ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

এরা কারা?

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ১৮:০৮  
আপডেট :
 ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ১৮:৫১

এরা কারা?

রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় বিক্ষুব্ধ বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেন। বেশকিছু ছবিতে দেখা যায় পুলিশের গাড়িতে আগুন দিচ্ছে দুষ্কৃতিকারীদের। এছাড়া লাঠি হাতের মারমুখী দেখা গেছে তাদের। এ সময় তাদের অনেকের হাতে বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের পোস্টার দেখা গেছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বলছে ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপির কার্যালয়ের সামনে মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে তারা পুলিশের উপর হামলা হয়েছে। পুলিশের দুটি গাড়ি তারা পুড়িয়ে দিয়েছে।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা নির্বাচন পেছানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে পুলিশের ওপর হামলা করলেন, নিজেদের বীরত্ব দেখালেন।

আরো পড়ুন: এখানেও সেলফি!

অন্যদিকে নয়াপল্টনে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের জন্য সিইসিকে দায়ী করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমি আপনাদেরকে সেই পুরনো ঘটনা বলতে চাই, কোটা সংস্কার আন্দোলন দমন করতে গিয়ে হেলমেটধারী, আজকেও আপনারা দেখবেন হেলমেটধারীদের তৎপরতা। এরা কারা? এটা আমি আপনাদেরকে জানিয়ে দেই, এরাই হচ্ছে, এজেন্ড। এই এজেন্ডদেরকেই দিয়েই সেই ব্লেমগেম। নিজেরা আগুন লাগিয়ে বিরোধী দলের ওপরে দোষ চাপানো। পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষে দলটির ৫০ জনের অধিক নেতাকর্মী আহত ও গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল ৯টা থেকে গত দুই দিনের মতো বুধবারও ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশীদেরকে ফরম কিনতে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে দেখা গেছে। ১০টা থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা নেওয়া শুরু হয়। শুরু হওয়ার প্রায় ৩ ঘন্টা পর দুপুর ১টা দিকে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়।

এসময় বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা পুলিশের একটি জিপ গাড়ি ও একটি প্রাইভেট কার ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেন। এছাড়া রাস্তার ওপরে লাঠিতে আগুন লাগিয়েও দেন তারা। জানা গেছে, ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে বিএনপির অফিসের সামনে অবস্থান নেন। এসময় পুলিশ নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিয়ে একটা করে গাড়ি চলাচলের জায়গা করে দিতে চাইলে সংঘর্ষের সূত্রপাত্র শুরু হয়।

পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও শটগানের ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে। জবাবে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং বাঁশ ও লাঠি নিয়ে ধাওয়া দেন।

এসময় বিএনপির ২৪ নেতাকর্মীরা আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দলটির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু। তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমরা ২৪ জনের তালিকা পেয়েছি। তবে আরো অসংখ্যক আহত হয়েছে।

এসময় প্রায় ৩০ মিনিট পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া চলে। পরে বিএনপির নেতাকর্মীদের ধাওয়ার পুলিশ পিছু হটে কাকরাইল মোড়ে এপিসি, জলকামান ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি নিয়ে অবস্থান নেন। আর বিএনপির নেতাকর্মীরা হাতে লাঠি ও বাঁশ নিয়ে একাধিকবার বিএনপির কার্যালয় থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে কাকরাইল মোড়ের দিক থেকে আবার পার্টির অফিসের নিচে এসে অবস্থান নেন।

এসময় তারা মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার ভয় নাই রাজপথ ছাড়ি নাইসহ সরকার বিরোধী বিভিন্ন স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করে তোলেন।

অপরদিকে বিএনপি কার্যালয়ের ডানপাশে পল্টন থানার সামনে পুলিশকে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এরপর বেলা আড়াই দিকে বিএনপির অফিসের নিচ থেকে আহত নেতাকর্মীদের অ্যাম্বুলেন্স করে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে এ ঘটনায় সরকার ও পুলিশ সমানভাবে দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বুধবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের পর তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ অভিযোগ করেন।

রিজভী জানান, মনোনয়ন কেনাবেচার তৃতীয় দিন শান্তিপূর্ণভাবে কার্যক্রম চলছিল। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস তার আসনের মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য হাজার হাজার কর্মী নিয়ে কার্যালয়ে আসেন। এ সময় পুলিশ দলের নেতাকর্মীদের বাধা দেয় ও লাঠিচার্জ করে।

রিজভী বলেন, ‘আমরা শান্তির পক্ষে। বিনা উস্কানিতে পুলিশ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। গুলি চালিয়েছে। বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী এতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় সরকার ও পুলিশ উভয়ই সমানভাবে দায়ী। তারপরও আমরা অশান্তির পথে হাঁটব না। সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দেব।’

এ সময় দলীয় নেতাকর্মীদের সরকারের উস্কানিতে পা না দিতে আহ্বান জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আপনাদেরকে শান্ত হতে বলেছেন। আপনারা রাস্তা ছেড়ে ফুটপাতে বসে পড়ুন। এটা তারেক রহমানের নির্দেশ।’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা আমাদের ভাই। আপনাদের সাথে বিএনপির কোনো দ্বন্দ্ব নেই।’

ছবি তুলেছেন বাংলাদেশ জার্নালের নিজস্ব আলোকচিত্রী মেহেদী হাসান রানা

কেএস/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত