ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

আইনের বেড়াজালে ৯ বছর বন্দী শিক্ষক

  জামালপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০১৮, ০৬:৩০

আইনের বেড়াজালে ৯ বছর বন্দী শিক্ষক

জামালপুরের সরিষাবাড়ীর রেজাউল করিম হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী শিক্ষক আজমত আলী (৭০) রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমতার আদেশে মুক্তি পেলেও ৯ বছর ধরে কারাগারে বন্দী রয়েছেন।

রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় মুক্তির তথ্য গোপন করে বাদী সুপ্রিম কোর্টে লিপ টু আপিল করায় জেলের ভেতর মৃত্যুর প্রহর গুনছে সাজামুক্ত ৭০ বছর বয়সি এই শিক্ষক। তার মুক্তির পথ চেয়ে আছে দরিদ্র পরিবারটি। বাবার মুক্তির আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছে সন্তানেরা।

আদালত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারাগারের নথিপত্র সুত্রে জানা যায়, ১৯৮৭ সালের পহেলা এপ্রিল জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পাখিমারা গ্রামে জমি সংক্রান্তে বিরোধে লাঠির আঘাতে গুরুতর আহত রেজাউল করিম (২০) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫দিন পর মারা যায়। ৬ এপ্রিল নিহতের পিতা কলিমুল্লাহ সরকার বাদী হয়ে সরিষাবাড়ী থানায় শিক্ষক আজমত আলীকে প্রধান আসামী করে ১৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় ১৯৮৯ সালের ৮ এপ্রিল জেলা ও দায়রা জজ আদালত আজমত আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন।

১৯৯১ সালের ১৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমা বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কারা শাখা-২ এর স্বারক নং-৬/পি ৭০/১০ কারা/২ আদেশের ৩ ও ২ অনুচ্ছেদ অনুসারে ১৯৯৬ সালের ২১ অক্টোবর মুক্তি পায় আজমত আলী। মুক্তির পূর্বের তার করা হাইকোর্টের আপিলে ২০০৫ সালের ২ মার্চ ওই মামলায় খালাসও পান তিনি। মামলার বাদী কলিমুল্লাহ সরকার রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমার আদেশে আসামী আজমত আলীর মুক্তির বিষয়টি গোপন করে সুপ্রিম কোর্টে লিপ টু আপিল করার প্রেক্ষিতে সুপ্রিমকোর্ট আসামীকে নিম্ন আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। আদালত আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করলে পুলিশ ২০০৯ সালের ১৯ অক্টোবর আজমত আলীকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করে। আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করে। সেই থেকে ৯ বছর ধরে আইনের বেড়াজালে কারাগারে আটক রয়েছেন শিক্ষক আজমত আলী। এক বছর আগে মামলার বাদী কলিমুল্লাহ সরকারও মারা গেছেন।

শিক্ষক আজমত আলীর মেয়ে বিউটি বেগম (৩৮) বলেন, আমার বাবা রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় মুক্তির পর বাদী তথ্য গোপন করে সুপ্রিমকোর্টে লিভ টু আপিল করায় ৯ বছর ধরে জেল খাটছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি জেলে থাকায় আমাদের পরিবার দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে পড়েছে। ৭০ বছর বয়সে জেলের অভ্যন্তরে নানান জটিল রোগে ভুগছেন তিনি। দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বাবার মুক্তির পথ খুঁজে পাচ্ছিনা। রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় মুক্তির কাগজপত্রাদি দেখে আমার বাবার মুক্তির বিষয়টি বিবেচনার জন্য বিচার বিভাগ ও সরকারের উর্ধ্বতন মহলের প্রতি আবেদন জানাচ্ছি।

মামলার আইনজীবী জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, নিয়ম অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমার আদেশে মুক্তির পর হাইকোর্টে লিপ টু আপিল করা যায়না। বাদী সুচতুরভাবে তথ্যটি গোপন করে লিপ টু আপিল করেন। হাইকোর্টের মাননীয় রেজিস্ট্রারের দৃষ্টিগোচর হলে লিপ টু আপিল সুপ্রিমকোর্ট গ্রহণ করতো না। একাধিকবার জেলা দায়রা জজের কাছে এ বিষয়ে প্রার্থনা জানিয়েছি। জেলা দায়রা জজ ২০১২ সালের ৩ মার্চ সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার বরাবর অত্র আদালতের নিষ্পত্তিকৃত দায়রা মামলা নং ৪১/১৯৮৮ এর আসামী মো: আজমত আলী এর অব্যাহতির বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান প্রসঙ্গে অফিসিয়াল চিঠি পাঠিয়েছেন।

জামালপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার মো: মুখলেছুর রহমান কারাগারে আজমত আলী আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, কয়েদি আসামী আজমত আলী ৯ বছর যাবৎ জেলে রয়েছেন। তার বিষয়ে আমরা জেল কর্তৃপক্ষও সহযোগীতা করছি। আমরাও চাই তার মুক্তি হোক।

বাংলাদেশ জার্নাল/জেডআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত