ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

এইচএসসি পরীক্ষায় পাশের হার কমার কারণ

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০১৮, ০৯:৩১

এইচএসসি পরীক্ষায় পাশের হার কমার কারণ

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা গত তিন বছরে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে পাশের হারও।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন অনুষ্ঠিত এইচএসসি, মাদ্রাসা বোর্ডের আলিম এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসিসহ (বিএম) মোট ১০ বোর্ডের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। এতে সর্বমোট পাসের হার ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এ পাসের হার গত বছরের চেয়ে ২ দশমিক ২৭ শতাংশ কম। গত ৬ বছরের মধ্যেও এবারের পাসের হার সর্বনিম্ন। শুধু পাসই নয়, জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমেছে। এবার সর্বমোট ২৯ হাজার ২৬২ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। গত বছর পেয়েছিল ৩৭ হাজার ৯৬৯ জন। সেই হিসাবে জিপিএ-৫ কমেছে ৮ হাজার ৭০৭টি। তবে এবার ছাত্রীরা বেশ ভালো করেছে। ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীদের পাসের হার প্রায় ৬ শতাংশ বেশি।

পরীক্ষার ফল মনের মতো হয়নি, এমন অভিজ্ঞতার সাথে কম বেশি হয়ত সবাই পরিচিত। সিলেটের শমসের নগরের এক শিক্ষার্থী বলেছেন, 'এবার পরীক্ষার হলে কোথায় যেন একটা ভয়ভীতির পরিবেশ ছিল। আর বারবার পরীক্ষার পদ্ধতি পরিবর্তনে তিনিও বেশ খানিকটা উদ্বেগের মধ্যে ছিলেন। আর যে সাবজেক্টের কারণে আমার এ-প্লাস মিস হয়েছে ঐ সাবজেক্টের কোয়েশ্চান প্যাটার্নটা ভিন্ন ছিল।'

নিজের নাম গোপন রেখে এই ছাত্রী আরো বলেছেন, 'আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা একেক বছর এক এক রকম প্যাটার্ন নিয়ে আসে। এবছর আমাদের শুরুতে বলা হল সারা বাংলাদেশ একই প্রশ্নে সবাইকে পরীক্ষা দিতে হবে। টিচাররাও আমাদের নার্ভাস করে দিয়েছিলো। এসব কিন্তু রেজাল্টে এফেক্ট করে'।

এদিকে বরিশালের রাজাপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডঃ কামরুন্নেসা আজাদ বলেছেন, 'ছেলেমেয়েরা মূল বই পড়ে না। যার কারণে বিষয় সম্পর্কে সে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল হতে পারেনা। মূল বই যে ছেলেমেয়ে পড়বে, সে কখনো খারাপ করতে পারে না। সে এমসিকিউ বলেন আর সৃজনশীল বলেন। অবশ্যই আমি সহযোগী বইয়ের সাহায্য নেবো কিন্তু মূল বইটা টার্গেট থাকতে হবে, শিক্ষকের বেলায়ও তাই।'

তিনি আরও বলেছেন, 'আধুনিক এই যুগে ছেলেমেয়েরা লেখে কম। ধরুন একটি রুটিন টাঙানো হল তারা মোবাইল দিয়ে ছবি তোলে। কেউ লেখে না। ধরুন সাতটা সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। আর প্রত্যেকটির জন্য সময় মোটে বিশ মিনিট করে। তারা কুলাতে পারেনা।'

শিক্ষা, গবেষক ও অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, নানা সময়ে লিবারেল মার্কিং বা লিখলেই নাম্বার দেওয়ার প্রবণতা বলে একটি বিষয় সম্পর্কে শোনা গেছে।

সেই কারণেও পাশের হার বেশি থাকতো বলে তিনি মনে করেন। তার মতে, সেটিই বরং দেশের ক্ষতি করেছে। তিনি বলেছেন, 'তখন হয়ত লিবারেল মার্কিং বা লিখলেই নম্বর দেয়ার একটা প্রবণতা ছিল। এভাবে অনেকেই ভাল ফল করেছে। এইটাই ছিল আমাদের শঙ্কার কারণ। যোগ্যতা ছাড়াও অনেকে ভাল ফল করেছে। তারা জাতির অ্যাসেট না হয়ে বরং বার্ডেন হয়ে যায়।'

তিনি আরো বলেছেন, 'হতে পারে হয়তো বেশি পাশ দেখালে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় হয়তো দেখাতে পারে যে দেশে শিক্ষার মান বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু বেশি জিপিএ পাওয়া মানেই যোগ্যতা নয়।'

অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, 'এখন হয়তো আমরা আসল চিত্রটি পেতে শুরু করেছি। গত তিন বছরে আমরা এই ট্রেন্ড থেকে কিছুটা সরে আসছি। আমি মনে করে আমরা সত্যের দিকে যাচ্ছি। আর এতে শঙ্কার কিছু নেই।'

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বৃহস্পতিবার পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, কেন এবার পাশের হার কম হল তার কারণ বের করার চেষ্টা করা হবে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, 'যা বাস্তব ফল বেরিয়ে এসেছে, আমরা তাই করেছি। কেউ কেউ প্রথম প্রথম বলতেন যে আমরা নম্বর বাড়িয়ে দিতে বলি। আমরা বাড়িয়ে দিতেও বলি না। কম দিতেও বলি না। যখন বেশি পাশ করেছে সবাই বিস্মিত হইছে। আমরা প্রশ্ন বিদ্ধ হইছি বেশি পাশ করাই দিচ্ছি এইজন্য। বেশি পাশ করলেও আমাদের অপরাধ, কম পাশ করলেও অপরাধ।'

আমরা ভালো করে দেখে কারণ বের করার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

জেডআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত