ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

জাতীয়করণ ও এমপিওভুক্তির ভুয়া চিঠি দিয়ে প্রতারণা

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০১৮, ১২:৩৮  
আপডেট :
 ১৯ আগস্ট ২০১৮, ১২:৪৪

জাতীয়করণ ও এমপিওভুক্তির ভুয়া চিঠি দিয়ে প্রতারণা

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ ও এমপিওভুক্তির নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে একটি চক্র। যার মাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতারকরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নামে একের পর এক জাল চিঠি ও আদেশ-নির্দেশ পাঠাচ্ছে হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ভুয়া স্মারক নম্বর ও কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করে এসব নির্দেশ পাঠানো হচ্ছে। সম্প্রতি এ ধরনের আটটি ভুয়া চিঠি কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে।

এমন কি চিঠি পাঠানো হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন অধিদপ্তর ও প্রকল্পের নামেও। এমন পরিস্থিতিতে গত ২৬ জুলাই নিজেদের ওয়েবসাইটে একদিনে দুটি সতর্ক বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি)।

প্রসঙ্গত, গত ১২ আগস্ট ২৭১টি বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণের গেজেট হয়। আরও ৪০টি কলেজের গেজেটভুক্তি মামলাসহ নানা কারণে আটকে আছে। আর নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির আবেদন নেওয়া হয়েছে গত ৫ থেকে ১৮ আগস্ট। এগুলো এখন সরকারের বিবেচনাধীন।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, একটি সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র মন্ত্রণালয়ের নামে নানা ভুয়া চিঠিপত্র ছড়িয়ে অর্থ আদায়ের ফন্দি এঁটেছে। বেশ কিছুদিন ধরে এ কাজ চললেও এখন পর্যন্ত প্রতারকচক্রের কেউই চিহ্নিত হয়নি।

এদিকে কেবল সতর্ক বিজ্ঞপ্তি দিয়েই দায়িত্ব সেরেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ সুযোগে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকরা। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, এর সঙ্গে মন্ত্রণালয় ও মাউশিরই অসাধু কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারি জড়িত রয়েছে।

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি আদেশ, নির্দেশ নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। তাই এ ধরনের কোনো চিঠি পেলে তা যাচাই করে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে তারা।

জাতীয়করণ ও এমপিওভুক্তির বিষয়ে কোনো চিঠি, এসএমএস বা অন্য কোনোভাবে কেউ টাকা-পয়সা চাইলে সঙ্গে সঙ্গে তা স্থানীয় পুলিশকে জানাতে পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেসরকারি স্কুল-কলেজ জাতীয়করণ ও নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির কথা বলে প্রতারকচক্র মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এর আগে গত বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য তালিকাভুক্ত করার কথা বলে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয় একটি চক্র। সেবারও মন্ত্রণালয় কেবল গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েই দায় এড়িয়েছে।

যেভাবে প্রতারণা শিক্ষকরা জানান, এবারের প্রতারণা শুরু হয়েছে ১৫ জুলাই থেকে। সারাদেশের সাড়ে সাত হাজার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় সোয়া লাখ শিক্ষক-কর্মচারী এ মুহূর্তে এমপিওভুক্তির আশায় চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করছেন। ঠিক সে সময়ই হাজার হাজার বেসরকারি স্কুল-কলেজে ভুয়া চিঠি পাঠিয়ে তাদের অনলাইনে তালিকাভুক্ত হতে এবং ইউজার আইডির পাসওয়ার্ড সংগ্রহ করতে বলা হয়। এ জন্য একটি বেসরকারি ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট নম্বরও দেওয়া হয় এবং শিক্ষকপ্রতি দুই হাজার টাকা করে পাঠাতে বলা হয়। এরই মধ্যে এ প্রক্রিয়ায় বিপুলসংখ্যক শিক্ষকের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) জাবেদ আহমেদ স্বাক্ষরিত এক সতর্কবার্তায় বলা হয়, নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে একটি প্রতারকচক্র শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্টের ভুয়া স্বাক্ষরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পত্র প্রেরণ করেছে। যার সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের কোনো সংশ্নিষ্টতা নেই।

এ বার্তায় এ ধরনের প্রতারকচক্র থেকে সংশ্নিষ্ট সবাইকে সাবধান থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

সূত্র জানায়, নন-এমপিও প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে দেওয়ার নামে মন্ত্রণালয়, মাউশি ও মাঠ পর্যায়ের একশ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং দালালদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটই জাতীয়করণ ও এমপিওভুক্তকরণের নামে সারাদেশ থেকে নানা কৌশলে টাকা-পয়সা আদায় করছে।

বেতন বাড়ানোর প্রতারণা একইভাবে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) নামে একটি ভুয়া চিঠি সারাদেশের জাতীয়করণ হতে যাওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠানো হয়। মাউশির সহকারী পরিচালক (কলেজ-৩) ফারহানা আক্তারের জাল স্বাক্ষরে পাঠানো এ চিঠিতে বলা হয়, 'জাতীয়করণ প্রক্রিয়াধীন থাকায় কলেজগুলোর তহবিল থেকে ও ব্যাংকে সংরক্ষিত অর্থ ব্যয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নির্দিষ্ট আয়ের প্রাপ্ত খাতের অর্থ সংকুলান সাপেক্ষে নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন তাদের মূল বেতন পর্যন্ত বর্ধিত করা যেতে পারে।' এ চিঠি পাওয়ার পর সারাদেশের বেসরকারি কলেজগুলোর নন-এমপিও শিক্ষকদের মধ্যে চাঞ্চল্য পড়ে যায়। সহকারী পরিচালক (কলেজ-৩) ফারহানা আক্তার বলেন, 'এ ধরনের কোনো চিঠি আমি সই করিনি। এমন কোনো নথিও নেই। পুরো বিষয়টিই ভুয়া।' এরপর ২৬ জুলাই মাউশির পক্ষ থেকে তাদের ওয়েবসাইটে এ চিঠির বিষয়ে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।

তথ্য চেয়ে প্রতারণা গত ১ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নামে আরও একটি ভুয়া চিঠি সারাদেশের সব জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসে গিয়ে পৌঁছে। ওই চিঠিতে নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নিজ প্রতিষ্ঠানের প্যাডে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ছক অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান প্রধানের নাম, তথ্য আদান-প্রদানের ই-মেইল এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানের মোবাইল নম্বর ই-মেইল করতে বলা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জানায়, এ রকম কোনো চিঠি তারা ইস্যু করেননি। কথিত ওই চিঠিতে স্বাক্ষরদাতা বাজেট শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব জাহাঙ্গীর আলম। বাস্তবে এই নামে বাজেট শাখায় কোনো সিনিয়র সহকারী সচিব নেই। ময়মনসিংহের জেলা শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, ডাকযোগে এই চিঠি ১৫ জুলাই তিনি পান। পরে তার অধীন সব উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে দেন। চিঠিটির বিষয়ে তিনি নিজেও সন্দিহান ছিলেন।

একটি সূত্র জানায়, নন-এমপিও প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে দেওয়ার নামে মন্ত্রণালয়, মাউশি ও মাঠ পর্যায়ের একশ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং দালালদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটই জাতীয়করণ ও এমপিওভুক্তকরণের নামে সারাদেশ থেকে নানা কৌশলে টাকা-পয়সা আদায় করছে।

ডিপি/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত