ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

শিক্ষিকা ৪ জন, শিক্ষার্থী ৫ জন

  মাদারীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০১৮, ১৬:৪০  
আপডেট :
 ১৮ জানুয়ারি ২০১৮, ১৬:৪৯

শিক্ষিকা ৪ জন, শিক্ষার্থী ৫ জন

জরাজীর্ণ বিদ্যালয়ে চলছে পাঠদান। তাও আবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর মধ্যে আরেকটি খবর হচ্ছে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ৫ জন আর শিক্ষিকা ৪ জন। তারপরও বেশির ভাগ সময় অনুপস্থিত থাকে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা। ছুটি না নিয়ে দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকলেও একদিন এসে স্বাক্ষর করে নেয় ক্ষমতা দেখিয়ে। ম্যানেজিং কমিটিসহ তোয়াক্কা করে না কোনো শিক্ষা অফিস। তাছাড়া পাকা ঘর না থাকায় ও উপবৃত্তি না দেয়ায় ১৮৬ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভর্তি না হয়ে, তার মাঠ দিয়েই অন্য বিদ্যালয় প্রতিদিন যাওয়া আসা করে ২ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী।

১৮৬ নং পশ্চিম মাইজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয় কার্যক্রম চালু হওয়ার পর থেকেই ইয়াসমিন নামে এক শিক্ষিকা বছরের বেশির ভাগ সময় ছুটি না নিয়ে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। অভিযোগ আছে, স্কুল সরকারি হওয়ার পর দুই বছরের মাথায় উপবৃত্তির টাকা এই শিক্ষিকা আত্মসাৎ করেন। ফলে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ছাত্র-ছাত্রীর উপবৃত্তি বন্ধ করে দেয়। যখন তিনি এই টাকা আত্মসাৎ করেন তখন তিনি এই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ছিলেন।

এছাড়া ২০১৮ সালে কোনো প্রকার ছুটি না নিয়েই বিদ্যালয়ে আসেন নেই ইয়াসমিন। এরপরেও বছরের অনেক সময় সরকারি বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে কোনো না কোনো শিক্ষিকা অনুপস্থিত থাকেন। বিদ্যালয়ে গিয়ে দুইজনকে পাওয়া গেলে পাওয়া যায়নি বাকি দুইজনকে। শিক্ষিকারা ঠিক মত বিদ্যালয়ে না আসায় ও জরাজীর্ণ বিদ্যালয় এবং উপবৃত্তি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকাবাসী তাদের ছেলে মেয়েদের বাড়ির পাশে বিদ্যালয় থাকতেও দূরের স্কুলে পড়াশুনা করান। ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির হাজিরা খাতায় ৪৫ জনের নাম থাকলেও স্কুলে উপস্থিত থাকে ৩-৫ জন।

উপস্থিত কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী জানায়, আমরা বেশির ভাগ সময় ওই ম্যাডামকে স্কুলে পাই না। যদিও আসেন তাহলে অল্প সময় থেকেই চলে যান। আমাদের উপবৃত্তি দেয়া হয় না। আমরা সরকারের সকল সুবিধা চাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, আমরা এই স্কুলে বাচ্চাদের কেন পড়াশুনা করাবো বলেন? এই স্কুলে বেশির ভাগ সময় শিক্ষকরা থাকেন না। দুই একজন থাকলেও তারাও ছাত্র-ছাত্রী না আসায় বেকার সময় কাটান। তারপর এই স্কুলে কোন টাকা দেয়া হয় না। আমরা অন্য স্কুলে পড়ালে পড়াশুনা ভালো হয় এবং উপবৃত্তির টাকাও দেয়া হয়।

১৮৬ নং পশ্চিম মাইজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা (ভারপ্রাপ্ত) মিনতি মুজুমদার জানান, আমাদের বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী আছ । তবে এই জরাজীর্ণ বিদ্যালয় ও উপবৃত্তি না পাওয়ায় বেশির ভাগ ছাত্র-ছাত্রী অন্য বিদ্যালয় চলে গেছে। তাছাড়া বিদ্যালয়ে আমরা ৪ জন শিক্ষিকার মধ্যে একজন থাকেন বিভিন্ন সময় ট্রেনিংয়ে। আর একজন কোন প্রকার ছুটি না নিয়ে অনুপস্থিত থাকেন। পরপর তিন দিন অনুপস্থিত থাকার পর আমি তাকে ফোন দিলে তিনি আমাকে জানান আমি ট্রেনিংয়ে আছি। এরপর আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানালে তিনিও আমাকে জানান আমার কাছে তার কোন দরখাস্ত নেই।

এদিকে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, অনুপস্থিত ইয়াসমিন শিক্ষিকা নিজ বাড়িতে রয়েছেন। এর আগে তার ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে প্রায় দুই ঘণ্টা পর তিনি মিস কল দিলে তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, আমি ফোনে প্রধান শিক্ষিকার কাছে জানিয়েছি আসতে পারবো না। আমার কাছে সেই রেকর্ড আছে।

এই বিদ্যালয়ে বর্তমান সভাপতি হাজী মো. সিদ্দিকুর রহমান (মাস্টার) জানান, আমি ছাড়াও এলাকাবাসী, উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসে অনেক সময় দরখাস্ত দিয়েছে ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে। কিন্তু তেমন কোনো ব্যবস্থা তারা কেন নেয়নি আমার বোধগম্য নয়। আমি এই স্কুলে জন্য সবকিছু করতে রাজি আছি। এই স্কুলের এমন অবস্থা দেখলে কান্না পায়। এই স্কুল আমার একটি স্বপ্ন ছিল সেটা সরকার বাস্তবে রূপ দিয়েছে। প্রথমে এই স্কুলে ২ শর বেশির ছাত্র-ছাত্রী ছিল আজ তা শূন্যের কোঠায় চলে এসেছে।

কালকিনি উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. সরোয়ার হোসেনকে অফিসে গিয়ে না পেয়ে তার কাছ ফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাকে ছুটি ব্যাপারে জানানো হয় নাই।

মাদারীপুর জেলা শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিন আহম্মেদ জানান, এ ঘটনা যদি সত্য হয় আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

এমএইচএস/জেডএইচ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত