ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১২ মিনিট আগে
শিরোনাম

এমপিওভুক্তি ও জাতীয়করণে ঘুষ বন্ধে করণীয় কি?

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০১৮, ১৭:৪১  
আপডেট :
 ০২ মার্চ ২০১৮, ২৩:৫৭

এমপিওভুক্তি ও জাতীয়করণে ঘুষ বন্ধে করণীয় কি?

দেশের শিক্ষাখাতে পদে পদে ঘুষ বাণিজ্য সকল দপ্তরের রেকর্ডকে ছাড়িয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে শিক্ষা অধিদপ্তর পর্যন্ত সকল বিভাগ, শাখা ও ইউনিটেই ‘ঘুষ’ একচ্ছত্র প্রভাব ফেলছে। স্কুলে ছাত্র ভর্তি, শিক্ষক নিয়োগ, বদলি, পদায়ন, শিক্ষকের এমপিওভুক্তি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন, জাতীয়করণ এমনকি অবসরের পর পেনশনের টাকা তুলিতেও ঘুষ চলছে অবাধে। এমপিওভুক্তিতে (মান্থলি পে-অর্ডার) দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং জেলা ও উপজেলাভিত্তিক এমপিও দালালদের একাধিক চক্র গড়িয়া উঠেছিল। এই চক্রে উৎকােচ না দিয়ে এমপিওভুক্ত হওয়া ছিল অসম্ভব।

এমপিওভুক্তিতে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করিতে ২০১৫ সালে এমপিওভুক্তি বিকেন্দ্রীকরণ এবং অনলাইন প্রক্রিয়া চালু করে সরকার। কিন্তু সুফল পাওয়া যায়নি। বরং হয়রানি, ঘুষের পরিমাণ এবং ধাপ বাড়িয়াছে। বিভিন্ন খাতে ডিজিটালাইজেশনে দুর্নীতি কমিলেও শিক্ষাখাতে ঘটছে উল্টাে ঘটনা। জালিয়াতির মাধ্যমে অনুমোদনহীন বিষয়ের, প্রাপ্যতার অতিরিক্ত, ভুয়া সনদধারী ও বিষয়ভিত্তিক পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী না থাকিলেও এমপিওভুক্ত হচ্ছেন শিক্ষকেরা। এমপিওভুক্তির ফাইল অনুমোদন করাইতে চলছে লাখ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেন। সম্প্রতি সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এর পূর্ণাঙ্গ চিত্র।

জানা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) উপ-পরিচালক হইতে শুরু করে শিক্ষা অফিসার, অফিস সহকারী, স্টেনোটাইপিস্ট এমনকি নৈশ প্রহরীও শিক্ষকদের এমপিওভুক্তিসহ নানা কাজে হয়রানি করছেন। চার হইতে পাঁচ স্তরে অনিয়ম হয় শিক্ষক এমপিওভুক্তিতে। ঘুষ দিলেই অনলাইন ফাইলে সঠিক মন্তব্য করা হয়, নয়তো নানা কারণ দেখাইয়া আবেদন বাতিল করা হয়। নতুন এমপিওর ক্ষেত্রে প্রতি স্তরে ঘুষ দিতে হয় ১৫ হইতে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রতি শিক্ষকের এমপিওতে মোট ঘুষ দিতে হয় লক্ষাধিক টাকা। ইতোমধ্যে অবশ্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। অর্ধশতাধিক অসাধু কর্মকর্তার তালিকাসহ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের শাস্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

শ্রম, অর্থ ও সময় বাঁচানোর পাশাপাশি দুর্নীতি কমাতে বিকেন্দ্রীকরণ করে অনলাইনে বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির কার্যক্রম শুরু করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ৯টি আঞ্চলিক কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের হাতে দেয়া হয়েছিল দায়িত্ব। কিন্তু ফল হয়েছে উল্টা। ঘুষ ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে শিক্ষা বিভাগের মাঠ প্রশাসন কার্যালয়। তাদের অনিয়ম, বেপরোয়া ঘুষ-দুর্নীতিতে বেকায়দায় পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাউশি। দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থানকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে আমরা কোনোরকম কৃপা প্রদর্শন বা গুরুতর অপরাধের লঘু শাস্তিদানের বিরুদ্ধে। এই ব্যাপারে সরকারকে আরো কঠোর হতে হইবে। কেননা, তারা কেবল শিক্ষাখাতে সরকারের একাধিক সাফল্য ও অঙ্গীকারকেই ম্লান করছে না; বরং বহু বছর ধরে শিক্ষাখাতে এইরূপ অনিয়ম-দুর্নীতির মহামারী ঘটিয়ে তাহারা দেশের মেরুদণ্ডটিই দুর্বল করে ফেলছে।

আরো পড়ুন : ১১৭ শিক্ষক-কর্মকর্তার নাম শিক্ষামন্ত্রীর টেবিলে, তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের

/এসকে/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত