ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

সাতক্ষীরা-৪ আসন

মহাজোট প্রার্থী এরশাদ, বিএনপি’র কাজী আলাউদ্দীন

  সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০১৮, ১৬:৩৭

মহাজোট প্রার্থী এরশাদ, বিএনপি’র কাজী আলাউদ্দীন

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যে কয়টি আসন রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম সুন্দরবন ঘেষা সাতক্ষীরা-৪ আসন। চারিদকে নদ-নদী বেষ্টিত আর সুন্দরবনের জীববৈচিত্র নিয়ে শ্যামনগর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন এবং কালিগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনটি।

এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১ হাজার ৫৫২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩ হাজার ৫ এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৯৮ হাজার ৬৪৭ জন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে জোরেসোরে। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হলেও তারাও বসে নেই। ভিতরে ভিতরে শক্তি সঞ্চয় করছে দলটি।

বর্তমান সরকারের আমলে এখানকার এমপি জগলুল হায়দার এমপির কল্যাণে রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ কালভাট, স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক উন্নয়ন ও উপকূলীয় আইলা পীড়িতদের ভাগ্য উন্নয়ন হলেও সাধারণ মানুষ ও সুশীল সমাজ মনে করছে, এ আসনে বিএনপি-জামায়াত একসঙ্গে থাকলে বেকায়দায় পড়তে পারে ক্ষমতাসীনরা। অবশ্য এমপি জগলুল হায়দার তার ব্যতিক্রমী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে হিসাবে সাধারণ মানুষের কাছে নিজেকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন। সাধারণ মানুষের সাথে রয়েছে তার নিবিড় সম্পর্ক।

কিন্তু এ আসন থেকে জাতীয়পার্টির প্রার্থী দলের চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ নির্বাচন করবেন বলে জেলা জাতীয়পার্টির নেতৃবৃন্দ সাংবাদিক সম্মেলন করে ঘোষণা দেওয়ায় সব হিসাব নিকাশ পাল্টে গেছে।

তবে এখানে বিএনপির শক্তিশালী এবং হেবিওয়েট প্রার্থী হিসাবে মাঠে রয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি কাজী আলাউদ্দীন। জোট সরকারের আমলে কালিগঞ্জ উপজেলায় তার হাত দিয়ে যে উন্নয়ন হয়েছে তা এখনও মানুষ মনে রেখেছে। আর বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও কো-চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অত্যান্ত ঘনিষ্ট এবং আস্তাভাজন হওয়ায় বিএনপির দলীয় প্রার্থী হিসাবে তার মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতারা।

আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন, বর্তমান এমপি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম জগলুল হায়দার, সাধারণ সম্পাদক সাবেক সাংসদ একে ফজলুল হকের ছেলে সাবেক তুখড় ছাত্র নেতা এসএম আতাউল হক দোলন, জেলা শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জিএম শফিউল আযম লেলিন। এ তিন জনের নাম শোনা যাচ্ছে জোরেসোরে। তবে দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে চরম বিরোধ তৈরি হয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে। তাদের কোন্দলের সুযোগ নিতে পারে শক্ত প্রতিপক্ষ বিএনপি-জামায়াত জোট এমন ধারণা স্থানীয় সুশীল সমাজের।

জানা যায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম আতাউল হক দোলন মনোনয়ন পেতে সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে উঠান বৈঠকসহ জনসংযোগ করে যাচ্ছেন। এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে সমন্বয় করে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড মানুষের কাছে গিয়ে উপস্থাপন করছেন। গণসংযোগ-উঠান বৈঠকসহ বিভিন্ন সভা সেমিনার অব্যাহত রেখেছেন। সর্ব মহলে তার নাম আলোচনা হচ্ছে।

এদিকে বর্তমান সাংসদ এস এম জগলুল হায়দারও নিয়মিত উঠান বৈঠকসহ দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। নির্বাচনী মাঠ গোছাতে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে নিজ এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে মানুষের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন পেলে তিনি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পক্ষ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হচ্ছেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক সাংসদ কাজী আলাউদ্দীন। এলাকায় জোরেসোরে নির্বাচনী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০০১ সালে এমপি হওয়ার পরে এলাকায় কাজী আলাউদ্দিন ডিগ্রী কলেজ, হাইস্কুল, তিনটা ডিজিটাল ,কাকশিয়ালি ব্রীজ, ২৩৬ কিলোমিটার বৈদ্যুতিৎ লাইন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ,মসজিদ-মন্দিরে অনুদানসহ অসংখ্য রাস্তাঘাট,কালভাট নির্মাণের ফলে এলাকার জনগণ এখনও তার সময়ের উন্নয়েন কথা ভুলতে পারেনি। এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে নির্বাচনী মাঠে নিরলসভাবে তিনি ও তার কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন।

এদিকে ১৯৯১ ও ২০০১ সালে জোটগত নির্বাচনে বিজয়ী জামায়াত প্রার্থী গাজী নজরুল ইসলাম জয়লাভ করেন এ আসন থেকে। তবে গাজী নজরুল দীর্ঘদিন এলাকায় না থাকায় জামায়াতের সাংগাঠনিক অবস্থা অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। তবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটগত নির্বাচন হলে এলাকায় বিএনপি’র জোটের প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না সাধারণ জনগণ।

২০০৮ সালে নির্বাচনে মহাজোটের টিকিটে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এইচ এম গোলাম রেজা জয়লাভ করেন । কিন্তু বর্তমানে তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি বি চৌধুরীর যুক্তফ্রন্টে যোগদান করে সেখান থেকে নির্বাচন করবেন বলে ঘোষাণা দিয়েছেন।

তবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দলের চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ এই আসনে নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণা দেয়ায় সকল হিসাব নিকাশ বদলে যেতে শুরু করেছে।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময় হতেই আসনটিতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত। কিন্তু পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে জামায়াতের অবস্থান সুদৃঢ় হয়। বর্ত মানে সাংগঠনিকভাবে বিএনপি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। দলীয় কোন্দল আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ঘরের শুত্রু বিভীষণ হতে পারে। এক্ষেত্রে বিএনপি জামায়াত জোটগত নির্বাচন হলে বেকায়দায় পড়তে পারে ক্ষমতাসীনরা। আর মহাজোটগতভাবে জাতীয়পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ নির্বাচন করলে এ আসনটি মহাজোটের দখলে থাকার ব্যাপারে শতভাগ সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি এলাকাবাসীর।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত