ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

অন্ধত্ব দমাতে পারেনি ঢাবি শিক্ষার্থী তৃষ্ণাকে

  ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০১৮, ১৬:৩২  
আপডেট :
 ২০ জুলাই ২০১৮, ১৬:৪৬

অন্ধত্ব দমাতে পারেনি ঢাবি শিক্ষার্থী তৃষ্ণাকে

অদম্য ইচ্ছাশক্তির বলে কোনো বাধাই দমিয়ে রাখতে পারেনি ঝিনাইদহের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সাদিয়া আফরিন তৃষ্ণাকে। জীবন সংগ্রামের কয়েক ধাপ পেরিয়ে তিনি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। উচ্চ শিক্ষিত হয়ে সমাজের জন্য নিজেকে মেলে ধরতে চান এই সংগ্রামী। হতে চান শিক্ষক। এজন্য সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের সহায়তা চেয়েছেন দরিদ্র বাবা-মা। তৃষ্ণার স্বপ্ন পূরণে সব ধরণের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার ব্রাহিমপুরের নাইট গার্ড মিজানুর রহমানের সন্তান সাদিয়া আফরিন তৃষ্ণা। বাবা-মায়ের ৩ সন্তানের মধ্যে সবার বড় তৃষ্ণা। ২০০৭ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়ার আগে চোখে ঝাপসা দেখা শুরু করেন। এরপর তাকে রংপুর, সিরাজগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও সর্বশেষ ঢাকা ইসলামীয়া চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পিতার সহায় সম্বল বিক্রি করে কয়েক ধাপে চিকিৎসা করেও তার দৃষ্টিশক্তি ফেরানো সম্ভব হয়নি। ওই বছরের শেষের দিকে তার দুই চোখের আলো নিভে যায়। দৃষ্টি হারানোর পর কখনো একা একা পড়ার সক্ষমতা হয়নি। সঙ্গে রয়েছে দারিদ্র্যের কশাঘাত। কিন্তু একটুও মনোবল হারাননি। তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকা ব্যাপিষ্ট চার্চ মিশনারিজ স্কুলে। অষ্টম শ্রেণি পাস করার পর তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকা আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে।

২০১৫ সালে এ গ্রেড নিয়ে এসএসসি পাস করার পর ভর্তি হয় বেগম বদরুন্নেছা মহিলা কলেজে। সেখান থেকে এ-গ্রেড নিয়ে নিয়ে পাস করেন। ব্যাপিষ্ট চার্চ মিশনারিজ স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণি পাস করার পর শিক্ষকদের লেকচার রেকর্ড করতে পড়তে হয়েছে। এছাড়াও বন্ধুদের দিয়ে পড়া রেকর্ড করিয়ে দিয়েছেন এসএসসি, এইচএসসি ও ভর্তি পরীক্ষা। লেখাপড়া ভালোভাবে চালিয়ে নেওয়ার জন্য এখন প্রয়োজন একটি ল্যাপটপ। অর্থাভাবে একটি ল্যাপটপ কিনে দিতে পারছেন না পরিবার, সেখানে চোখ লাগানো তো দূরের কথা।

তবে, অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকায় মনোবল হারাননি তিনি। ধাপে ধাপে মেধার স্বাক্ষর রেখে, তৃষ্ণা এখন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। জীবন সংগ্রামে সফল হয়ে দেশ ও সমাজের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার প্রবল ইচ্ছা তার। কিন্তু বাধা একটাই, দারিদ্র্যতা।

তৃষ্ণা বলেন, চোখের আলো না থাকলেও দেখেন শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন, ইচ্ছা নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সমাজের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের শিক্ষার দ্বায়িত্ব নেওয়ার। লেখাপড়া শেষ করে তিনি বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে একজন ভালো শিক্ষক হতে চান।

তৃষ্ণা আরও বলেন, ক্লাসে শিক্ষকদের লেকচার শুনে সেটি রেকর্ড করা অনেক সমস্যা। কেউ যদি আমাকে একটা চোখ দান করতো অনেক ভালো হতো।

তৃষ্ণার স্বাভাবিক জীবন দেখতে চান পরিবারের সদস্যরা। এজন্য, সমাজের বিত্তবানদের সহায়তা চেয়েছেন তারা। তৃষ্ণার বোন বলেন, স্বাভাবিক থাকলে বড় আপার সংসার হতো।

তৃষ্ণার পিতা মিজানুর রহমান বলেন, নিজের ২ বিঘা জমি বিক্রি করে মেয়ের চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু চোখ ভালো হয়নি। এখন অনেক কষ্টে লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছি। সমাজের বিত্তবানরা যদি তার লেখাপড়ার দায়িত্ব নিতেন তাহলে তার স্বপ্ন পূরণ হতো।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে দরখাস্ত দিয়েছিলাম চিকিৎসার জন্য।

এ অবস্থায় তৃষ্ণার স্বপ্ন পূরণে সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ। ডিসি বলেন, আমরা আশা করি সে লেখাপড়া শেষ করে একজন স্বাবলম্বী ও ভালো মানুষ হয়ে সমাজ তথা দেশের কল্যাণে কাজ করুক। তৃষ্ণার সহযোগিতা করতে মোবাইল করুন ০১৭০৮-৩২৬৫৯২।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত