ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

আবাসন সংকটে ইবির ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী

  ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০১৭, ১৪:৪৫

আবাসন সংকটে ইবির ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী

শতভাগ আবাসিকতার মাস্টার প্ল্যান নিয়ে ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। তবে প্রতিষ্ঠার ৩৮ বছর পর সে স্বপ্ন এখনও স্বপ্নই রয়ে গেছে। প্রতি বছর বিভাগ ও আসন সংখ্যা বাড়লেও দৃশ্যমান আবাসন সুবিধা বাড়েনি। বর্তমানে ১৫ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য আবাসিক হল রয়েছে (১টি নির্মাণাধীনসহ) মাত্র ৮টি। এতে আসন রয়েছে মাত্র ২ হাজার ৭৭৫টি।

ফলে মোট শিক্ষার্থীর ৮০ ভাগই আবাসন সুবিধাবঞ্চিত। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টি কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহর থেকে যথাক্রমে ২৪ এবং ২২ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত এবং ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করতে হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের জন্য ৪টি ও মেয়েদের ৩টি হল রয়েছে। এর মধ্যে সাদ্দাম হোসেন হলে ৪৭৫, শহীদ জিয়াউর রহমান হলে ৪০০, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৩৬৪, লালন শাহ হলে ৩৮৮, বেগম খালেদা জিয়া হলে ৩৯৮, বেগম ফজিলাতুননেসা মুজিব হলে ৪৮০ জন ও শেখ হাসিনা হলে ২৭০ জন শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন সুবিধা রয়েছে।

এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ২টি আর্ন্তজাতিক ব্লক বর্তমানে অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া শেখ রাসেল নামে ছাত্রদের জন্য একটি আবাসিক হল নির্মাণাধীন রয়েছে। আবাসন সংকটের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মেয়েরা। তিনটি হলে ৪০ শতাংশ ছাত্রীকে সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বেগম ফজিলাতুননেসা হলের আসন সংখ্যা ৪৮০। অথচ সেখানে থাকছে ৭০০ ছাত্রী। হলটিতে ৭০টি কক্ষের মধ্যে ৮টি হল দফতর ও স্টোর হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়া হলে ৩৯৮ আসনের বিপরীতে রয়েছে ৭২১ জন ছাত্রী। শেখ হাসিনা হলে ২৬০ আসনের বিপরীতে রয়েছে প্রায় সাড়ে চার শত জন ছাত্রী। এতে বেশির ভাগ সিটেই দুজন করে ছাত্রীকে থাকতে হচ্ছে। তবে ছাত্রদের হলে গণরুম না থাকলেও ছাত্রীদের প্রতিটি হলে রয়েছে একাধিক গণরুম। এসব গণরুমে ৩০/৪০ জন শিক্ষার্থীকে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। ফলে তারা ঠিকমতো পড়াশোনা এবং ঘুমানোর সুযোগ পান না। হলের বড় আপুরা প্রথম বর্ষের ছাত্রীদের গণরুমে থাকতে বাধ্য করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

ছাত্র হলগুলোতেও আবাসন নিয়ে হাহাকার চলছে। প্রথম বর্ষের কোনো শিক্ষার্থীকে হলে আবাসন সুবিধা দেওয়া হয় না। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধা মেলে তৃতীয় অথবা চতুর্থ বর্ষে। অনেক ক্ষেত্রে মাস্টার্স শেষ করলেও হলের সিট ভাগ্যে জোটে না।

এছাড়া তিনটি ছাত্রী হলের অধিকাংশ আবাসিক শিক্ষক পুরুষ হওয়ায় ছাত্র নেত্রীদের মাধ্যমে অনেক ছাত্রীর কাছেই বিভিন্ন সময়ে অনৈতিক প্রস্তাব আসে বলে অভিযোগ রয়েছে।

খালেদা জিয়া হলের গণরুমে অবস্থানরত কয়েকজন ছাত্রী জানান, ‘ছোট একটি রুমে ৩০/৪০ জনকে থাকতে হয়। ফলে পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে কষ্ট হয়। এছাড়া সব গুলো গণরুম নিচ তলায় হওয়াতে টয়লেটসহ বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাতে উপরে যেতে হয়। এত কষ্টের পরেও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই এখানে আছি।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি ও সাদ্দাম হোসেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আশরাফুল আলম বলেন, ‘আবাসন সংকট দূর করতে বর্তমান প্রশাসন নিরলাস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আশা করছি তাদের প্রচেষ্টায় কিছুটা হলেও এই সংকটের সমাধান হবে।’

এদিকে আবাসন সুবিধা বঞ্চিত ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসের বাইরে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ শহরের বিভিন্ন মেসে থাকতে হয়। ফলে তাদেরকে প্রতিনিয়ত নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। প্রশাসনের কাছে তাদের প্রাণের দাবি আবাসন সংকট নিরসন করা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান সমস্যা আবাসন সংকট। তবে বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্পূর্ণরুপে আবাসিক ক্যাম্পাসে পরিণত করার লক্ষ্যে আমরা একটি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। সেটি পাশ হলে আমরা অনেকটা আবাসন সংকট মুক্ত হব। এই মেগা প্রকল্পটি দ্রুত সময়ের মধ্যে পাশ হবে বলে আমরা আশা করছি ।

/এসএস/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত