ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালু করতে নেই কোনো উদ্যোগ

  ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০১৮, ১৬:০৩

ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালু করতে নেই কোনো উদ্যোগ

উত্তরের অবহেলিত জেলাগুলোর মধ্যে ঠাকুরগাঁও অন্যতম। স্বাধীনতার পর থেকে এ জেলায় তেমন ভারী কোন শিল্প কলকারখানা আজো গড়ে উঠেনি। ব্রিটিশ আমলে এখানে গড়ে ওঠা একটি বিমানবন্দর যা প্রতিষ্ঠার পর থেকে দু-বার বন্ধ হয়ে যায়। ঠাকুরগাঁও বাসীর দীর্ঘ দিনের চাওয়া ছিল ঠাকুরগাঁও বিমাবন্দরটি পুনরায় চালু করা হোক।

সরকারদলীয় অনেক এমপি মন্ত্রীরা বিভিন্ন সময়ে ঠাকুরগাঁও এসে এখানকার মানুষদের আশ্বাস দেন এ বিমানবন্দরটি পুনরায় চালুর ব্যাপারে। আর তাই বিমানবন্দরটি পুনরায় চালুর বিষয়ে একবুক আশা বাঁধতে শুরু করে এ জেলার সাধারণ মানুষ।

সর্বশেষ তারা পথ চেয়ে থাকে বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঠাকুরগাঁওয়ে আগমনের জন্যে। কিন্তু চলতি গত ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর আগমনে জেলায় নানা উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তি স্থাপন হলেও বিমানবন্দরটির ব্যাপারে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। আর তাই আবারো বিমানবন্দরটি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ।

জানা যায়, দ্বিতীয় বিশযুদ্ধের সময় যুদ্ধের বিশেষ কৌশল প্রয়োগের জন্য ১৯৪০ সালে ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ঠাকুরগাঁও-পীরগঞ্জ সড়কের পাশে শিবগঞ্জ এলাকার সাড়ে ৫শ একর জমির উপর স্থাপিত হয় এ বিমানবন্দরটি। বিমানবন্দরটির রানওয়ে ছিল ৩টি এবং এতে সাব-রানওয়ে ছিল ১০টি।

পাকিস্তান আমলের প্রথম দিকে এ বিমান বন্দরটিকে ‘আর্মি স্টেট’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সিভিল এ্যাভিয়েশন বিভাগ আরো ১১০ একর জমি বর্ধিত করে সেখানে বিমানবন্দরের বর্তমান স্টল ভবন নির্মাণ ও রানওয়ে বর্ধিত করে এবং বিমানবন্দরটি চালু করে। সে সময়ে সামগ্রী পরিবহনসহ জরুরী কাজে এই বিমানবন্দরটি ব্যবহার করা হতো।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার সঙ্গে এর যোগাযোগ ছিল এবং ওই সময় ঢাকা-ঠাকুরগাঁও রুটে নিয়মিত বিমান সার্ভিস চালু ছিল। এরপর আবারো বন্ধ হয়ে যায় বিমানবন্দরটি।

১৯৮০ সালের দিকে বিমানবন্দরটি পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলে কোটি টাকা ব্যয়ে টার্মিনাল ভবন নির্মাণ ও বিদ্যুতায়ানের কাজসহ রানওয়ে মেরামতের কাজ সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে এটিকে আর চালু করা হয়নি।

দীর্ঘ কয়েক যুগ বন্ধ থাকার পরে বর্তমানে এটি সেনাবাহিনির লার্নার ড্রাইভারদের কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে। ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি পুনরায় চালুর দাবিতে ইতিপূর্বে বহু আন্দোলন সংগ্রাম হলেও তেমন কোন ফল পাওয়া যায়নি।

গত বছরের শুরুর দিকে বর্তমান সরকারের পর্যটন ও বিমান মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন দু দফায় ঠাকুরগাঁও এসে বিমানবন্দর পরিদর্শনকালে একটি জনসভায়ও যোগদেন তিনি। সভায় বিমানবন্দরটি ৬ মাসের মধ্যে চালুর প্রতিশ্রুতি দেন এ জেলার মানুষকে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এসে বিষয়টি চুড়ান্ত করবেন। কিন্তু ঠাকুরগাঁও বাসীর এ চাওয়া আর পুরণ হলো না।

ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের মানুষদের সৈয়দপুর বিমানবন্দরে গিয়ে বিমানে যাতায়াত করতে হয়। এতে করে আর্থিক ও শারীরিক দুই দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হয় এ দুই জেলার মানুষ। ঠাকুরগাঁও থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের বিমানের টিকিট বুকিং দেওয়ার জন্য এখানে রয়েছে ৪ থেকে ৫টি বুকিং এজেন্সি। এদের মধ্যে রয়েছে মাহিন ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস, টাঙ্গন এয়ারলাইন্স, এস এস ট্যাভেলস এন্ড ট্যুরস, জয় এয়ারলাইন্স।

এ এজেন্সিগুলো থেকে গড়ে প্রতিদিন ৪০-৫০ জন যাত্রী দেশের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রুটের টিকিট গ্রহণ করেন এ জেলার মানুষ। বিমানবন্দরটি চালু হলে এসব যাত্রীদের সুবিধা অনেকাংশে বেড়ে যেতো বলে মনে করেন ভুক্তোভোগীরা।

মাহিন ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস এর পরিচালক মুরাদ হোসেন বলেন, আমাদের এখানে গত কয়েক বছরে বিমানের যাত্রী বেড়েছে ৬০-৭০ শতাংশ। তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রুটের টিকিট ক্রয় করে থাকেন। আমাদের এ বিমানবন্দরটি চালু হলে সব দিক থেকে ভালো হতো।

এস এস ট্যাভেলস এন্ড ট্যুরস এর পরিচালক রফিকুল ইসলাম রোহান বলেন, যেহেতু আমাদের এ অঞ্চলটি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মতো এবং বাংলাবান্দা চেকপোষ্ট আমাদের খুব কাছেই। তাই বিমানবন্দরটি চালু হলে আমাদের এ অঞ্চলে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি হত যা আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে একটি বড় অবদান রাখতো।

মনসুর আলম ও শহিদুল নামের ঠাকুরগাঁওয়ের সাধারণ নাগরিক বলেন, আমাদের এখানে বড় কোন কিছু ছিল না যা নিয়ে আমরা বাহিরে গল্প করতে পারতাম। প্রধানমন্ত্রী এবার অনেক কিছুই দিয়েছেন যা এ জেলার চেহারা পাল্টে দেবে তবে বিমানবন্দরটিও তিনি দিতে পারতেন।

ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের অনেক কিছু দিয়েছেন এবার। সব চাওয়া তো আর একসাথে পূরণ করা সম্ভব হয় না। আশা করি আগামীতে আমরা বিমানবন্দরটি চালুর ব্যাপারে ভালো সংবাদ পাবো।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিমানবন্দরটি চালুর ব্যাপারে সরকারের বিভিন্ন উচ্চ মহলের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/জেডআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত