ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩০ মিনিট আগে
শিরোনাম

শিক্ষকদের বেতন ভাতায় বৈষম্য বেড়েই চলেছে

  আবদুল গনি

প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:২১

শিক্ষকদের বেতন ভাতায় বৈষম্য বেড়েই চলেছে

১৯৯৫ সাল থেকে প্রতিবছর ৫ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী পালিত হয় 'বিশ্ব শিক্ষক দিবস'। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হলো 'শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতে চাই যোগ্য শিক্ষক'। বিশেষ করে এ দিবসটি শিক্ষকদের অবদানকে স্মরণ করার জন্যেই পালন করা হয়। যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষকদের মধ্যেই রয়েছে জাতি গঠনের বুনিয়াদ। পৃথিবীর সব দেশের সমাজের কাছে শিক্ষক দিবসটি অত্যন্ত গৌরবময় ও মর্যাদার বিষয়।

দিবসটি উপলক্ষে অ্যাডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল (ইআই) প্রতিবছর একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে থাকে যা জনসচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে শিক্ষকতা পেশার অবদানকেও স্মরণ করিয়ে দেয়। দিবসটি পালনের জন্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক সংগঠন কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে।

ইউনেস্কোর মতে, বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পালন করা হয়। বিশ্বের ১শ' ৬৭টি দেশে এ দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। দিবসটি পালনে অ্যাডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল ও তার সহযোগী ৪শ' ১টি সদস্য সংগঠন মূল ভূমিকা রাখে। এ সংগঠনটি বিশ্বের ৩ কোটি ২০ লাখ সদস্যের প্রতিনিধিত্ব করছে এখন।

আন্তর্জাতিক এ সংগঠনটি জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশগুলো কর্তৃক প্রণীত দলিলটি যথাযথ বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করার অর্থবহ উদ্যোগগ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কোর ২৬তম অধিবেশনের গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে তৎকালীন মহাপরিচালক ড. ফ্রেডারিক এম মেয়রের ঘোষণার মাধ্যমে ৫ অক্টোবর 'বিশ্ব শিক্ষক দিবস' পালনের শুভসূচনা হয়।

১৯৯৪ সালের পর থেকে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই যথাযোগ্য মর্যাদায় বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয়ে আসছে। শিক্ষকদের অধিকার ও মর্যাদাসম্পর্কিত সাফল্যকে সমুন্নত রাখাসহ আরো সমপ্রসারিত করার লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালের ৫ অক্টোবর থেকে বর্তমানে বিশ্বের ১শ' ৬৭টি দেশে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করে থাকে।

উল্লেখ্য, শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণেই শিক্ষকদের আর্থসামাজিক সুরক্ষা এবং শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষা পাবে। শিক্ষা ও শিক্ষকদেরকেই জাতির মেরুদ- বলা চলে। এবারের 'বিশ্ব শিক্ষক দিবস-২০১৮' এমন একসময়ে দেশে পালিত হতে চলেছে যেখানে দেশের সাড়ে ৫ লাখ এমপিওভুক্ত এবং ১ লক্ষাধিক ননএমপিও বেসরকারি শিক্ষকগণ নানা বৈষম্যের ভেতর জীবনযাপন করছে। অপরদিকে সরকারি নির্দেশে শিক্ষকগণ নিয়োজিত রয়েছেন স্ব স্ব স্কুলের পরীক্ষার দায়িত্বে।

এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে শিক্ষকদের অধিকার নিশ্চিত হলে যোগ্য ব্যক্তিরা শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় প্রবেশ করবে। যা জাতি গঠনে ভূমিকা রাখবে। একটি দেশের ৯৮ ভাগ শিক্ষক যদি নানা বৈষম্যের ভেতর জীবনযাপন করে তাহলে সুস্থ মানবসন্তান ও দক্ষ জনশক্তি তৈরি কীভাবে হবে। এদিকে সরকারের 'রূপকল্প ২০২১' বাস্তবায়নে নানা বাধা এসে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।

দেশের শিক্ষকসমাজ মনে করে বর্তমান সরকারের '২০১০ শিক্ষানীতি' বাস্তবায়নেও শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করে শিক্ষাকে জাতীয়করণ অপরিহার্য। তাদের আর্থসামাজিক সুরক্ষা ও সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাজপথে মানববন্ধনসহ নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে আসছে। সরকার সব ধরনের শিক্ষকদের নতুন জাতীয় বেতন স্কেলের আওতাভুক্ত করেছে। নিঃসন্দেহে এটি প্রশংসার দাবিদার।

মহান স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এখনো সরকারি, বেসরকারি, মাদ্রাসা, কারিগরিসহ বহুধা বিভক্ত। সারাদেশের এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে ২ ভাগ সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বল্প ব্যয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পাচ্ছে।

দেশের ৯৮ ভাগ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে সুবিধাবঞ্চিত, নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও প্রান্তিক আয়ের জনগোষ্ঠীর সন্তানেরা। যাদের সামর্থ্য সীমিত অথচ শিক্ষা খাতে ব্যয় অনেক বেশি। সারাদেশে এসব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে প্রায় ৪ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী।

শিক্ষাব্যবস্থার দু ধারা সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আবার শিক্ষকদের মধ্যে এমপিওভুক্ত ও ননএমপিওভুক্তসহ বহুধারায় বিভাজিত সমযোগ্যতার শিক্ষক রয়েছে। তাদের বেতন-ভাতায়ও ব্যাপক বৈষম্য বিরাজমান। দিন দিন এ বৈষম্য বেড়েই চলেছে।

২০১৫ সালে ঘোষিত জাতীয় বেতন কাঠামোতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের গ্রেড অনুযায়ী মূল বেতন, বাড়ি ভাড়া ভাতা ১ হাজার টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৫শ' টাকা, উৎসব ভাতা মূল বেতনের চারভাগের একভাগ। বৈশাখী ভাতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাওয়ার কথা থাকলেও বেসরকারি শিক্ষকরা এ বছরও বৈশাখী ভাতা পাননি।

যার ফলশ্রুতিতে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে সাড়ে ৫ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে এবং জাতীয়করণের একদফা দাবিতে সংগঠিত হতে থাকে সারাদেশের বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা।

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা ৫ ভাগ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি, মূল বেতনের ৪৫ ভাগ বাড়ি ভাড়া, ১ হাজার ৫শ' টাকা চিকিৎসা ভাতা, শতভাগ উৎসব ভাতা, ২০ ভাগ বৈশাখী ভাতা, যাতায়াত ভাতা প্রশান্তি বিনোদন ভাতা, ভ্রমণ ভাতা, স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ, আবাসন সুবিধা, পেনশনসহ সরকারের দেয়া সকল সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। কোনো সরকারি কর্মকতা-কর্মচারীর অকাল মৃত্যু হলে ৮ লাখ টাকা এককালীন অনুদানসহ অবসরকালীন প্রাপ্য ও অন্যান্য যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা যথারীতি পাচ্ছেন।

আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারত ও শ্রীলংকাসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে শিক্ষকদের সর্বোচ্চ সম্মানী প্রদান করা হয়। শিক্ষার যাবতীয় দায়িত্ব রাষ্ট্রের। যেখানে সরকারি-বেসরকারি বিভাজন থাকার কথা নয়।

স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও কেনো বেসরকারি শিক্ষকসমাজ বৈষম্যের শিকার হবেন; তা ভাবতেও অবাক লাগে। শিক্ষকরা দাবি আদায় করতে রাজপথে নামছেন বারবার। কিন্তু রাজপথেও চলতি বছরে জায়গা হয়নি মানুষ গড়ার কারিগর বেসরকারি শিক্ষকদের। প্রায় দেড় লাখ শিক্ষকের উপস্থিতিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থাকলেও মাইক ব্যবহার করতে পারেনি। এভাবেই বেসরকারি শিক্ষকগণ বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার। ২০১৮ সালের আন্দোলনের তীব্রতা ছিলো। জেলায় জেলায় ও উপজেলায় উপজেলায় সব সংগঠন ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম কমিটিও গঠন করেছিলো।

শিক্ষকদের দাবি- বৈষম্যমূলক শিক্ষাব্যবস্থায় জাতির জন্যে কখনোই ভালো কিছু আশা করা যায় না। বেসরকারি শিক্ষকরা এসব সমস্যার সমাধান এখন দেখেন শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণে। শিক্ষকগণ চায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র বেতন, পরীক্ষা ফি ও অন্যান্য সূত্র থেকে যাবতীয় আয় জমা হবে সরকারি কোষাগারে। সরকারি কোষাগার থেকে মেটাবে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য ব্যয়। বেসরকারি শিক্ষকদের ধারণা, এ পথ ধরে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ করা হলে সরকারের মোট ব্যয় তেমন বাড়বে না। এতে শহর-গ্রামের মধ্যে ব্যবধান ঘুচবে এবং শিক্ষকদের আর্থসামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।

গোটা সমাজ দাঁড়িয়ে থাকে শিক্ষার ভীতের ওপর। তাই শিক্ষায় বেশি নজর দেয়ার অর্থ গোটা সমাজেরই মঙ্গলসাধন। শিক্ষার সামগ্রিক উন্নতি না হলে দেশের উন্নতি কী করে হবে। আমাদের আইন প্রণেতাদের সে কথা ভুলে গেলে তো চলবে না। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরেও নিরক্ষরতা শতভাগ দূর করে উঠতে পারিনি আমরা। পাবলিক পরীক্ষায় পাসের সংখ্যা বাড়লেও শিক্ষার মান দুঃখজনকভাবে নিম্নগামী। শিক্ষার কাঠামোটাকেই নাড়া দিতে হবে গোড়া থেকে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুলনায় আমাদের পরিস্থিতি শোচনীয়।

বুনিয়াদি শিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রেও। কিন্তু আমাদের সক্ষমতা থাকা স্বত্বেও শিক্ষাখাতে আশানুরূপ বিনিয়োগ হয়নি। অথচ অর্থনীতিতে অধিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিক থেকে পঞ্চম স্থানে বাংলাদেশ। বিশ্বের খুব কম দেশই একটানা এতো দীর্ঘ সময় ধরে ৬.৫ ভাগ ওপর প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছে। অচিরেই প্রবৃদ্ধি ৭.৫ ভাগ ছাড়িয়ে যাবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, কর্মসৃজন, খাদ্য উৎপাদন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, আমদানি ও রফতানি, দারিদ্র্য ও অসমতা হ্রাসসহ আর্থসামাজিক খাতের প্রতিটি সূচকেই বাংলাদেশ আর পিছিয়ে নেই।

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা। ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন, মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার নির্মাণ, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, সারাদেশে ১শ'টি অর্থনৈতিক জোন গঠন সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশের অভিযাত্রায় ক্রমঅগ্রসরমান।

বৈশ্বিক উন্নয়ন সূচকে ও সাত ধাপ এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। এখনি সময় শিক্ষাখাতকে বৈষম্যমুক্ত করে শিক্ষাব্যবস্থার সব স্তরকে জাতীয়করণের মাধ্যমে এক ও অভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা গণদাবিতে পরিণত হয়েছে।

তাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও বৈষম্যমূলক শিক্ষাব্যবস্থা এখনো বিরাজমান। যদিও একটি স্বাধীনদেশে কোনোক্রমেই এ ধরনের বৈষম্য থাকা উচিৎ নয়। তাই স্বাধীনতা লাভের পর শিক্ষকসমাজের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বৈষম্যের অবসানকল্পে শিক্ষাব্যবস্থার সব স্তরকে জাতীয়করণের মাধ্যমে এক ও অভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকার নীতিগতভাবে অঙ্গীকার করলেও আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

১৯৮০ সালে প্রথম শিক্ষকরা জাতীয় স্কেলভুক্ত হন এবং ৫০ ভাগ বেতন পেতেন। সরকারের তৎকালীন এক সচিব বলেছিলেন, 'শিক্ষকদের আন্দোলন মুহূর্তে বঙ্গোপসাগরের পানি তৈলে পরিণত হলে দাবি মানা যাবে।

১৯৮৪ সালে এমপিওভুক্ত এবং ১৯৮৭ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঢাকার বিজয় স্মারণীতে ১শ' টাকা বাড়ি ভাড়া ও ১শ' টাকা মেডিকেল ভাতা চালু করে বলেছেন, 'আমি এটা দিয়ে শুরু করলাম। ভবিষ্যতে আরো বাড়তে থাকবে।'

১৯৯০ সালের সরকার অবসরভাতা কল্যাণ ট্রাস্ট চালু ও আংশিক উৎসব ভাতা প্রবর্তন করেন। ১০% বেতনও বৃদ্ধি পায়।

১৯৯৪ সালে শিক্ষকরা সরকারের প্রেস নোট আগুনে জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানান। ২০০২ সালে উৎসব বোনাসের দাবিতে ঈদের দিন বাড়ি বাড়ি কালো পতাকা উড্ডয়ন করেন।

বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, 'আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে বেসরকারি স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের আর রাস্তায় নামতে হবে না।' এ সরকারে আমলে মাসিক বেতন রেওয়াজ ও ব্যাংক হিসেবে বেতন প্রদান প্রক্রিয়া চালু, বাড়ি ভাড়া ও মেডিকেল ভাতা বৃদ্ধি, শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই ও উপকরণ বিতরণ, উপবৃত্তি সরকারিভাবে প্রদানসহ শিক্ষকদের ১৫তম জাতীয় বেতন স্কেল প্রদান করা হয়। সর্বোপরি মাল্টিমিডিয়া ক্লামরুম চালু ইত্যাদি।

স্বাধীনতার পর থেকে ৪৮ বছরের মাথায় এসে শতভাগ বেতনভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা শিক্ষকরা পাচ্ছেন তবে বৈষম্য বিদ্যমান। সমযোগ্যতার শিক্ষকদের বেতন ভাতায় ব্যাপক বৈষম্য বিরাজমান যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। দিন দিন এ বৈষম্য বেড়েই চলেছে।

তাছাড়া ইউনেস্কো এবং আইএলও'র সদস্যভুক্ত দেশগুলোর শিক্ষকদের জন্যে ১৯৬৬ সালে গৃহীত 'শিক্ষক সনদ' থেকে আমাদের শিক্ষকসমাজ বঞ্চিত। শিক্ষাব্যবস্থায় সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধার অন্তর্ভুক্ত। পক্ষান্তরে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত, এমপিওবিহীনসহ বহুধারায় বিভাজিত।

বাংলাদেশের মতো একটি দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে এ মুহূর্তে শিক্ষাখাতে যথাযথ বিনিয়োগ নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে বৈর্শি্বক প্রতিযোগিতায় আমাদের সাফল্যের সক্ষমতা সংকুচিত হয়ে পড়বে। শিক্ষাকে প্রতিটি মানুষের অধিকার হিসেবে নিশ্চিত করতে পারলেই কেবল একটি আধুনিক ও গণতান্ত্রিক কল্যাণরাষ্ট্র হিসেবে আমাদের বিকাশ ত্বরান্বিত হবে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় শহর-গ্রাম, সরকারি-বেসরকারি এমপিওভুক্ত, এমপিওবিহীন শিক্ষকসহ সকল ধরণের বৈষম্য দূরকরে সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের মাধ্যমেই শিক্ষকদের আর্থসামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান অসমতা নিরসন করা সম্ভব।

চাঁদপুরে শিক্ষকদের দাবি আদায়ের আন্দোলনকে সংক্ষিপ্ত বিচার-বিচেনায় দেখা গেছে, চাঁদপুরের সব শিক্ষকগণ একসময় এক ও অভিন্ন ছিলো। বর্তমানে কোনো কোনো শিক্ষক নেতাদের পদের মোহে ১৯৯৭ সাল থেকেই দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে আলাদা আলাদা সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত হয়। চাঁদপুরের ডিএন হাইস্কুল ছিলো শিক্ষক আন্দোলনের সূতিকাগার।

১৯৭১ সালের পর পর চাঁদপুরে বেসরকারি শিক্ষকদের সর্বপ্রকার দাবি আদায়ে চাঁদপুরে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষক মধ্যে অনেকেই বেঁচে নেই। যাঁরা বেঁচে আছেন তাঁদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু শিক্ষকসমাজ কামনা করছে।

তাঁরা হলেন : প্রধান শিক্ষক মোঃ সাখাওয়াত হোসেন, অধ্যক্ষ সাফায়াৎ আহমেদ ভূঁইয়া, অধ্যক্ষ ড. আলমগীর কবির পাটওয়ারী, মতলবের অধ্যক্ষ মোঃ রুহুল আমিন, সদরের অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ, মতলবের প্রধান শিক্ষক শহীদুল্লা প্রধান, প্রফেসর মোশারফ হোসেন, সদরের প্রফেসর সফিউল আযম, হাজীগঞ্জের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান আলী, ফরিদগঞ্জের প্রধান শিক্ষক মরহুম সিরাজুল ইসলাম, সদরের প্রধান শিক্ষক মরহুম আলতাফ হোসেন, প্রধান শিক্ষক মরহুম আলী মোহাম্মদ, প্রধান শিক্ষক মরহুম আবুল কাশেম, প্রধান শিক্ষক নূর হোসেন, প্রধান শিক্ষক মরহুমা মোমেনা খাতুন, প্রধান শিক্ষক মরহুম আবদুল মান্নান মিয়াজী, মরহুম তাজুল ইসলাম, হাইমচরের প্রধান শিক্ষক আবদুল মতিন, সদরের জীবনকানাই চক্রবর্তী, প্রয়াত অরুণ মজুমদার, শাহরাস্তির প্রধান শিক্ষক ছিদ্দিকুর রহমান, প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ, সদরের প্রধান শিক্ষক সূর্যকুমার কুমার নাথ, প্রধান শিক্ষক পংকজ বিহারী, প্রধান শিক্ষক ছায়া পোদ্দার, প্রফেসর হারুন অর রশিদ।

মাধ্যমিক পর্যায়ে সদরের কানিজ বতুল চৌধুরী, জয়নাল আবদীন, মতলবের বিলাল হোসেন ও হারুন অর রশিদ, হাজীগঞ্জের মুজিবুর রহমান, ফরিদগঞ্জের মরহুম মাওঃ সালাউদ্দিন প্রমুখ শিক্ষক নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে চাঁদপুর জেলার বেসরকারি স্কুল ও কলেজ শিক্ষক-কর্মচারীদের শতভাগ বেতন ভাতা, উৎসব, মেডিকেল ও বাড়িভাড়া ভাতা ও ইনক্রিমেন্ট, জাতীয় স্কেলভুক্ত প্রভৃতি দাবি আদায়ে আন্দোলন করেছেন।

২০১০ সাল থেকে নতুনভাবে যুক্ত হন সদরের অধ্যক্ষ মেজবাউদ্দিন, মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠনের সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন ও আলী আক্কাছ, বাবুল হোসেন, মুজিবুর রহমান, মজলিস আহমেদ প্রমুখ শিক্ষকনেতৃবৃন্দ। বিশ্ব শিক্ষক দিবসে তাঁদের অবদানের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।

লেখক : সহ-সভাপতি, মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক সমিতি, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত