ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

পঞ্চগড়ে গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা

  পঞ্চগড় প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ১৪:৩৭  
আপডেট :
 ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:২১

পঞ্চগড়ে গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় শেফালি আক্তার (২০) নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। ওই গৃহবধূর পরিবারের দাবি তাকে মারধর করে মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ তার শশুর, শাশুড়ি ও ননদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। সোমবার সকালে স্বামীর নির্যাতনের শিকার হওয়া ওই গৃহবধূ পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে মারা যান। এরপরেই সটকে পড়ে ওই গৃহবধূর স্বামী।

স্থানীয়রা জানায়, প্রায় সাড়ে ৩ বছর আগে তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের ব্রহ্মতল এলাকার সাইবুল ইসলামের মেয়ে শেফালি আক্তারের সাথে একই উপজেলার তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের দর্জিপাড়া গ্রামের খাদেমুল ইসলামের ছেলে লিটন ইসলামের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে দুই বছরের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকে দাবিতে সামান্য বিষয় নিয়ে শেফালিকে মারধর করতো লিটন। এ বিষয়ে একাধিকবার বিচার ও শালিস বৈঠকও হয়েছে। গত রোববার দুপুরে ১০ দিন বাবার বাড়ি থাকার পর সন্তান নিয়ে শেফালি স্বামীর বাড়ি ফিরলে পারিবারিক কলহের জেরে আবারও মারধর করে লিটন। এক পর্যায়ে সে মাটিতে পড়ে গেলে তার মুখে কীটনাশক ঢেলে দেয় স্বামী ও শাশুড়ি।

পরে পরিবারের অন্য সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সোমবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে। মারা যাওয়ার আগে পরিবারের সদস্যদের এসব জানিয়েছে শেফালি। এ ঘটনায় ওই এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা এ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। এরই মধ্যে পুলিশ ওই গৃহবধূূর শশুর খাদেমুল ইসলাম, শাশুড়ি সালমা ওরফে ডালিমন ও ননদ খায়রুন আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। তবে গৃহবধূর মৃত্যুর পর থেকেই তার স্বামী লিটন গা ঢাকা দিয়েছে।

শেফালির বাবা সাইবুল ইসলাম জানান, বিয়ের পর থেকেই লিটন ও তার পরিবারের লোকজন আমার মেয়েকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছে। গতকাল আমার সুস্থ্য মেয়েকে তার শশুর বাড়িতে পাঠিয়ে দেই কিন্তু তার স্বামী ও পরিবারের লোকজন আমার মেয়েকে মারধর করে মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে হত্যা করেছে। এমনকি ওরা আমাদের কিছুই জানায়নি। স্থানীয়রা আমাদের এই খবর দেয়। এর আগেও লিটন ও তার পরিবারের সদস্যরা যৌতুকের জন্য আমার মেয়েকে নির্যাতন করতো। একাধিকবার শালিস হলেও কোন লাভ হয়নি।

শেফালির মা তসলিমা আক্তার জানান, পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমার মেয়ের জ্ঞান ফিরলে সে জানায়, তাকে মারধরের পর মুখে বিষ ঢেলে দিয়েছে তার স্বামী ও শাশুড়ি। ওরা আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। আমি ওদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

প্রতিবেশি সলেমান আলী জানান, এর আগেও লিটন শেফালিকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতো। এ নিয়ে একাধিকবার বিচার শালিসও হয়েছে। তারপরও লিটন ও তার পরিবারের নির্যাতন বন্ধ হয়নি। ওরা মেয়েটিকে বাঁচতেই দিলো না। আমরা এলাকাবাসী লিটনসহ ওই পরিবারের সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।

পঞ্চগড় সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল জলিল জানান, প্রাথমিকভাবে ওই গৃহবধূর মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে এবং গৃহবধূর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।

তেঁতুলিয়া মডেল থানার ওসি জহুরুল হক জানান, এ বিষয়ে ওই গৃহবধূর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যে ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তার স্বামী পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মামলা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত