ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

৫ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর বৈষম্যের কথা

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০১৮, ১৩:৫৬

৫ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর বৈষম্যের কথা

চরম বৈষম্যের শিকার এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী। তারা বেতন-ভাতা, পদোন্নতি, টাইমস্কেল ও ইনক্রিমেন্ট বঞ্চিত। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা জীবনে একটি মাত্র টাইমস্কেল ও চাকরির শেষ দিকে একটি ইনক্রিমেন্ট পেতেন। অষ্টম জাতীয় বেতনস্কেল চালুর ফলে তাও বঞ্চিত হচ্ছেন। এসব বৈষম্যের শিকার হয়েই গত ৮ দিন ধরে শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে রাজপথে অবস্থান কর্মসূচি ও আমরণ অনশন করছেন তারা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) জাবেদ আহমেদ বলেন, বৈশাখি ভাতা ও ইনক্রিমেন্ট নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে। তবে বিপুল সংখ্যক অর্থের প্রয়োজনীয়তা থাকায় আপাতত ইতিবাচক সিদ্বান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। কারণ নতুন শিক্ষক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতেই ২২শ’ কোটি টাকা দরকার। এই টাকার বরাদ্দ পেতেই মন্ত্রণালয় হিমশিম খাচ্ছে।

বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরামের সহ-সভাপতি ও ভোলার পশ্চিম নৈতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. সাইদুল হাসান সেলিম বলেন, দেশের কোথাও এখন এক হাজার টাকায় বাড়ি ভাড়া পাওয়া যায় না। মাসিক এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ও ৫০০ টাকা মেডিকেল ভাতা দিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে তামাশা করছে সরকার।

তিনি আরো বলেন, দেশের ৯৮ শতাংশ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী সরকারি শিক্ষকদের মতোই রাষ্ট্রের সকল দায়িত্ব পালন করেন। অথচ আমরা বেতন ও পদোন্নতি বৈষম্যের শিকার। আগে যারা টাইমস্কেল পেয়েছেন তারা বি-এড পাস করেও এখন বি-এড স্কেল পাচ্ছেন না। এসব বৈষম্য দূর করা না হলে শিক্ষার গুণগতমান অর্জন করা সম্ভব হবে না।

গত দুই বছর ধরে শিক্ষকরা বৈশাখী ভাতা ও বার্ষিক পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর মাউশি থেকে মন্ত্রণালয়ে একটি একটি চিঠি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়েছে, ১৯৯১ সালের বেতন স্কেল অনুযায়ী এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা সমগ্র চাকরি জীবনে একটিমাত্র ইনক্রিমেন্ট পেতেন। জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী তারা এই সুযোগটি বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের মতো এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাংলা নববর্ষ ভাতা দেওয়া হয় না। সারাদেশে চার লাখ ৭৭ হাজার ১৩০ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন।

সরকারি চাকরিজীবীদের মতো এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দিতে বছরে অতিরিক্ত ৫২০ কোটি ২৪ লাখ । আর মূল বেতনের ১০ শতাংশ বৈশাখী ভাতা দিতে বছরে আরও ১৭৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা লাগবে। দুই খাতে বছরে বাড়তি ছয়শত ৯৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা প্রয়োজন।

কুয়াকাটা খানাবাদ কলেজের সহকারী অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, বছরে নামে মাত্র দুটি উৎসব ভাতা দেওয়া হয়। এই ভাতা কোনো বছরই উৎসবের আগে পাওয়া যায় না। উৎসবের আনন্দ প্রতি বছরই মাটি হয়ে যায়। অনেক শিক্ষক বেতনের চেক বন্ধক রেখে উৎসব পালন করেন। তিনি আরও বলেন, অবসরের পরেও বৈষম্য পিছু ছাড়ে না। শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে কেটে নেওয়া অবসর আর কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা তুলতে বছরের পর বছর হয়রানির শিকার হতে হয়। অনেক শিক্ষক টাকার অভাবে বিনাচিকিৎসায় মারা যান। এর পরেও তাদের পরিবার টাকা তুলতে পারেন না।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াজো ফোরামের উপদেষ্টা মো. নজরুল ইসলাম রনি বলেন, ২০১৫ সালের জাতীয় পেস্কেলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রী বৈশাখী ভাতা চালু করেন। সরকারি চাকরীজীবীদের দুই বছর ধরে বৈশাখী ভাতা দেওয়া হলেও আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। প্রতিশ্রæতি ছিল বছরে পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার। সেটাও পাচ্ছি না। ইনক্রিমেন্টও বন্ধ রাখা হয়েছে। এই বেতন বৈষম্যের কারণেই শিক্ষার গুনগত মানও বাড়ছে না।

তিনি আরো বলেন, বেতন বৈষম্যের শিকার হয়েই সারাদেশের শিক্ষকরা আজ রাজপথে শিক্ষা জাতীয়করণের আন্দোলন করতে বাধ্য হয়েছেন। শিক্ষা জাতীয়করণ করা হলে শিক্ষার গুনগতমান উন্নয়ন হবে। ম্যানেজিং কমিটির দৌরাত্ব থাকবে না। অভিভাবকরাও এর সুফল পাবেন। শিক্ষার্থীরা কম টাকায় পড়াশুনা করতে পারবে।

শিক্ষার বৈষম্য দূর করতে অবিলম্বে তাদের দাবি মেনে নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান এই শিক্ষক নেতা।

/এসকে/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত