ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনায় প্রবীণ শিক্ষক

  যশোর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০১৮, ২২:২৯  
আপডেট :
 ০৪ জুলাই ২০১৮, ২২:৩৯

শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনায় প্রবীণ শিক্ষক

মৌলভী শেখ আবদুল মাজেদ। বয়স ৯০ ঊর্ধ্ব। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন। সবশেষ ১৯৮৯ সালে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নরসিংহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসরে যান। দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে তিনি কোমলমতি শিশুদের মাঝে আলো ছড়িয়ে দিতে কাজ করেছেন। শিক্ষকতার শুরুতে ৫ টাকা বেতন পেতেন। টাকার জন্য নয়, ছেলে-মেয়েদের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করার প্রয়াসে কাজ করেছেন। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি আদর্শ ও চরিত্রবান করে গড়ে তুলতে শিক্ষকদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের সেই ভূমিকা অনুপস্থিত। অতীত ও বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্যের নানা দিক তুলে ধরেছেন তিনি।

আরো পড়ুন: ২১৩ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও বন্ধের নির্দেশ

মৌলভী শেখ আবদুল মাজেদ বলেন, আগে শিক্ষকের মর্যাদা ছিল। এখন সেই মর্যাদা নেই। আমরা যে দৃষ্টিভঙ্গিতে শিক্ষকতা করেছি, সেটা এখন নেই। এখন শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ শুরু হয়েছে। শিক্ষা বাণিজ্যের মধ্যে চলে গেলে সেই শিক্ষা প্রকৃত মানুষ গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না। ছেলে-মেয়েদের কাছ থেকে বিভিন্ন কায়দায় টাকা সংগ্রহের প্রবণতা বেড়েছে। লেখাপড়া হোক আর না হোক, মাস গেলে টাকা চাই। যারা ব্যবসায়ী শিক্ষকের কাছে শিক্ষাগ্রহণ করছে, সেই ছেলেমেয়েরাও (ছাত্র-ছাত্রীরা) পরে শিক্ষা ব্যবসায় নামছে। এতে শিক্ষার মান দিন দিন কমছে। কারো চরিত্র গঠন হচ্ছে না।

তিনি বলেন- প্রাইভেট, কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করে, ছেলে-মেয়েদের প্রকৃত শিক্ষা দানের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশ ও জাতির কল্যাণে উৎকোচ, বাণিজ্যের ঊর্ধ্বে উঠে ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সময় বেতন কম ছিল, কিন্ত আন্তরিকতা ছিল অত্যন্ত বেশি। তা না হলে পাঁচ টাকা দশ টাকায় ছেলে-মেয়ে ডেকে নিয়ে এসে পাঠদান করেছি। যখন টেনিংয়ে গেলাম পিআই (শিক্ষা অফিসার) সাহেব জিজ্ঞেস করেছিলেন- শিক্ষকতা করবেন কেন, বেতন তো নাই! উত্তরে আমি বলেছিলাম- স্যার, আমার টাকার দরকার নেই, আমি গ্রামের বাচ্চাদের শিক্ষিত, আদর্শ ও চরিত্রবান করে তুলতে চাই। তারা যেন বিপথে না চলে যায়।

আরো পড়ুন: অনশনে অসুস্থ দুই শতাধিক শিক্ষক

সেই আদর্শ নিয়েই শিক্ষকতা করেছি। কিন্তু আজকে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের কারণে ছেলেমেয়েরা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা পড়িয়েছি, ছেলেমেয়েরা সততার শিক্ষা পেয়েছে। কিন্তু এখন বইয়ে পড়ানো হয় এক, আর বাস্তবে শিক্ষা পায় অন্য।

প্রসঙ্গত, মৌলভী শেখ আবদুল মালেক ১৯৩০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার জহুরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালে মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ১৯৬৪ সালে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন জহুরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর ১৯৬৬ সালে পিটিআই প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। ১৯৭২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। প্রধান শিক্ষক হিসেবে ১৯৮৯ সালে অবসর নেন। ব্যক্তিগত জীবনে পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের জনক তিনি। আরো পড়ুন: এমপিও নিয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী

  • সর্বশেষ
  • পঠিত