ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

গ্রেনেড হামলা: ঝিনাইদহে বাড়ি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুজনের

  ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:৫৮

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বুলবুল-রতনের জেলা ঝিনাইদহে উচ্ছ্বাস
উজ্জ্বল ওরফে রতনের বাড়ি ঝিনাইদহ শহরের পবহাটি এলাকায়।

ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ১৪ বছর আগে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীবিরোধী সমাবেশে নৃশংস গ্রেনেড হামলা মামলা রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৯ জনের মধ্যে দুজনের বাড়ি ঝিনাইদহে।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১০ নাম্বার আসামি আবুল কালাম আজাদ বুলবুলের বাড়ি শৈলকুপা উপজেলার বকসিপুর গ্রামে। ১৬ নাম্বার আসামি উজ্জ্বল ওরফে রতন ঝিনাইদহ শহরের পবহাটি এলাকার বেলাত আলীর ছেলে।

বুলবুল এক সময় মেয়ে সেজে যাত্রাদলে নাচতেন। শৈলকুপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ এলাকায় বিয়ের পর দর্জির দোকান দিয়ে সেখানেই থাকতেন তিনি। সেখান থেকে মুফতি হান্নানের সঙ্গে তার পরিচয়। বুলবুলের দোকানে মুফতি হান্নানের নিয়মিত আসা যাওয়া ছিল। ২০০৭ সালে ওই দোকান থেকেই মুফতি হান্নানকে আটক করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

এদিকে, রতন ঝিনাইদহ শহরে বাইসাইকেল মেকানিক হিসেবে কাজ করতেন। এলাকার কিংকন ও আরিফ বিল্যাহর মাধ্যমে মুফতি হান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তার। ২০০৭ সালে মাগুরার শ্রীপুর থেকে র‌্যাব তাকে আটক করে। এরপর পরিবার জানতে পারে রতন গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি।

এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৯ জনের মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর রয়েছেন। একইসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে আরো ১১ আসামিকে।

বুধবার পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূরউদ্দিন এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার পর ঝিনাইদহে আনন্দ মিছিল করেছে জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দুপুরে শহরের পোস্ট অফিস মোড় থেকে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে পায়রা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।

সেদিন যা ঘটেছিল: ২০০৪ সালের ২১ অাগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সন্ত্রাসবিরোধী শোভাযাত্রা হওয়ার কথা ছিল। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের মাঝখানে একটি ট্রাক এনে তৈরি করা হয়েছিল মঞ্চ। শোভাযাত্রার আগে সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছিলেন তখনকার বিরোধী দলীয় নেতা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বক্তৃতা শেষ করে তিনি ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলার সময় ঘটে পর পর দুটি বিস্ফোরণ। এরপর সামান্য বিরতি দিয়ে একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণ শুরু হয়। তারই মধ্যে শোনা যায় গুলির আওয়াজ।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকরা তখনও ভয়াবহতার মাত্রা বুঝে উঠতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে এগোতেই তারা দেখতে পান শত শত জুতো, স্যান্ডেল রাস্তায় ছড়ানো। তারই মধ্যে পড়ে রয়েছে মানুষের রক্তাক্ত নিথর দেহ; আহতদের আর্তনাদে ভয়াবহ এক পরিস্থিতি। হামলায় আহতদের সাহায্য করতে আওয়ামী লীগের অন্য নেতাকর্মীরা যখন ছুটে গেলেন, তখন পুলিশ তাদের ওপর টিয়ার শেল ছোড়ে। পুলিশ সে সময় হামলার আলামত সংগ্রহ না করে তা নষ্ট করতে উদ্যোগী হয়েছিল বলেও পরে অভিযোগ ওঠে।

ওই হামলায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং কয়েকশ জন আহত হন। মঞ্চে উপস্থিত নেতাকর্মীরা বিস্ফোরণে মধ্যে মানববর্ম তৈরি করায় সেদিন অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়।

সেদিনের হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। আইভি রহমান ৫৮ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ২৪ অাগস্ট মারা যান। প্রায় দেড় বছর পর মৃত্যু হয় ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের। পরে সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে।

২১ অাগস্ট হামলায় নিহত অন্যরা হলেন শেখ হাসিনার দেহরক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রহমান, হাসিনা মমতাজ, রিজিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মোশতাক আহমেদ, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন, আব্বাছ উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসিরউদ্দিন, আবুল কাসেম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম, জাহেদ আলী, মোতালেব ও সুফিয়া বেগম। একজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত