ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১২ মিনিট আগে
শিরোনাম

শ্রম বিল সংসদে

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০১৮, ২১:৪৭

শ্রম বিল সংসদে

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কনভেনশন অনুযায়ী বাংলাদেশের বিদ্যমান শ্রম আইনকে যুগোপযোগী ও শ্রমিকবান্ধব করতে সংসদে বিল ‍উত্থাপন করা হয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল ২০১৮’ সংসদে উত্থাপন করলে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে একদিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।

এরআগে, গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রস্তাবিত আইনটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। এ অধিবেশনেই বিলটি পাস হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে একবার শ্রম আইন সংশোধন করা হয়েছিল। তখন এ আইনের ৯০টি ধারা সংশোধন করা হয়। গত ৩ সেপ্টেম্বর শ্রম আইনের সংশোধনী মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।

বিদ্যমান শ্রম আইনে ৩৫৪টি ধারা রয়েছে। এই সংশোধনী প্রস্তাবে দুটি ধারা, চারটি উপধারা, আটটি দফা সংযোজন করা হয়েছে। ৬টি উপধারা বিলুপ্ত করা হয়েছে। ৪১টি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনে কোনও মহিলা শ্রমিক প্রতিষ্ঠানের মালিককে নোটিশ দেওয়ার আগেই যদি সন্তান প্রসব করে থাকেন, তবে সন্তান প্রসবের প্রমাণ পেশ করার পরবর্তী তিন কর্মদিবসের মধ্যে সম্পূর্ণ সময়ের জন্য প্রদেয় প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা দিতে হবে।

আইনের ৪৭ ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করে বলা হয়েছে, নারী শ্রমিককে প্রসব পরবর্তী আট সপ্তাহ পর্যন্ত কাজে অনুপস্থিত থাকার অনুমিত দিতে হবে। এই বিধানে আরও বলা হয়েছে, ছুটিতে যাওয়ার আগে কোনও মহিলা শ্রমিকের গর্ভপাত ঘটলে তিনি প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা পাবেন না। তবে স্বাস্থ্যগত কারণে ছুটির প্রয়োজন হলে তিনি তা ভোগ করতে পারবেন।

আইনের ১০৩ ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করে বলা হয়েছে, শ্রমিক প্রতি সপ্তাহে কারখানা ও শিল্পের ক্ষেত্রে একদিন এবং দোকান ও প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে দেড় দিন ছুটি পাবেন। ১১৮ ধারা সংশোধনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কোনও শ্রমিককে কোনও উৎসব বা ছুটির দিনে কাজ করতে বলা যাবে। তবে এ জন্য তাকে একদিনের বিকল্প ছুটি ও দুই দিনের ক্ষতিপূরণমূলক মজুরি দিতে হবে।

প্রস্তাবিত আইনে কারখানার কর্মরত ৩০ শতাংশ শ্রমিকের পরিবর্তে ২০ শতাংশের সম্মতিতে ট্রেড ইউনিয়ন করা যাবে। দুই-তৃতীয়াংশ শ্রমিকের সমর্থনের স্থলে ৫১ শতাংশ শ্রমিকের সমর্থন সাপেক্ষে ধর্মঘট করা যাবে।

প্রস্তাবিত আইনে বেআইনি ধর্মঘটের শাস্তি কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আগে বেআইনি ধর্মঘট করলে শাস্তি ছিল একবছর কারাদণ্ড এবং ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড। নতুন আইনে সাজা ছয় মাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে জরিমানা আগের মতোই ৫ হাজার টাকা থাকছে।

বিলে কর্মক্ষেত্রে কর্মরত অবস্থায় কোনও শ্রমিক মারা গেলে দুই লাখ টাকা এবং দুর্ঘটনায় স্থায়ীভাবে পঙ্গু হলে আড়াই লাখ টাকা শ্রমিককে দিতে হবে। আগে এই ক্ষতিপূরণ ছিল একলাখ ২৫ হাজার টাকা।

বিলে উৎসবভাতা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আরেকটি উল্লেখযোগ্য সংশোধনী হল, ১৪ বছরের কমবয়সী কোনও শিশুকে কোনও কারখানায় নিয়োগ দেওয়া যাবে না। ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোরদের কারখানায় হালকা কাজে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে। আগে ১২ বছরের শিশুরা হালকা কাজের সুযোগ পেতো। ১৪ বছরের নিচে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনে শ্রমিকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, কোনও বয়সের শিশুকেই ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ করা উচিত নয়। কিন্তু অনেক দরিদ্র ব্যক্তি পরিবারে আর্থিক সমর্থনের জন্যই তাদের শিশু সন্তানদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত করেন।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কিত বিবৃতিতে মন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ প্রেক্ষাপটে সুষ্ঠু শিল্প সম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে কর্মস্থলে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে, পেশাগত স্বাস্থ্য, নিরাপদ কর্ম পরিবেশ সৃষ্টি, ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের প্রক্রিয়া সহজ করা, শ্রমিকের অধিকার সুরক্ষা করা এবং জাতীয় উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য এই বিল আনা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত