ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

চাকরিজীবী প্রার্থীরা যেভাবে বিসিএস প্রিলি প্রস্তুতি নেবেন

  শাহ্ মো: সজীব

প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০১৮, ২১:০৩

চাকরিজীবী প্রার্থীরা যেভাবে বিসিএস প্রিলি প্রস্তুতি নেবেন

প্রিলিমিনারি পরীক্ষা যারা দিচ্ছেন তারা সবাই ফ্রেশ গ্রাজুয়েট নন। আছেন অন্য চাকুরিরত মানুষ অথবা কোন কাজে ব্যস্ত প্রার্থী যেমন- রাজনীতি করে, ব্যবসা করে বা পারিবারিক কাজে ব্যস্ত। আবার পড়াশুনার জন্য যে এসব ছেড়ে দিবে তাও সম্ভব না। কারণ ক্যাডার নিশ্চিত হওয়া যাবে এটা বলা বেশ কঠিন। কারো আবার আর্থিক কারণে চাকুরিটা চালিয়ে যেতে হয়। সব মিলিয়ে একটা উভয় সংকট অবস্থা। কিন্তু মনে লালন করেন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের সদস্য হওয়ার স্বপ্ন। যেহেতু তারা পূর্ণ সময় পড়াশুনার পিছনে দিতে পারেন না তাই তাদের প্রস্তুতি কৌশলও ভিন্ন হতে হবে। আর একটু কৌশলী ও পরিশ্রমী হলেই প্রিলিমিনারিতে টিকে যাবেন।

প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রধানত পাঁচটি বিষয়ের ওপর প্রশ্ন করা হয় সেটা বিসিএস প্রিলিমিনারির ক্ষেত্রেও সত্য। বিষয়গুলো হলো- বাংলা, ইংরেজি, গনিত, বিজ্ঞান ও সাধারন জ্ঞান। এগুলোকে বিস্তারিতভাবে ভাঙ্গলে দশটি বিষয় হয় প্রিলিমিনারির প্রশ্নের বিষয়। এবার বিষয় বলার সাথে সাথে প্রস্তুতি কৌশল আলোচনা করা যেতে পারে।

প্রথমেই যে কাজটি করতে হবে তা হলো দশম বিসিএস থেকে ৩৬তম বিসিএস পর্যন্ত প্রিলিমিনারি প্রশ্নগুলো ব্যাখ্যাসহ ভাল করে পড়তে হবে। এর কারন দুটো- কিছু প্রশ্ন রিপিট হয় ও প্রশ্নের ধরন বোঝা। তবে সাধারণ জ্ঞানের যে প্রশ্ন প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে তা বাদ দিন। এটা শেষ হলে বিষয় ধরে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে হবে।

(১) বাংলার মধ্যে দুইটা ভাগ আছে। ব্যাকরণ ও সাহিত্য। নম্বর ৩৫। এ জন্য আপনি দুইটা বই পড়বেন। ক) নবম দশম শ্রেনীর ব্যাকরণ বইটা। উদাহরণগুলো ভাল করে পড়বেন। কিছু জিনিস না বুঝলে টানা মুখস্ত করে ফেলবেন। এত বুঝে কি হবে! খ) প্রফেসর’স এমসিকিউ বাংলা রিভিউ গাইডটা থেকে প্রথমে সাহিত্যের অংশ পড়বেন। এখন প্রশ্ন হলো সাহিত্যিকের তো অভাব নাই। কাকে দিয়ে শুরু করি? তাহলে আগে গুরুত্বপূর্ণ লেখকদের পড়বেন। যারা সুপরিচিত তারা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর অজিত দত্ত সমান গুরুত্বপূর্ন নয়। বোঝা গেল বিষয়টা?

(২) ইংরেজিরও দুটো অংশ। ব্যাকরণ ও সাহিত্য। মোট নম্বর ৩৫। ইংরেজি অনেকের কাছে আতংকের নাম। পড়ার সময় যদি কোন টপিকস্ খুব বেশি কঠিন লাগে তা বাদ দিন। যেমন- অনেকেই ভয়েস বা ন্যারেশন কিছুতেই আয়ত্বে করতে পারে না। বাদ দিন দাদা। ঐ অংশ থেকে প্রশ্ন নাও আসতে পারে। তবে সব আবার বাদ দিয়ে দিয়েন না। হা হা হা। এক্ষেত্রে ব্যাকরণ ও শব্দের অর্থের জন্য পড়বেন English for competitive Exam by Fazlul Haque এবং ইংরেজি সাহিত্যের জন্য পড়বেন Radical English Literature. সাহিত্য পড়ার সময় পরিচিত লেখকদের আগে পড়ে নিবেন। আর লাগবে না।

(৩) সাধারন জ্ঞানের মধ্যে দুইটা ভাগ আছে। বাংলাদেশ বিষয়াবলী ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী। মোট নম্বর ৩০+২০=৫০. এর জন্য যা পড়বেন (ক) দৈনিক পত্রিকার পাঁচটি পৃষ্ঠা মনোযোগ দিয়ে। যথা- প্রথম পাতা, শেষ পাতা, অর্থনীতির পাতা, উপ-সম্পাদকীয় পাতা ও আন্তর্জাতিক পাতা। (খ) নতুন বিশ্ব (গ) মাসিক কারেন্ট অ্যাফেয়ারস। আর কিছু লাগবে না। তবে যা পড়বেন তা যেন মনে থাকে।

(৪) গনিতের জন্য ক্লাস এইট ও নবম-দশম শ্রেনীর বই। জ্যামিতিটা বাদ। জ্যামিতি অংশটা পড়বেন MP3 MCQ Math Review থেকে। প্রিলিমিনারিতে কঠিন জ্যামিতি আসে না। এখানে মোট নম্বর ১৫.

(৫) মানসিক দক্ষতা বলতে যে কোন কিছুকে বোঝায়। অন্য বিষয়ে ভাল জ্ঞান থাকলে এখানে ভাল করবেন। বাংলা, ইংরেজি, গনিত, সাধারন জ্ঞান, চিত্র ইত্যাদি থেকে প্রশ্ন হয়। মোট নম্বর ১৫. এজন্য ওরাকল লিখিত মানসিক দক্ষতা গাইডটা পড়লেই হবে। প্রথমে বিগত বিসিএসের রিটেনের মানসিক দক্ষতার প্রশ্নগুলো পড়ে নিবেন। সময় পেলে বাকী অধ্যায়গুলো দেখবেন।

(৬) সাধারণ বিজ্ঞানের জন্য MP3 দৈনন্দিন বিজ্ঞান গাইডটা পড়লেই হবে। বিজ্ঞান প্রশ্ন খুব রিপিট হয়। কারন বাঙালি বিজ্ঞান কম বোঝে। হা হা হা। মোট নম্বর ১৫. পড়লেই পারবেন।

(৭) কম্পিউটার ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তিতে ১৫ টি প্রশ্ন। Easy Computer গাইডটা যথেষ্ট যেহেতু সময় কম আপনার।

(৮) নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন থেকে ১০টি প্রশ্ন। এটা সাধারন জ্ঞানেরই একটা অংশ। এর জন্য আপনি MP3 এর একটা গাইড পড়লেই হবে। আর পরীক্ষার সময় খুব সতর্ক থাকবেন। সবগুলোই উত্তর মনে হয়। কি বিপদ!!

(৯) ভূগোল, পরিবেশ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা (বাংলাদেশ ও বিশ্ব) থেকে ১০টি প্রশ্ন হবে। এটি কিছুটা সাধারন জ্ঞান ও কিছুটা বিজ্ঞান দিয়ে তৈরী। এজন্য এ জামান চৌধুরীর লেখা রেডিক্যাল ভূগোল ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা গাইডটা পড়ুন। হয়ে যাবে।

উপরিউক্ত বিষয়ের সাথে প্রফেসর’স জব সলিউশনস গাইডটা পড়বেন। দৈনিক দুইটা প্রশ্ন সমাধান করবেন। পুরো গাইড পরীক্ষার আগে শেষ না হলেও ক্ষতি নেই। যা পড়েছেন তাই লাভ। একটা নোট খাতা বানাবেন যেখানে আপনার কঠিন বিষয়গুলো লিখে রাখবেন ও মাঝে মাঝে পড়বেন। এক সময় সহজ হয়ে যাবে।

পেপারটা অফিস এর মধ্যে পড়ার চেষ্টা করবেন। যদিও ঠিক না। কিন্তু কিছু করার নাই। আপনাকে সময় বাঁচাতে হবে। যে বিষয়গুলো শুধুই মুখস্ত তার ফ্লাশ কার্ড বানিয়ে নিন। যেমন- ওয়ার্ড মিনিং, গনিতের সূত্র, ইত্যাদি। আর অপ্রয়োজনীয় আড্ডা বাদ দিন। যে সময়টুকু পাবেন তার সঠিক ব্যবহার করবেন। কারন আপনাকে প্রিলিমিনারি পাস করতে হবে। আবার চাকুরিও করতে হবে। তাই আপনার সময়ের দামটা বেশি। মনে রাখার মত করে পড়বেন যেন কাজে লাগাতে পারেন। যদি বেশি বই ও গাইড পড়তে যান তবে আপনি গুলিয়ে ফেলতে পারেন যেহেতু আপনি পড়ার সময় কম পান। এভাবে প্রস্তুতি নিলে আশা করি আপনি বিসিএস লিখিত পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবেন।

মনে রাখবেন, প্রিলিমিনারিতে টিকার জন্য ২০০ তে ১৯০ বা ১৮০ লাগে না। কত লাগে? বলা কঠিন। তবে বিগত বছরে ১২০ এর বেশি লাগেনি। সুতরাং এত ভয়ের কিছু নেই। পড়তে থাকুন। দেখা হবে বিজয়ে।

লেখক: প্রশাসন ক্যাডার (২য় স্থান) ৩৪তম বিসিএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত