ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

‘শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, শিক্ষকরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে’

  ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০১৮, ১৫:০১

‘শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, শিক্ষকরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে’

ক্যাম্পাসে শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, শিক্ষকরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে- বলে দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) শিক্ষক লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। শহীদ মিনারে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে শিক্ষার্থী নিপীড়ন ও শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকবৃন্দ এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন শিক্ষার্থীরা নিজেদের ইচ্ছামতোই করেছে। কিন্তু যখন তারা ছাত্রলীগের আক্রমণের শিকার হলো, তখন শিক্ষক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব তাদের পাশে দাঁড়ানো। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর যখন হামলা হয়েছে, তখন আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে আমরাও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছি। আমাদেরকে বিভিন্ন ব্লেম দেয়া হয়েছে, গালাগাল দেয়া হয়েছে। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, আমরা শিক্ষকরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

সংবাদ সম্মেলনে ড. সামিনা লুৎফা লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক, সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক খান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে ড. সামিনা লুৎফা নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকদের পক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এগুলো হলো- আগামী বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) সকাল ১১টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে শিক্ষকদের সংহতি সমাবেশ; ২৩ জুলাই কলাভবনের সামনের বটতলায় নিপীড়নবিরোধী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কাছে শিক্ষক লাঞ্ছনার পরিপ্রেক্ষিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য অবিলম্বে পত্র প্রেরণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্বতা রক্ষা, অ্যাকাডেমিক মান সমুন্নত রাখা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের কাছে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকদের উদ্যোগে শিগগিরই স্মারকলিপি প্রদান।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ছাত্রলীগ কর্তৃক শহীদ মিনারে লাঞ্ছনার শিকার পাঁচ শিক্ষক সার্বিক বিষয় অবহিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে চিঠি দিবেন।

এদিকে সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক বলেন, শহীদ মিনারে সমাবেশের পরে হামলার বিষয়ে আমরা যখন প্রক্টরের সাথে যোগাযোগ করি, তখন আমাদেরকে বলা হলো আমরা কেন সমাবেশ করার আগে অনুমতি নিলাম না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩’র অধ্যাদেশের কোথাও ক্যাম্পাসে সমাবেশ করার জন্য অনুমতি নিতে হবে, এমনটা বলা আছে বলে মনে হয় না। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরা সমাবেশ শুরু করার আগে আরো একটি গ্রুপ সেখানে সমাবেশ করে। তাদের সমাবেশ করার জন্য কোন অনুমতি ছিলো বলে মনে হয় না।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান বলেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশের পূর্বে আমরা প্রক্টরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। হামলা ও লাঞ্ছনার পরে তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জনে শিক্ষকদের কোন ইন্ধন নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা স্বাধীন। তাই যার ইচ্ছা হবে সে ক্লাস করবে, যার ইচ্ছা হবে না, সে করবে না। আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। তাদের ক্লাস বর্জনে আমরা কোন সমর্থন বা ইন্ধন দিচ্ছি না।

সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, ছাত্রলীগ কর্তৃক লাঞ্ছনার শিকার হওয়ার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি আমাদের খোঁজ নেননি। উল্টো প্রক্টর আমাদেরকে বিভিন্ন ব্লেম দিচ্ছেন। যারা আমাদের ওপর হামলা করেছে, তারা ছাত্রলীগের গুন্ডা বাহিনী। তারা কোথায় পড়াশোনা করেছে, তা জানি না। তাদের ভাষা খুবই খারাপ। ছাত্রলীগ তাদের ঐতিহ্য জানে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যবস্থা গ্রহণের অভাবে ছাত্রলীগ এতো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যদি এখনই কিছু করা না যায়, তবে ছাত্রলীগের এমন গুন্ডামী থামানো যাবে না।

তছাত্রলীগের কমিটি নেই বলে যারা ছাত্রলীগের ওপর হামলার দায় দিতে চান না তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না।

ডিপি/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত