মঈনুলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০১৮, ১৮:৪৮
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বুধবার বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সদস্য সুমনা আক্তার লিলি।
আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলাটি গুলশান থানাকে এজাহার হিসেবে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বাদী জবানবন্দিতে বলেন, আসামী ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন গত ১৬ অক্টোবর ৭১ টেলিভিশনের লাইভ টেলিকনফারেন্সে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির প্রশ্নের জবাবে তাকে ‘চরিত্রহীন’ বলেন। সেখানেই তিনি থেমে থাকেননি। এরপর তিনি গত ১৮ অক্টোবর ইলেকট্রানিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বলেছেন, শুধু তিনি চরিত্রহীন বলছেন না, আরো অনেক মানুষ তাকে (মাসুদা ভাট্টি) চরিত্রহীন বলছেন। সর্বশেষ তিনি সাংবাদিক রব মজুমদারের সঙ্গে টেলিফোনে ওই সাংবাদিককে (মাসুদা ভাট্টি) একাধিকবার বাজে মেয়ে বলে সম্বোধন করেছেন। তার ওই সমস্ত বক্তব্য দেশের সমস্ত ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় এবং পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তার ওই মানহানিকর চরিত্রহীন বক্তব্যে শুধু সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির মানহানি ঘটেনি। একজন নারী হিসেবে বাদীরও মানহানি ঘটেছে। যা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫ (ক) ও ২৯ (২) ধারার অপরাধ।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ১৬ অক্টোবর রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ৭১ এ প্রচারিত মিথিলা ফারজানা সঞ্চালিত টক শো ৭১ জার্নাল চলাকালে মাসুদা ভাট্টি ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনকে প্রশ্ন করেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে আপনি যে হিসেবে উপস্থিত থাকেন, আপনি বলেছেন, একজন নাগরিক হিসেবে উপস্থিত থাকেন, কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে বলেন, আপনি জামায়াতের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থাকেন।’ মাসুদা ভাট্টির এই কথার জবাবে মঈনুল হোসেন বলেন, ‘আপনার দুঃসাহসের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। আপনাকে আমি চরিত্রহীন বলে মনে করতে চাই।’ একজন নারীর প্রতি ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের এমন ইচ্ছাকৃত ধারাবাহিক কুৎসা রটনা ও আক্রমণাত্মক বক্তব্য মাসুদা ভাট্টি ও নারী জাতির প্রতি বিরক্তিকর, অপমানজনক, অপদস্থমূলক এবং হেয়প্রতিপন্নকর বলে বাদী মনে করেন। প্রকাশ্যে এ ধরনের বক্তব্য প্রকাশ করার কারণে মঈনুল হোসেন মাসুদা ভাট্টি তথা নারী জাতির সম্মানহানি নিরসনকল্পে আজ পর্যন্ত প্রকাশ্যে কোনোরূপ ক্ষমা প্রার্থনা কিংবা দুঃখ প্রকাশ করেননি।
বাদী আরো উল্লেখ করেন, মঈনুল হোসেন ২১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবরের মধ্যে পুনরায় একটি টেলিফোনের অডিও রেকর্ড ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে প্রকাশ করেন। ওই অডিও রেকর্ডটি তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন এবং মাসুদা ভাট্টির দায়ের করা মামলায় আগাম জামিন পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে থাকেন এবং দৈনিক প্রথম আলোর জরিপের বক্তব্য প্রকাশ করেন। মাসুদা ভাট্টিকে ৫% ভালো আর ৯৫% খারাপ মহিলা হিসেবে প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘একটা মেয়ে লোক যে এত বাজে হতে পারে তা তো আমি আগে জানতাম না।’ বাদী ইউটিউবে অডিও রেকর্ডটি শুনতে পান। মঈনুল হোসেন ইংরেজী দৈনিক নিউ নেশন পত্রিকায় প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মাসুদা ভাট্টি সম্পর্কিত বিতর্কের ব্যাখার আড়ালে পুনরায় ফেসবুকে মাসুদা ভাট্টির ব্যক্তিগত চরিত্র সম্পর্কে জঘন্য ধরনের মন্তব্য করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন বাদী।
ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন এ ধরনের বক্তব্য প্রদান করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫ (ক) ও ২৯ (২) ধারা অনুযায়ী অপরাধ করেছেন। আর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর ৫৩(খ) ধারা অনুযায়ী মঈনুল হোসেন ঘটনার সময়ে পর পর দুইবার ওই ধারার অধীনে একই রকমের অপরাধ সংঘটনের কারণে তার অপরাধ অজামিনযোগ্য। পর পর দুইবার একই অপরাধ করার কারণে ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার জারির আবেদন করেন।
এছাড়াও একই অভিযোগে নেত্রকোনা, নড়াইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মাগুরা ও ঢাকা সিএমএম আদালতে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
বাংলাদেশ জার্নাল/জেডআই