ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

ভিসিকে তার সন্তানের পিতা দাবি করে ঝিলিকের আর্তনাদ

  গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০১৮, ০১:৫৮

ভিসিকে তার সন্তানের পিতা দাবি করে ঝিলিকের আর্তনাদ

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি)-ও বিরুদ্ধে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে এক অসহায় নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ উঠেছে। যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে অবশেষে মুখ খুলছেন আফরিদা খাতুন ঝিলিক (১৯) নামে অসহায় ওই নারী কর্মচারী। রোববার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে এমএলএসএস হিসেবে মাস্টার রোল ভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত নারী কর্মচারী ভিসি-র অফিস কক্ষের সামনে তার দুগ্ধশিশু সন্তানকে বুকে জড়িয়ে চিৎকার ও আর্তনাদ করে তিনি তার এ প্রতিবাদ জানান।

গত ২২ এপ্রিলের সংবাদদাতা প্রাপ্ত ২১ মিনিটের ভিডিও ক্লিপ ও ২৩ এপ্রিল সরেজমিন তথ্যে দেখা যায়, ঝিলিক তার এক বছর বয়সী কন্যা সন্তানের পিতৃত্বের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। এ সময় সে ভিসিকে তার সন্তানের পিতা দাবি করে চিৎকার করে বলতে থাকেন ‘এ সন্তান ওনার, এ সন্তানের সাথে ওনার চেহারার অনেক মিল আছে।’

এ সময় ভিসি খোন্দকার নাসির উদ্দিন তার ভাড়াটিয়া লোকজন দিয়ে ঝিলিককে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে দীর্ঘ সময় আটকিয়ে রাখে এবং বিভিন্ন প্রকার হুমকি প্রদান করেন। ভিসির নারী কেলেঙ্কারির বিষয়টি এখন টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে।

এদিকে, ভিসি-র কুকীর্তি ধামাচাপা দিতে একটি প্রভাবশালী মহল ওঠে পড়ে লেগেছে। কতিপয় কথিত সাংবাদিককে হাত করে গণমাধ্যমকে ম্যানেজ করার চেষ্টা চলছে বলেও জানা গেছে। মুখ না খুলতে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে ভুক্তভোগী পাশবিকতার শিকার ঝিলিক ও তার স্বামীকে।

আফরিদা খাতুন ঝিলিকের আর্তনাদের ধারণকৃত ভিডিও ক্লিপে আরো দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন চাকরি দেয়ার কথা বলে তাকে বিভিন্ন সময় যৌন নির্যাতন করতে বাধ্য করেন।

এছাড়া সম্পত্তি করে দেয়ার আশ্বাস প্রদান ও ভালবাসার ছলনার দ্বারা প্রলুব্ধ করে দিনের পর দিন তার বাংলোয় রেখে তাকে ভোগ করেন। কান্না বিজড়িত কণ্ঠে নির্যাতিত ঝিলিক বলতে থাকেন ‘আজ আমি সবকিছু’ ফাঁস করে দেব’। ‘খুলে দেব মানুষ নামের নরপশুর মুখোশ’। এ ছাড়া ভিসিকে তার কন্যা সন্তানের পিতা হিসাবে দায়ী করে তার কাছে আরো অন্যান্য ভিডিও ক্লিপ আছে বলে দাবি করেন যা তার এ দাবিকে প্রমাণ করবে বলে সে জানায়।

‘তুমিও এতিম-আমিও এতিম’, ‘তুমি আমার কষ্ট বুঝবে-আমি তোমার কষ্ট বুঝবো’ এমন সব আবেগী ও প্রেমময়ী কথা দিয়ে ভিসি নাসির তার সাথে ব্লাকমেইল করে-সর্বস্ব লুটে নেয় বলে ঝিলিক ভিসির বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেন।

জানা গেছে, গোপালগঞ্জের ভূতপূর্ব জেলা প্রশাসক (বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পরিচালক হিসাবে কর্মরত) মো. খলিলুর রহমান বিগত ২০১৬ সালে শেখ রাসেল দুস্থ পুনর্বাসন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, টুঙ্গিপাড়ায় অনাথ হিসাবে আশ্রিত ঝিলিককে পিতৃ স্নেহে নিজের মেয়ে পরিচয়ে মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। পরবর্তীতে তিনি তার মেয়ে অনাথ ঝিলিককে বশেমুরবিপ্রবি-ও ভিসির কাছে চাকরির ব্যাপারে অনুরোধ করেন। ভিসি খোন্দকার নাসির উদ্দিন তাকে নিজ বাংলোতে আশ্রয় প্রদানসহ মাস্টার রোলে কার্য প্রদান করেন।

ঘটনায় আরো জানা যায়, এক পর্যায় সে গর্ভবতী হয়ে পড়ে তখন তার গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হলে ঝিলিক তা করতে অস্বীকার করেন। ফলে ঝিলিককে চোর অপবাদ দিয়ে তার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তাকে বাংলো থেকে বের করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে ঝিলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্বে অবস্থিত সোনাকুড় গ্রামে বাসা ভাড়া নিলে ভিসি তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে ঝিলিককে মারপিট করায় এবং তাকে ওই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলে।

পরবর্তীতে একটি সমঝোতার মাধ্যমে ঝিলিককে প্রতি মাসে ৮ হাজার টাকা প্রদানের অঙ্গিকার করেন ভিসি নাসির। ঝিলিকের ব্যবহৃত গ্রামীণ ফোন নম্বরে বিকাশ একাউন্টের মাধ্যমে ওই টাকা পাঠিয়ে দেয়া হতো। সর্বশেষ গত ২৪ মার্চ বিকাশের মাধ্যমে ঝিলিককে ৮ হাজার টাকা পাঠানো হয়। ভিসির আস্থাভাজন ও প্রভাবশালী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রশাসনিক একজন কর্মকর্তা এ দায়িত্ব পালন করতেন।

উল্লেখ্য দীর্ঘ দিন ধরে কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকা সত্বেয় প্রতি মাসে ঝিলিককে ওই টাকা পাঠানো হতো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-র নারী কেলেঙ্কারির বিষয়টি নতুন কিছু নয়। গত বছর ৫মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ভিসি-র বাসভবনে বিউটি পার্লার’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সময় সংবাদটি আলোড়ন সৃষ্টি করে। সম্প্রতি বিভিন্ন অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নারী অফিস সহকারীর সাথে ভিসি-র অনৈতিক সম্পর্কের খবর প্রকাশ হয়।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন নারী শিক্ষকের সাথে ভিসি-র অনৈতিক সম্পর্ক নিয়েও জনশ্রুতি রয়েছে।

এবিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-র সাথে সরাসরি যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আল-আমিন শিকদার (কুটু) নামে এক ব্যাক্তি প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে চাকরীর আবেদন করে। কিন্তু তার চাকুরী না হওয়ায় কারণে সে ঝিলিককে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করাচ্ছে, আমাকে ব্লাকমেইল করার জন্য।

অসহায় অনাথ ঝিলিক ভিসির ক্যাডার বাহিনীর ভয়ে জিম্মি ও দিশেহারা। বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা শহরে বিষয়টি এখন ব্যাপক আলোচিত। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে এর সুষ্ঠু বিচার প্রত্যাশা করেন।

বিএএফ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত