ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

শিক্ষা প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান চলবে

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৬:০৪

শিক্ষা প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান চলবে

শিক্ষা প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে। সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক থেকে কঠোর নির্দেশনায় অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিহত করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার সব বিভাগের কর্মকর্তাদের আমলনামা যাচাই-বাছাই হচ্ছে। বদলি, শোকজ, ওএসডি, বিভাগীয় ব্যবস্থা এমনকি ফৌজদারি মামলাও হতে পারে। ঢেলে সাজানো হবে মন্ত্রণালয় থেকে মাঠ পর্যায়ের দপ্তর।

প্রশ্নপত্র ফাঁস, মন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এবং মন্ত্রণালয়ের উচ্চমানসহকারীর ঘুষের টাকাসহ ধরা পড়ায় সমালোচনা ঝড় সর্বত্র। জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে রাজপথে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি ওঠে। এতে করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘিরে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। এমন বাস্তবতায় শুদ্ধি অভিযানে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর, বোর্ড এমনকি শিক্ষার মাঠপ্রশাসন দপ্তরের বিতর্কিত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে।

এ ছাড়া প্রশাসন ক্যাডারের কতিপয় কর্মকর্তাদের একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে শাখা বদল করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ঘাপটি মেরে আছে। এই তালিকায় রয়েছেন অতিরিক্ত সচিব থেকে সহকারী সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা। বিভিন্ন সময়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দুর্নীতির সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের নাম পর্যন্ত গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, শিক্ষা প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তিতে ঘুষসহ নানা ধরনের হয়রানি ও দুর্নীতির বিষয়ে একটি প্রতিবেদন নিয়ে কাজ করছে মন্ত্রণালয়। প্রায় ৮০-৯০ জন মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তার জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের প্রেষণ বাতিল করে মূল পদে বদলি, শোকজ, ওএসডি ও বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এমনকি ফৌজদারি মামলা করা যায় কিনা, অপরাধের ধরন অনুযায়ী শাস্তি নিরূপণ করা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন দপ্তর থেকে অধস্তনদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী বাস্তবায়ন চলছে। এর ধারাবাহিকতায় চার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ ১৩ জনকে বদলি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমেদ বলেন, অনেক কর্মকর্তা দীর্ঘদিন একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতির নানা অভিযোগ উঠেছে। তাদের আর রক্ষা নেই। যে কোনো সময় বদলি হবেন তারা।

তিনি আরও বলেন, মাউশি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম), পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ), শিক্ষাবোর্ড এবং জেলা উপজেলার শিক্ষা অফিসের অভিযুক্ত কর্মকর্তারা বদলির তালিকায় রয়েছেন।

জানা গেছে, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা কলেজের পাঠদানে আগ্রহী নন। অথচ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মূল পদ সরকারি কলেজে। এ কর্মকর্তারা সবসময়ে তদবিরে ব্যস্ত থাকেন প্রশাসনিক পদে থাকার জন্য। চাকরিবিধি অনুযায়ী এক পদে তিন বছরের বেশি থাকার বিধান নেই। এ বিধি উপেক্ষা করেই বছরের পর বছর একই দপ্তরে চাকরি করছেন। এনসিটিবিতে প্রতি বছর হাজার কোটি টাকার বই ছাপার কাজ হয়। এসব কাজে কমিশন হাতিয়ে রাতারাতি সম্পদের পাহাড় গড়েছেন অনেক কর্মকর্তা। শিক্ষা বোর্ডে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমতি, কেন্দ্র, কেনাকাটায় বড় ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা। মাউশির মাধ্যমিক শাখার উপপরিচালক, বেসরকারি কলেজ শাখার কতিপয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখছে মন্ত্রণালয়। এ ধরনের অন্তত অর্ধশতাধিক বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের বদলি হতে পারেন।

এদিকে বদলির বিষয়ে আঁচ করতে পেরে শিক্ষাভবন, শিক্ষাবোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোয় বদলি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তদবির শুরু হয়েছে বদলি ঠেকাতে। আবার সরকার সমর্থিত নবীন কর্মকর্তারা বদলির শূন্যপদে পদায়ন পেতে তদবিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

এমপিওভুক্তিতে দুর্নীতির অভিযোগে চার জেলা ও ৯ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে বদলি করেছে মাউশি। আরও অর্ধশতাধিক কর্মকর্তাকে বদলির নথি উপস্থাপন করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে মাউশির আঞ্চলিক অফিসের উপপরিচালক, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। তাদের বিরুদ্ধে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে বলে মাউশির সূত্র জানিয়েছে।

মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, যাদের বদলি করা হয়েছে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ছিল। অভিযোগের আলোকে বদলি করা হয়েছে। এ বদলি চলমান থাকবে।

/এসকে/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত