ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ, স্বামী গ্রেপ্তার

  পঞ্চগড় প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ১৮:৩৩  
আপডেট :
 ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ২০:১১

গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় লিজা আক্তার (৩৫) নামে এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পুলিশ ওই গৃহবধূর স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে জেলার বোদা উপজেলার বেংহাড়ি বনগ্রাম ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। রাতেই খবর পেয়ে বোদা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত লিজার লাশ বাড়ির উঠান থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

বুধবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহত গৃহবধূর ছোট ভাই বাদী হয়ে ওই গৃহবধূর স্বামী ও তিনজনসহ অজ্ঞাতনামা আরও তিনজনকে আসামি করে বোদা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।

মামলায় উল্লিখিত আসামিরা হলেন নিহত গৃহবধূর স্বামী আজিজুল ইসলাম (৫৫), তার প্রথম স্ত্রীর বড় ছেলে আল আমিন (২৫) ও আল আমিনের শ্বশুর আব্দুস সালাম (৫০)।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ১০ বছর আগে জেলার বোদা উপজেলার বেংহাড়ি বনগ্রাম ইউনিয়নের আজিজুল ইসলাম তার প্রথম স্ত্রী তিন সন্তান রেখে মারা গেলে একই উপজেলার ময়দান দিঘি ইউনিয়নের গাইঘাটা এলাকার আব্দুল গফুরের মেয়ে লিজা আক্তারকে পারিবারিক ভাবেই বিয়ে করেন। বর্তমানে তার দ্বিতীয় স্ত্রী দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে মামুন (৬) ও ছোট ছেলে মোমিন (৪)। প্রথম স্ত্রীর দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিজ নিজ সংসার নিয়ে অন্যত্র থাকেন।

সম্প্রতি আজিজুল তার ৫০ শতক জমি বিক্রি করে তার প্রথম স্ত্রীর সন্তানদের টাকা দেয়ার পর দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করেন বসতভিটার দশ শতক জমি তার ছেলেদের নামে লিখে দিতে। কিন্তু আজিজুল দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার সন্তানদের কোন জমি না দিয়ে বসতভিটাও বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এই নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া লেগেই ছিলো। নিহত গৃহবধূর পরিবারের দাবি এরই জের ধরে মঙ্গলবার রাতে ঝগড়া-ঝাটির এক পর্যায়ে আজিজুল, তার প্রথম স্ত্রীর বড় ছেলে আল আমিন ও তার শ্বশুর আব্দুস সালাম তাকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে বাড়ির আঙ্গিনার আমগাছে ঝুলিয়ে রাখার চেষ্টাও করে। এরপর লাশটি মাটিতে নামিয়ে রেখে স্থানীয়দের তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে বলে জানায়।

তবে এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আজিজুলের ছয় বছরের ছেলে মামুন জানান, তার বাবা ও বড় ভাই আলামিনের শ্বশুর তার মাকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় ওই এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নিহত গৃহবধূর পরিবারের স্বজনসহ স্থানীয়রা এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। নিহত গৃহবধূর ছোট ভাই বাদী হয়ে ওই ওই গৃহবধূর স্বামী আজিজুলসহ তিনজন এবং অজ্ঞাতনামা আরও তিনজনকে আসামী করে বোদা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। বোদা থানা পুলিশ ওই গৃহবধূর স্বামী আজিজুলকে গ্রেফতার করেছে। তবে অন্যরা পতালক রয়েছে।

ওই গৃহবধূর বাবা আব্দুল গফুর জানান, আমার মেয়েকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছিল আজিজুল। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।

মামলার বাদী ও নিহত গৃহবধূর ছোট ভাই হাসিবুল ইসলাম জানান, আজিজুল তার ৫০ শতক জমি বিক্রি করে টাকা প্রথম স্ত্রীর তিন সন্তানকে দিয়ে দিয়েছে। তার সর্বশেষ বসতভিটার ১০ শতক জমিও বিক্রি করে দেয়ার চেষ্টা করছিল। আমার বোন তাতে বাঁধা দেয় এবং তার দুই সন্তানের আশ্রয়ের জন্য ওই ১০ শতক জমি তাদের নামে লিখে দিতে বলে। এই নিয়ে আজিজুল আমার বোনকে বিভিন্ন সময় নির্যাতন করতো। বিষয়টি নিয়ে বিচার শালিসও হয়েছে। কিন্তু আজিজুল কারো বিচার মানে না। কয়েক দিন আগে আমাকে আজিজুল হুমকি দিয়ে বলে, আমার ভাত আর তোর বোনের কপালে নেই। সে পরিকল্পিতভাবেই আমার বোনকে হত্যা করেছে। আমি আজিজুলসহ আমার বোন হত্যার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন জানান, আজিজুল ভিটেমাটি বিক্রি করার পরিকল্পনা করছিল। এটা জানার পর তার দ্বিতীয় স্ত্রী বাঁধা দেয়। এই নিয়ে উভয়ের মধ্যে ঝগড়া হয়। গৃহবধূ লিজা ইউনিয়ন পরিষদে বিচার দাবি করে। কিন্তু তার আর বিচার পাওয়া হলো না।

বোদা থানার ওসি একে এম নুরুল ইসলাম জানান, ওই গৃহবধূর লাশ উঠোনে পড়ে ছিল। লাশের প্রাথমিক সুরতহাল শেষে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় ওই গৃহবধূর ভাই থানায় ৩ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছে। এর মধ্যে ওই গৃহবধূর স্বামীকে আটক করা হয়েছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত