ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনকে ঘিরে বইছে অভিযোগের ঝড়

  ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০১৮, ২৩:৫৬  
আপডেট :
 ০৮ অক্টোবর ২০১৮, ২০:৫৩

সমাবর্তনকে ঘিরে বইছে অভিযোগের ঝড়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৫১তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল শনিবার। এবারের সমাবর্তনে সর্বাধিক সংখ্যক গ্র্যাজুয়েট স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিলেও সমাবর্তনের নানা আয়োজন নিয়ে অভিযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের।

ভুল সার্টিফিকেট প্রদান; সার্টিফিকেটের খামে ভুল বানান; বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর, ভাইস-চ্যান্সেলর ও প্রো-ভাইস চ্যান্সেলরের শব্দচয়নে বাংলা ও ইংরেজির সংমিশ্রণ; গ্র্যাজুয়েটদের নিম্নমানের সমাবর্তন উপহার প্রদান; ডিগ্রি প্রদানে নিম্নমানের খামের ব্যবহার; সমাবর্তনস্থলে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকা নিয়ে অভিযোগ করেছেন তারা। এসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিশেষ করে ফেসবুকে সমালোচনায় সরব সদ্য সমাবর্তন নেওয়া এসব শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ঢাবির ৫১তম সমাবর্তন ফ্যাকাল্টিভিত্তিক হ্যাট ও গাউনের রঙ ভিন্ন থাকলেও কেউ কেউ গাউনের সাথে ভিন্ন রঙের হ্যাট পেয়েছে। এগুলো আবার তাদের বন্টন করা হয়েছে পলিথিনের কাগজে। এছাড়া, ৫০তম সমাবর্তন উপলক্ষে গত বছর সমাবর্তনস্থলে পানি নিয়ে প্রবেশের ব্যবস্থা থাকলেও এবার তার অনুমতি দেয়া হয় নি।

এদিকে, গতবারের তুলনায় এবার নিন্মমানের সমাবর্তন গিফট দেয়া হয়েছে। আবার সার্টিফিকেট দেয়ার জন্য বিগত বছরগুলোতে বাধাই করা একটি উন্নত প্যাড দেয়া হলেও এবারে সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে একটি কাগজের ফাইলে। এতে আবার নেয়া হয়েছে স্পন্সর। যা সমাবর্তন ইতিহাসে প্রথম। অথচ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২৩০০-৩০০০ টাকা করে নেয়া হয়েছে। অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদেরকেও একই গিফট এবং গিফটে কলেজের নাম উল্লেখ না থাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত সব শিক্ষার্থীদের মধ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ পেয়েছে।

এ বিষয়ে অভিযোগ করে সাগর নামে এক শিক্ষার্থী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, সমাবর্তন উপলক্ষে যে উপহার শিক্ষার্থীদের দেয়া হয়েছে তার মূল্য ১০০০টাকা বা তার চেয়ে একটু বেশি হবে। অথচ আমাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ২৩০০টাকা করে। আবার সার্টিফিকেট দেয়ার খামে নেয়া হয়েছে স্পন্সর। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের কর্তৃপক্ষের এসব করা সাজে না।

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামক ফেসবুক গ্রুপে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করে এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘৫০তম সমাবর্তনে প্রদানকৃত সার্টিফিকেটটি অনেক সুন্দর ডায়েরি বাইন্ডিং করে দেয়া হয়েছিল। অথচ ৫১তম সমাবর্তনের সার্টিফিকেটটি ফালতু একটা কাভারে দিয়েছে। যার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে স্পন্সরও (সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) জোগাড় করতে হয়েছে। এটা দেখে অনেক রাগ হচ্ছে। তিনি আরও লিখেছেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আর কত নিচে নামাবে? খুব বেশি গিফটের প্রয়োজন নেই যদি একটা গিফটও দেয় তা যেন মানসম্মত হয়, সেটাই আমাদের কাম্য।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থী আখতারুজ্জামান শাওন। তাকে হতাশা প্রকাশ করতে দেখা গেছে ৪ বছরের পরিশ্রমের ফসল সার্টিফিকেট নিয়ে। কাগজের খামের মধ্যে পাওয়া সার্টিফিকেটে তার বিভাগ লিখা হয়েছে ‘ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস’। নিজের ফেসবুক ওয়ালে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, মানুষ ভুল করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এটা কেমন ভুল? আর একজনের ভুলের মাশুল আরেকজন কেন দিবে? একই ঘটনা ঘটেছে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী সাজিদুল ইসলামের ক্ষেত্রেও। তিনি ম্যানেজমেন্ট থেকে স্নাতক করে পেয়েছেন মার্কেটিং বিভাগের সার্টিফিকেট। এসব ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে বিরল।

সমাবর্তন আয়োজনের শুরু থেকেই বিভিন্ন কাজে দেখা গেছে এমন প্রশাসনিক দায়িত্ববোধের অভাব। সার্টিফিকেট দেয়ার খামে 51st সমাবর্তনের জায়গায় লেখা হয়েছে 51th। এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর, ভাইস-চ্যান্সেলর ও প্রো-ভাইস চ্যান্সেলরের শব্দচয়নে বাংলা ও ইংরেজির সংমিশ্রণ ঘটেছে। চ্যান্সেলর লেখা ঠিক থাকলেও ভাইস চ্যান্সেলরের জায়গায় লেখা হয়েছে উপাচার্য। আবার প্রো-ভাইস চ্যান্সেলরের জায়গায় বাংলা ও ইংরেজির মিশ্রণে লেখা হয়েছে প্রো-উপাচার্য।

সমাবর্তনস্থলের তাপমাত্রা নিয়ে গত বছর রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের পরেও এবার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনের তেমন ব্যবস্থা ছিলো না। এছাড়া ৫১তম সমাবর্তনের স্মারকগ্রন্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষদের নামের বানানে ভুল পাওয়া গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গত দুইদিন যাবতই সমাবর্তনপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের এমন অনেক অভিযোগ উঠে এসেছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, কারা তোমার কাছে এসব অভিযোগ করেছে? তাদেরকে বল লিখিতভাবে আমার কাছে অভিযোগগুলো জানাতে।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত