ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২২ মিনিট আগে
শিরোনাম

চাকরিতে বয়সসীমা বাড়ানোর আন্দোলনে পুলিশে লাঠিচার্জ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:৫৭  
আপডেট :
 ০৩ নভেম্বর ২০১৮, ১৬:০৩

চাকরিতে বয়সসীমা বাড়ানোর আন্দোলনে পুলিশে লাঠিচার্জ

সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ বছর করার দাবিতে আন্দোলনরত বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ ও বাংলাদেশ ছাত্র পরিষদের বিক্ষোভ কর্মসূচি পুলিশি বাধায় পণ্ড হয়েছে। রাজধানীর শাহবাগে শনিবার পুলিশ আন্দোলনকারীদের কর্মসূচিতে বাধা দেয়।

পুলিশের ভাষ্য, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টাকারী ছয়–সাতজনকে আটক করা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের দাবি, তাদের ১২ জনকে পুলিশ আটক করেছে এবং পুলিশের লাঠিচার্জে ১০ জন আহত হয়েছেন।

সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫-প্রত্যাশীদের পূর্বঘোষিত এই বিক্ষোভ কর্মসূচি দুপুর ১২টা থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল। কর্মসূচির প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে দুপুর সাড়ে ১২টা বেজে যায়। আন্দোলনকারীরা শাহবাগে অবস্থিত জাতীয় গণগ্রন্থাগার এলাকায় সংগঠিত হয়ে মিছিল নিয়ে জাতীয় জাদুঘরের সামনে যেতে চান। কিন্তু দুপুর ১২টা থেকে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসানের নেতৃত্বে পুলিশ গ্রন্থাগারের ফটক আটকে সামনে অবস্থান নেয়।

দুপুর ১২টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত ফটকের দুই পাশে থাকা পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা চলতে থাকে। আন্দোলনকারীরা পুলিশের উদ্দেশে বলতে থাকেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। কোনো অন্যায় এ দেশে থাকতে দেব না। আমরা কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করব না। গেট খুলে দেন। আমরা রাস্তা অবরোধ করব না। এখান থেকে শহীদ মিনারের দিকে চলে যাব।

পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের বলা হয়, রোববার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রধানমন্ত্রীর প্রোগ্রাম আছে। তাই এই এলাকায় কোনো কর্মসূচি করা যাবে না।

বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের ক্রমাগত ধাক্কাধাক্কিতে গণগ্রন্থাগারের ফটকের তালা খুলে যায়। আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে বাইরে আসতে চান। তখন পুলিশ সেখান থেকে আন্দোলনকারীদের কয়েকজনকে আটক করে। আটকের পরও আন্দোলনকারীদের ২৫ থেকে ৩০ জন গণগ্রন্থাগারের ফটকের ভেতরে রাস্তায় বসে পড়েন। বেলা ১টা ১০ মিনিট পর্যন্ত তারা অবস্থানে ছিলেন। পরে পুলিশ তাদের আটক না করার নিশ্চয়তা দিলে তারা চলে যান।

বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক সঞ্জয় দাস জানান, আন্দোলনকারী নয়জন ছেলে ও তিনজন মেয়েকে পুলিশ আটক করেছে এবং ১০ জন আন্দোলনকারী পুলিশের হামলায় আহত হয়েছেন ৷ আহত ব্যক্তিদের একজনের হাতে এবং আরেকজনের কাঁধে গুরুতর আঘাত লেগেছে। চিকিৎসা নিতে তাঁরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। অন্যরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছেন।

বাংলাদেশ ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম সেলিম জানান, কর্মসূচি থেকে আন্দোলনকারীদের ১৫ থেকে ২০ জনকে পুলিশ আটক করেছে এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

পুলিশের পক্ষ থেকে রমনা জোনের এডিসি এইচ এম আজিমুল হক বলেন, ছাত্রদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা কথা শোনেননি। এর আগে তারা শাহবাগ অবরোধ করে রেখেছিলেন। রোববার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রোগ্রাম রয়েছে ৷ তাই এই এলাকায় বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের ৬-৭ জনকে বেশি উত্তেজিত মনে হয়েছিল বলে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে।

বাংলাদেশে সরকারি চাকরি শুরু করার বয়স-সীমা বাড়ানোর দাবিতে গত ছয় বছর ধরে আন্দোলন করে আসছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ নামে এ সংগঠন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির গত জুনে এক সভায় সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার সুপারিশ করে। এর পর সরকার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করলেও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত আগস্টে ইঙ্গিত দেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদে বয়সসীমা বাড়ছে না।

বিক্ষোভকারীদের দাবি, সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৫৭ বছর থেকে ৫৯ বছর করেছে সরকার। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৬০ বছর করা হয়েছে। শিক্ষকদের ৬৫ বছর ও বিচারপতিদের অবসরের বয়স ৬৭ বছর করা হয়েছে। অথচ সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা সেই ৩০ বছরই রাখা হয়েছে। এতে দিন দিন বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই তারা সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ বছর করার দাবি জানান।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশন জটের কারণে একজন শিক্ষার্থীর লেখাপড়া শেষ করতেই চাকরিতে ঢোকার বয়স ফুরিয়ে আসে বলেও অভিযোগ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

১ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ ও বাংলাদেশ ছাত্র পরিষদ যৌথভাবে এই বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিল।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত