকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ওই ব্যক্তির নাম উল্লেখ না থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলতে এসকে সিনহাকে বোঝানো হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের সূত্রে প্রথম থেকে বলে আসছে।

এই অভিযোগের অনুসন্ধানে গত ৬ মে মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা নামে কথিত দুই ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। জিজ্ঞাসাবাদের পর ওই দুজনের আইনজীবী বিচারপতি সিনহার সঙ্গে লেনদেনের কথাই বলেন।

আইনজীবীরা জানান, উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের পাঁচ কাঠা জমির উপর ৫১ নম্বরের ছয়তলা বাড়িটির মালিক সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহা। তিনি ছয় কোটি টাকায় বাড়িটি বিক্রি করেন টাঙ্গাইলের বাসিন্দা রনজিত চন্দ্র সাহার স্ত্রী শান্ত্রী রায়ের কাছে।

তারা জানান বলেন, ২০১৬ সালের মে মাসের দিকে বায়না দলিলের মাধ্যমে বিচারপতি এস কে সিনহার কাছ থেকে বাড়িটি শান্ত্রী রায় মালিক হন। তখনই বাড়ি বাবদ দুই কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়। এরপর একই বছরের ৮ নভেম্বর দুইটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম কোর্ট শাখায় বিচারপতি এস কে সিনহার অ্যাকাউন্টে চার কোটি টাকা জমা দেওয়া হয়। পরে ২৪ নভেম্বর এস কে সিনহা হস্তান্তর দলিলের মাধ্যমে শান্ত্রী রায়কে বাড়িটি লিখে দেন।

তারা আরো জানান, নিরঞ্জন ও শাহজাহান ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে চার কোটি টাকা ঋণ নেন। এতে থার্ড পার্টি হিসেবে শান্ত্রী রায়ের বিভিন্ন জমি মর্টগেজ হিসাবে ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়। এই ঋণ থেকেই বাড়ির চার কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়।

রনজিত চন্দ্রের চাচা নিরঞ্জন সাহা আর শাহজাহান হচ্ছে রনজিতের বন্ধু। তাদের সবার বাড়ি টাঙ্গাইল।

এ ঘটনায় গত ২৬ সেপ্টেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম শামীমসহ ৬জনকে সাড়ে ৬ ঘন্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। অন্যরা হলেন- বেসরকারি ব্যাংকটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুতফুল হক, প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট গাজী সালাউদ্দিন, সাবেক ক্রেডিট অফিসার ও সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট শফিউদ্দিন আসকারী আহমেদ ও নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালমা সুলতানা।

জিজ্ঞাসাবাদ করা ৬ জন ছাড়াও ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক এসভিপি জিয়া উদ্দিন আহমেদকে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে পুলিশের ইমিগ্রেশন অফিসকে চিঠি দেয় দুদক।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত