ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

আওয়ামী লীগ-বিএনপির মনোনয়ন চান অর্ধশত শিক্ষক

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০১৮, ২১:১৯

মনোনয়ন চান অর্ধশত শিক্ষক

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীদের সাথে পাল্লা দিয়ে অর্ধশত শিক্ষক দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছেন। এদের প্রায় সবাই দলীয় মনোনয়নপত্রও কিনছেন বা কিনবেন বলে জানিয়েছেন। শিক্ষক নেতাদের প্রায় সবাই এরই মধ্যে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করছেন। তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই তারা নির্বাচনী মাঠে সরব।

আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী শিক্ষক নেতারা নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয় ও সরব থাকলেও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী শিক্ষক নেতারা পুলিশি হামলা-মামলার ভয়ে অনেকটাই নিরবে ছিলেন। মনোনয়নপত্র কেনার পর এখন থেকে সক্রিয় ও সবর হবেন বলে তারা জানিয়েছেন। ব্যানার-ফেস্টুনের মাধ্যমে এলাকার জনগণের কাছে নিজেদের পরিচয় ও অতীত কর্মকাণ্ড তুলে ধরছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কেনা শিক্ষক নেতারা।

উভয় দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী শিক্ষক নেতারা বলেন, জাতীয় সংসদে শিক্ষকদের দাবি তুলে ধরতেই নির্বাচন করতে চাই। সৎ মানুষ হিসেবে শিক্ষকেরা এখনো সমাজে স্বীকৃত। শিক্ষকেরাই রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ঠেকাতে পারবেন। সৎ মানুষ রাজনীতিতে আসুক এটি সবারই প্রত্যাশা, এ ক্ষেত্রে শিক্ষকরাই সবচেয়ে অগ্রগামী।

ঢাকা-৫ (ডেমরা-যাত্রাবাড়ী) আসনে বিএনপি সমর্থিত শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো: সেলিম ভূঁইয়া দলীয় মনোনয়ন চান। তিনি বিএনপির নির্বাহী কমিটির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক। বিএনপি সমর্থক পেশাজীবী পরিষদ এবং শত নাগরিক কমিটিরও নেতা অধ্যক্ষ মো: সেলিম ভূঁইয়া। তিনি এ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনের প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছেন বহু আগে থেকেই। সোমবার দলীয় মনোনয়নপত্র কিনেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের দুই আমলেই নানাভাবে হয়রানি ও মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে আমার বিরুদ্ধে। ক্লাসরুম থেকে ডেকে নিয়ে আমাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। যাত্রাবাড়ী এলাকায় গাড়ি পোড়ানো মামলার একমাত্র আমাকেই কারাভোগ করতে হয়েছে। জামিনে ছাড়া পেলেও বারবার পুলিশ জেল গেট থেকে গ্রেপ্তার করেছে। তার দাবি বর্তমান সরকারের আমলে ২৩টি মিথ্যা মামলার আসামি হয়েছি। কোনো শিক্ষক নেতার বিরুদ্ধে এত মামলা নজিরবিহীন। এ এলাকায় আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা আমাকে এক নামে চেনেন। আমার নেতৃত্বেই ডেমরা-শ্যামপুর-কদমতলী এলাকার শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকায় নাম উঠেছিল এ কে স্কুল অ্যান্ড কলেজের। এ এলাকার প্রতিটি ঘরেই আমার শিক্ষার্থী ও অভিভাবক রয়েছেন। তাদেরকে আমার সম্পর্কে নতুন করে পরিচিত করার কিছু নেই। দলীয় মনোনয়ন পেলে অবশ্যই এ আসন বেগম জিয়া ও তারেক রহমানকে উপহার দেবো।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (আশুগঞ্জ-সরাইল) আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে নিতে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত গণসংযোগ করছেন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো: শাহজাহান আলম সাজু। তিনি বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের দু’বার সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সহসভাপতি ছিলেন।

অধ্যক্ষ মো: শাহজাহান আলম সাজু বলেন, দলীয় মনোনয়নপত্র কিনে রোববারই জমা দিয়েছি। মনোনয়নপ্রাপ্তির বিষয়ে আমি শতভাগ আশাবাদী। অধ্যক্ষ মো: শাহজাহান আলম সাজু তার আশাবাদের কারণ সম্পর্কে বলেন, সুখে-দুঃখে এলাকাবাসীর পাশে ছিলাম। আশুগঞ্জ বন্দরের প্রতিষ্ঠাতা আমার বড় বাবা (দাদা)। ঐতিহ্যগতভাবেই আশুগঞ্জ শহরের মানুষের সাথে আমাদের হৃদয়ের সম্পর্ক আছে।

অধ্যক্ষ সাজু জানান, ১৯৭৩ সালের পর থেকেই এ আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া। তাই দলীয় মনোনয়ন পেলে এটি শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে চান তিনি।

কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চান আওয়ামী লীগ সমর্থক ‘জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্টে’র আহ্বায়ক, বাংলাদেশ কলেজে শিক্ষক সমিতির (বাকশিস) সভাপতি ও রাজধানীর তেজগাঁও মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আসাদুল হক। তিনি বলেন, রোববার দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। আমার বিশ্বাস আমিই দলীয় মনোনয়ন পাবো। দীর্ঘদিন থেকেই এলাকার হাট-বাজারে নিয়মিত সভা-সমাবেশসহ গণসংযোগ করে আসছি। এলাকার সাথে আমার যোগাযোগ শুধু ভোটকেন্দ্রিক নয়। সব সময়ই এলাকার সাথে আমার সম্পর্ক ছিল এবং এখন আরো বেশি হয়েছে।

এদিকে বাগেরহাট-৩ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চান অধ্যাপক এ বি এম ইসলাম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ সাদা দলের আহ্বায়ক। সোমবার এই শিক্ষক নেতা দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

অধ্যাপক এ বি এম ইসলাম বলেন, জাতীয় সংসদে শিক্ষকেরা এখন অনেক কম। এর সংখ্যা বাড়াতে হবে। জাতীয় সংসদে ভালো মানুষের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

পিরোজপুর-১ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চান শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট নেতা অধ্যাপক আলমগীর হোসেন। তিনি দলীয় রাজনীতির সাথেও জড়িত এবং জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।

জয়পুরহাট-১ আসনে অধ্যক্ষ শামসুল হক বিএনপির মনোনয়ন চান। তিনিও শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট নেতা। মেহেরপুর-১ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে চান বিএনপি সমর্থক ‘শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটে’র অতিরিক্ত মহাসচিব এবং বাংলাদেশ প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো: জাকির হোসেন।

ময়মনসিংহ-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চান অধ্যাপক আমজাদ হোসেন। তিনি শহর বিএনপিরও নেতা। অন্যদিকে জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চান বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (বাকবিশিস) কার্যকরী সভাপতি অধ্যক্ষ মো. আবদুর রশীদ। তিনি রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের অধ্যক্ষ এবং তেজগাঁও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি। জনপ্রিয়তা, সততাসহ এমপি হওয়ার সব যোগ্যতা তার থাকায় জামালপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগ তাকেই বেছে নেবে বলে দাবি করেছেন তিনি।

নেত্রকোনা-১ (দুর্গাপুর-কলমাকান্দা) আসন থেকে নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হতে জনসংযোগ করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য রেমন্ড আরেং। সুসং দুর্গাপুর কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে হাতেখড়ি। এরপর নিজ এলাকায় শিক্ষকতার পাশাপাশি সক্রিয়ভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হতে মাঠে কাজ করছেন। শেখ হাসিনার আশীর্বাদ থাকলে এ আসনে তিনি খুব সহজেই নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে পারবেন বলে আত্মবিশ্বাসী।

নীলফামারী-৩ (জলঢাকা ও কিশোরগঞ্জের আংশিক) আসনে আবারো নৌকা প্রতীকে লড়াই করতে চান শিক্ষা মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (বাকবিশিস) নেতা অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা। তিনি এরই মধ্যে দলীয় মনোনয়নপত্র কিনেছেন। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ-৬ আসন থেকে নির্বাচন করতে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং রাজধানীর বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মেরিনা জাহান কবিতা।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে/ডিপি/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত